রবিবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি বরখাস্ত আপ মন্ত্রী কপিল মিশ্র।
আম আদমি পার্টির কোন্দল আরও বাড়ল। প্রকাশ্যে বিদ্রোহ ঘোষণা করলেন তো বটেই, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালের বিরুদ্ধে কালো টাকা হাত পেতে নেওয়ারও অভিযোগ আনলেন আপের বরখাস্ত হওয়া জলমন্ত্রী কপিল মিশ্র। আপ নেতাদের কেলেঙ্কারি ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন শনিবারই। ২৪ ঘণ্টা পেরোতে না পেরোতেই কেজরীবাল ও তাঁর এক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে বড়সড় অভিযোগ আনলেন তিনি। রাজঘাটে সংবাদমাধ্যমের সামনে কপিল বলেন, “গত পরশু অরবিন্দ কেজরীবালকে নগদে দু’কোটি টাকা দেন স্বাস্থ্য ও পূর্তমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈন। আমার চোখের সামনে।”
কপিলের দাবি, বিশাল অঙ্কের ওই টাকা দেওয়ার পর তিনি প্রশ্ন করেছিলেন কেজরীবালকে, ‘এটা কী হচ্ছে? কীসের জন্য এই টাকা’? কিন্তু কেজরীবাল নাকি উত্তর দিতে অস্বীকার করেন। রাজনীতিতে এমন জিনিস হয়েই থাকে, এ বিষয়ে পরেও আলোচনা করা যাবে বলে কেজরীবাল তাঁকে জানান বলে দাবি কপিলের। এই ঘটনা দেখার পর তিনি সারা রাত ঘুমোতে পারেননি বলেও তাঁর দাবি।
আরও পড়ুন: লাভ হচ্ছে না একেবারেই, রাজ্য ছাড়ছে দোতলা ট্রেন
টাকা দেওয়া-নেওয়ার বিষয়টি তিনি দিল্লির দুর্নীতি দমন শাখায় জানান। এবং তিনি যে দুর্নীতি দমন শাখায় জানিয়েছেন, সে কথা অরবিন্দ কেজরীবালও জানিয়েছিলেন বলেদাবি করেছেন কপিল। পাশাপাশি, কেন তাঁকে দল থেকে বরখাস্ত করা হল, সে প্রশ্নও তুলেছেন বিদ্রোহী আপ নেতা।
কপিলের কথায়, “নিজের চোখে এমন ঘটনা দেখার পর কি চুপ করে থাকা যায়! অন্তত আমি পারব না।” এর ফলে যদি রাজনৈতিক পদমর্যাদা খোয়াতে হয়, তাতেও থোরাই কেয়ার করেন বলে জানিয়েছেন তিনি। তাঁর দাবি, দিল্লিতে তিনিই একমাত্র মন্ত্রী যাঁর বিরুদ্ধে কেলেঙ্কারির কোনও অভিযোগ নেই। নাম করে দিল্লির পূর্তমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈনের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন তিনি। বলেন, “ওঁর বিরুদ্ধে তো কালোটাকা ও তছরুপের তদন্ত চালাচ্ছে সিবিআই। যে দিন সত্যেন্দ্র জেলে যাবেন, সে দিন প্রমাণ হবে আমি সত্যি বলেছিলাম কিনা। আর কয়েকটা দিন শুধু অপেক্ষা করুন।”
রাজঘাটে বরখাস্ত আপ মন্ত্রী কপিল মিশ্র।
তবে কপিলের এই অভিযোগকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন দিল্লির উপ-মুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়া। কেন মিশ্রকে বরখাস্ত করা হল এই প্রসঙ্গে সিসৌদিয়া জানান, জল সরবরাহ ও বিলিংয়ে গড়বড় ধরা পড়ার ফলেই মিশ্রকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
শনিবারেই কপিল মিশ্রকে পর্যটন ও জলমন্ত্রকের পদ থেকে বরখাস্ত করেন অরবিন্দ কেজরীবাল। সরিয়ে দেওয়া হয় জলবোর্ডের সভাপতির পদ থেকেও। দিল্লির পুরভোটে দলের ল্যাজেগোবরে অবস্থা হওয়ার পর, কুমার বিশ্বাসের পক্ষ নিয়ে দলের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন মিশ্র। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে তুমুল তরজায় জড়িয়ে পড়েন তখন থেকেই।
কেজরীবালের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পরই ময়দানে নেমে পড়েছে কংগ্রেস-বিজেপি। তারা একযোগে কেজরীবালের পদত্যাগের দাবি করেছে। দিল্লি বিজেপির সভাপতি মনোজ তিওয়ারি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর পদে থাকার কোনও অধিকার নেই কেজরীর। এথনই তাঁর পদত্যাগ করা উচিত।” অন্য দিকে কংগ্রেস নেতা অজয় মাকেন বলেন, “কেজরীবালের বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা নিক কেন্দ্র, দুর্নীতি দমন শাখা এবং সিবিআই।”
ছবি: পিটিআই।