প্রতীকী ছবি।
কলা, স্ট্রবেরি, আঙুরের মতো ফল পাকলেই পচতে থাকে। ফলন ভাল হলেও কৃষকদের তখন দুশ্চিন্তার শেষ নেই। টোম্যাটোর মতো আনাজের ক্ষেত্রেও একই কথা বলা চলে। পেকে উঠলেই অতি সস্তায় সব ফসল বিক্রি করে দেন কৃষকরা। কারণ জমিতে আর দু’-এক দিন থেকে গেলেই উপার্জনের বদলে শ্রমিক লাগিয়ে উৎপাদিত সামগ্রী ফেলার ব্যবস্থা করতে হয়!
আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সঞ্জীবকুমার পাল জানিয়েছেন, উপযুক্ত ব্যবস্থা নিলে স্বাভাবিক সময়ের চার গুণ বেশি দিন এগুলিকে ভাল রাখা যায়। নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের পর তাঁর গবেষণাকে স্বীকৃতি দিয়েছেন ভারত সরকারের পেটেন্ট কর্তৃপক্ষও।
কী সেই ব্যবস্থা? হায়দরাবাদের ‘কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ’-এ কর্মরত বিজ্ঞানী সঞ্জীবকুমার জানান, কাইটোসেন জাতীয় শর্করা, তামা ও মেন্থল মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করা যেতে পারে। অতি পচনশীল ফল-আনাজের উপরে তার আবরণ দিলে, চার গুণ বেশি সময় তা ভাল রাখা যায়। গবেষণায় সঞ্জীব দেখিয়েছেন, এক সপ্তাহও রাখা যায় না, এমন টোম্যাটোর উপরে কাইটোসেন, তামার ন্যানো-পার্টিক্ল এবং মেন্থলের মিশ্রণ লাগিয়ে চার সপ্তাহ ভাল রাখা গিয়েছে। তাঁর কথায়, “মিশ্রণ তৈরিতেও কোনও দুর্লভ সামগ্রীর প্রয়োজন পড়ে না। মেন্থল, তামার ন্যানো পার্টিকল সহজেই মেলে। আর কাইটোসেন রয়েছে ছত্রাক, মাশরুম, সামুদ্রিক কাঁকড়া বা চিংড়ির খোলে।
বড় শিল্পপতিরাও এখন কৃষিজ সামগ্রীর ব্যবসা করছেন। প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিগুলি একরের পর একর এলাকার ফসল কিনে হিমঘরে রাখছে। দাম অপরিবর্তিত রাখতে পরিমাণ মতো সামগ্রী বাজারে পাঠাচ্ছে। কিন্তু অতি পচনশীল ফল, আনাজ এড়িয়ে যাচ্ছে তারাও। এই ধরনের ফল-আনাজ বেশি দিন সংরক্ষণের লক্ষ্যে আগেও কম গবেষণা হয়নি। সঞ্জীব বলেন, “আপেলের গায়ে মোমের প্রলেপের মত কিছু ব্যবস্থা করাই যেতে পারে। কিন্তু তা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। আবার অন্যান্য শর্করার আবরণে প্রত্যাশিত ফল মেলে না। সাত দিনে পচে যাওয়ার জায়গায় বড় জোর ১০-১২ দিন টিকতে পারে। বিষয়টি ভাবিয়ে তোলে ধুবড়ির যুবক সঞ্জীবকুমারকে। তেজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এগ্রিকালচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময়েই এ নিয়ে চর্চা শুরু হয় তাঁর। আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি-র জন্য নাম লিখিয়ে একেই গবেষণার বিষয় করেন তিনি।
২০১৮ সালে আসাম বিশ্ববিদ্যালয় তাঁর গবেষণাকে স্বীকৃতি দিয়ে তাঁকে পিএইচডি প্রদান করেছে। এই গবেষণায় তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন সুদীপ্ত সরকার। সহ-তত্ত্বাবধায়ক এলএন শেঠি এবং এস কে ঘোষ। গত সপ্তাহে ২০ বছরের পেটেন্ট পেয়ে সঞ্জীব জানান, এখন বড় কোনও সংস্থা এই পদ্ধতিকে কাজে লাগাতে চাইলে তিনি তত্ত্বাবধায়ক তিন জনকে নিয়ে ফের কাজে লেগে যেতে প্রস্তুত রয়েছেন।