ছবি সংগৃহীত।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ গুজরাতে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘‘গ্রামীণ ভারত নিজেদের প্রকাশ্য শৌচ-মুক্ত বলে ঘোষণা করে দিয়েছে।’’ আর তাঁর উদ্দেশে প্রশ্নটা ছুড়ে দেওয়া হল এ দিনই।
দেশ চাঁদে পৌঁছে যাচ্ছে। কিন্তু দেশের ১ লক্ষ ৬০ হাজার মানুষ এখনও খালি হাতে মল সাফ করছেন, মাথায় করে অন্যত্র ফেলে আসেন। এই তথ্য তুলে ধরে ‘সাফাই কর্মচারী আন্দোলন’-এর জাতীয় আহ্বায়ক বেজওয়াড়া উইলসন আজ বললেন ‘‘প্রধানমন্ত্রী মোদীকে আমার প্রশ্ন, হাতে করে মল সাফ করা বন্ধ করার জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তির খোঁজে তিনি কেন বিজ্ঞানীদের কমিটি তৈরি করছেন না?’’
মোদী ঘোষণাটি করেছিলেন ২০১৪ সালে। ২০১৯-এ গাঁধীর দেড়শো-তম জন্মবার্ষিকীর মধ্যে গ্রামীণ ভারতকে প্রকাশ্য শৌচ থেকে মুক্ত করবেন। আজ তিনি বললেন, ‘‘মাত্র ৬০ মাসে ৬০ কোটি মানুষের জন্য ১০ কোটির বেশি শৌচালয় তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। মা-বোনেরা অসহ্য যন্ত্রণা, অন্ধকারের জন্য অপেক্ষা থেকে মুক্তি পেয়েছেন।’’ প্রধানমন্ত্রী এ-ও বলেছেন, ‘‘শৌচালয় ব্যবহারের অভ্যাস যাতে চালু থাকে, তার জন্য কাজ করে যেতে হবে। যারা এই অভ্যাসের বাইরে তাদেরও জুড়তে হবে।’’
কিন্তু বেজওয়াড়া মনে করিয়ে দিয়েছেন, স্বচ্ছ ভারত অভিযান-এ ১০ কোটির বেশি শৌচালয় তৈরির ফলে ‘ম্যানুয়াল স্ক্যাভেঞ্জিং’ বা খালি হাতে মল সাফ করার ব্যবস্থা আরও ফুলেফেঁপে উঠবে। আগামী চার থেকে পাঁচ বছর পরে ওই সব শৌচালয়ের আবর্জনাও হাতে করে সাফ করার জন্য মেথরদের ডাক পড়বে। আইন করে খালি হাতে মল সংগ্রহ নিষিদ্ধ হয়েছে ১৯৯৩ সালেই। কিন্তু বহু রাজ্যেই তা চলছে। কেন্দ্রীয় সরকারের সমাজ কল্যাণ মন্ত্রকের হিসেবে, গত তিন বছরে সেপটিক ট্যাঙ্ক ও নালা সাফ করতে গিয়ে ৮৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বর্জ্য-কথা
খালি হাতে মল সাফাইয়ে কত জন
• সমাজকল্যাণ মন্ত্রকের হিসেব ১৪,৫১০ জন
• নীতি আয়োগের সমীক্ষা ৩৯,৬২৫
• ‘সাফাই কর্মচারী আন্দোলন’ বলছে ১,৬০,০০০
সেপটিক ট্যাঙ্কে নেমে মৃত্যু কত জনের?
• সমাজকল্যাণ মন্ত্রকের হিসেব, ৩ বছরে ৮৮ জন
শৌচালয় বেড়েছে কত?
• গ্রামীণ এলাকায় ১০ কোটি ৭ লক্ষ
• শহরে হয়েছে ৬২ লক্ষ ৯০ হাজার
‘সাফাই কর্মচারী আন্দোলন’-এর বক্তব্য, ২০১১-র সমীক্ষায় বলা হয়েছিল, দেশে ২৬ লক্ষ শৌচালয়ে জলের কোনও ব্যবস্থা নেই। এর পর স্বচ্ছ ভারত অভিযানে গ্রামীণ এলাকায় ১০ কোটি ৭ লক্ষ শৌচালয় তৈরি হয়েছে (পশ্চিমবঙ্গে ৬২ লক্ষ ২৭ হাজার ৭৩৬টি)। শহরে তৈরি হয়েছে আরও ৬২ লক্ষ ৯০ হাজার। এর অর্ধেক শৌচালয়ে মল জমার জন্য জোড়া গর্ত তৈরি হয়নি। যা থাকলে মল নিজে থেকেই সারে পরিণত হয়। বেজওয়াড়ার প্রশ্ন, ‘‘এত সেপটিক ট্যাঙ্ক সাফ করবেন কারা?’’
কংগ্রেসও আজ প্রশ্ন তুলেছে, ২০১৮-র এনএসএসও রিপোর্টই বলছে, গ্রামের ৩৩ শতাংশ মানুষ কোনও রকম শৌচালয় ব্যবহার করেন না। শহরের ৭ শতাংশ শৌচালয়ে কোনও জলের ব্যবস্থা নেই। তা হলে শুধু শৌচালয় তৈরি করে কী হবে?
সমস্যা যে রয়েছে তা সরকারও বুঝতে পারছে। গ্রামে স্বচ্ছ ভারত অভিযানের দায়িত্বপ্রাপ্ত পানীয় জল ও নিকাশি মন্ত্রকের বক্তব্য, গ্রামীণ ভারতকে প্রকাশ্য শৌচ-মুক্ত ঘোষণা করার পরে এ বার জৈব বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দিকে নজর দেওয়া হবে। তার জন্য ‘স্ট্র্যাটেজি রিপোর্ট’-ও তৈরি হয়ে গিয়েছে।