লখনউ থেকে দিল্লি সরল উন্নাও-মামলা। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
উন্নাও গণধর্ষণকাণ্ডে সুপ্রিম কোর্টে মুখ পুড়ল যোগী সরকারের। একইসঙ্গে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিযেও শীর্ষ আদালতের তীব্র ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হল উত্তরপ্রদেশ সরকারকে। বৃহস্পতিবার, উন্নাও কাণ্ডের মোট পাঁচটি মামলাই উত্তরপ্রদেশ থেকে দিল্লিতে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সেই সঙ্গে আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে মূল মামলার তদন্ত এবং সাত দিনের মধ্যে দুর্ঘটনার তদন্ত শেষ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছে প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ। শুক্রবারের মধ্যে নির্যাতিতাকে ২৫ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য দেওয়ার জন্যও যোগী আদিত্যনাথ সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। সেই সঙ্গে, ওই নাবালিকা, তার পরিবার ও আইনজীবীর নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে সিআরপিএফ জওয়ানদের নিযুক্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিধায়ক কুলদীপ সেঙ্গারকে নিয়ে চাপ বাড়তে দেখে, গণধর্ষণের অভিযোগের প্রায় দু’বছর পর এ দিন তাকে বহিষ্কারের ঘোষণা করেছে বিজেপি।
উন্নাও মামলার গতিপ্রকৃতি জানতে বৃহস্পতিবার, সিবিআই আধিকারিকদের তলব করে প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ। তখন কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বিষয়টি শুক্রবার খতিয়ে দেখার জন্য অনুরোধ করেন। যে সব সিবিআই আধিকারিক উন্নাও-কাণ্ডের তদন্ত করছেন তাঁরা দিল্লির বাইরে বলে যুক্তিও তুলে ধরেন সলিসিটর জেনারেল। কিন্তু, সেই অনুরোধ খারিজ করে দেন প্রধান বিচারপতি। সুপ্রিম কোর্ট বলে, ‘‘সিবিআই প্রধান ফোনেই ওই মামলার যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন এবং আজই তা আদালতকে জানাবেন।’’ এ দিন সুপ্রিম কোর্টে এ সব নিয়েই ম্যারাথন শুনানি চলে।
রায়বরেলীর জেলে বন্দি রয়েছেন নির্যাতিতার কাকা। তাঁকে সেখান থেকে তিহাড় জেলে সরানো যাবে কি না তা নিয়ে যোগী আদিত্যনাথ সরকারের মত জানতে চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। শুক্রবারও এ নিয়ে শুনানি হবে সুপ্রিম কোর্টে। ওই ঘটনার সাক্ষীদের নিরাপত্তার বিষয়টি ওই দিন খতিয়ে দেখা হবে।
আরও পড়ুন: সিসিডি কর্তার ‘আত্মহত্যা’য় উঠছে ‘আয়কর সন্ত্রাস’-এর অভিযোগ
শীর্ষ আদালতের এই নির্দেশকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রিয়ঙ্কা বঢরা। এ দিন টুইটে তিনি লেখেন, ‘উত্তরপ্রদেশে যে জঙ্গলরাজ চলছে তা সুপ্রিম কোর্টের নজরে এসেছে, তাতে আমরা কৃতজ্ঞ। সেইসঙ্গে বিজেপিও শেষ পর্যন্ত স্বীকার করে নিয়েছে তারা একটি অপরাধীর হাত শক্ত করছিল। এখন তারা সেটা সংশোধনের চেষ্টা করছে যাতে নির্যাতিতা বিচার পায়।’
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে স্বাগত জানিয়ে যোগী আদিত্যনাথ সরকারের উদ্দেশে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন দিল্লি মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন স্বাতী মালিওয়াল। এ দিন টুইটারে তিনি বলেন, ‘উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের লজ্জা হওয়া উচিত। ফাঁসির দড়ি থেকে কুলদীপ সেঙ্গার আর বেশি দূরে নেই।’ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের এই রায় নজিরবিহীন। এতে বিচারব্যবস্থার উপর সাধারণ মানুষের আস্থা আরও বাড়বে। আর যারা একে ব্যঙ্গ করে তাদের কাছে এটা একটা শিক্ষা।’’
আরও পড়ুন: মায়ের পাশ থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ তিন বছরের শিশুকে, কাটা হল মাথা, ধৃত ৩
গত ২৮ জুলাই রায়বরেলীতে গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ওই নির্যাতিতা। দুর্ঘটনায় তার দুই আত্মীয়ের মৃত্যুও হয়। এই মুহূর্তে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা কষছেন ওই নির্যাতিতা। গুরুতর জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি তাঁর আইনজীবীও। অথচ, প্রাণের আশঙ্কা করে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে গত ১২ জুলাই চিঠি পাঠিয়েছিলেন উন্নাওয়ের নির্যাতিতার আত্মীয়রা। ওই চিঠির প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছিল ইলাহাবাদ হাইকোর্ট এবং উত্তরপ্রদেশ সরকারকেও। তাতে অভিযোগ করা হয়, অভিযুক্ত বিধায়কের অনুগামীরা নিয়মিত তাঁদের প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে মামলাটি উত্তরপ্রদেশের বাইরে স্থানান্তর করা হোক। সেই চিঠি কেন প্রধান বিচারপতির হাতে পৌঁছয়নি তা সুপ্রিম কোর্টের সেক্রেটারি জেনারেলের কাছে জানতে চেয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ