প্রতীকী ছবি।
হিন্দুরা দেশের ন’টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে সংখ্যালঘু হলেও সে বাবদ কোনও সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে না— এই যুক্তি দিয়ে বিজেপি নেতা তথা আইনজীবী অশ্বিনী উপাধ্যায় সুপ্রিম কোর্টে দাবি করেছিলেন, সংখ্যালঘুর সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হোক। সুপ্রিম কোর্ট আজ তাঁকে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির হাইকোর্টে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। অশ্বিনী জানিয়েছেন, আগামী দু’দিনে তিনি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হবেন। যে সব রাজ্যে হিন্দুরা সংখ্যালঘু বলে তাঁর দাবি, সেখানকার হিন্দুদেরও হাইকোর্টে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এই বিজেপি নেতা।
সুপ্রিম কোর্ট এর আগে অবস্থান নিয়েছিল, কারা ধর্মীয় সংখ্যালঘু তা জাতীয় স্তরে আদমশুমারির ভিত্তিতে ঠিক হয়। রাজ্য ভিত্তিক সংখ্যালঘু নির্ধারণ করা হয় না। কিন্তু এ বার সুপ্রিম কোর্ট নিজে মামলা শুনতে না চেয়ে হাইকোর্টে বল ঠেলে দেওয়ায় রাজনীতিবিদরা অঙ্ক কষা শুরু করেছেন। তাঁদের মতে, পঞ্জাব থেকে জম্মু-কাশ্মীর, লক্ষদ্বীপ থেকে নাগাল্যান্ডের মতো রাজ্যের হাইকোর্টে হিন্দুদের জন্য সংখ্যালঘুর মর্যাদা চেয়ে মামলা জমা পড়তে শুরু করলে সেখানে ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি শুরু হবে। উপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই ন’টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত এলাকায় আমার বন্ধুরা মামলা করলে আমি গিয়ে সওয়াল করব।’’ বিজেপি-বিরোধী শিবিরের নেতাদের মতে, আদালতে যা হওয়ার হবে, কিন্তু মামলা ঘিরে ধর্মীয় মেরুকরণের আশঙ্কা থাকছে।
বিভিন্ন রাজ্যে হিন্দুদের জন্য সংখ্যালঘুর তকমা চেয়ে এর আগেও উপাধ্যায় সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেছিলেন। সুপ্রিম কোর্ট সে সময় জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশনের কাছে জানতে চেয়েছিল, রাজ্য ভিত্তিক সংখ্যালধু নির্ধারণ করা যায় কি না। কমিশন জানায়, তাদের এই ক্ষমতা নেই। কারা ধর্মীয় সংখ্যালঘু, কারা নয়, তা কেন্দ্রীয় সরকার ঠিক করে। প্রধান বিচারপতি শরদ অরবিন্দ বোবডের বেঞ্চ ডিসেম্বরে ওই মামলা খারিজ করে রায় দেয়, রাজ্য তৈরি হয়েছে ভাষার ভিত্তিতে, ধর্মের ভিত্তিতে নয়। ফলে সর্বভারতীয় স্তরে জনসংখ্যার ভিত্তিতেই ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্ধারণ করা সম্ভব।
উপাধ্যায় জানান, সংবিধানে সংখ্যালঘুর সংজ্ঞা ঠিক করা নেই। কোনও আইনেও তা বলা নেই। অথচ ১৯৯২-তে জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন আইন এনে কমিশন তৈরি হয়েছে। তার একটি ধারায় মুসলিম, শিখ, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, পার্সিদের সংখ্যালঘু বলে দেওয়া হয়েছে।
এর পর কেন্দ্রে ও বিভিন্ন রাজ্যে সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রকও তৈরি হয়েছে। অথচ একাধিক রাজ্যে হিন্দুরা সংখ্যালঘু হয়েও কোনও সুবিধা পাচ্ছে না বলে তাঁর দাবি। বিজেপি নেতার যুক্তি, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের ১১ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ ২০০২-এ বলেছিল, সংখ্যালঘু কারা তা রাজ্য স্তরে নির্ধারণ করতে হবে। কিন্তু সেই রায় কার্যকর করা হয়নি।’’ তবে বিচারপতি রোহিংটন নরিম্যানের বেঞ্চ আজ এই মামলা শুনতে রাজি হয়নি। উপাধ্যায়কে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে বলা হয়।