ফাইল চিত্র।
দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈনের বিরুদ্ধে আর্থিক নয়ছয়ের মামলায় জড়িয়ে গেল কলকাতার নাম। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-র অভিযোগ, সত্যেন্দ্রর আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন বিপুল টাকা হাওয়ালার মাধ্যমে কলকাতার একাধিক ভুয়ো সংস্থার খাতায় পাঠানো হয়েছিল। সত্যেন্দ্রই সেই সংস্থাগুলির নেপথ্য নিয়ন্ত্রক। ভুয়ো সংস্থার খাতায় দেখানো ওই টাকা আদতে দিল্লিতে জমি কেনার কাজে ব্যবহার করা হয়েছিল। আম আদমি পার্টি (আপ)-এর প্রধান তথা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়ালের দাবি, গোটা মামলাটিই ভুয়ো এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
সত্যেন্দ্রকে গত কালগ্রেফতারের পরে আজ ৯ জুন পর্যন্ত ইডি হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। এ দিন আদালতে ইডি-র হয়ে সওয়াল করেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। তিনি বলেন, ২০১৫ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন প্রায় ১.৬৭ কোটি টাকার সম্পত্তি করেছিলেন সত্যেন্দ্র। তদন্তে উঠে এসেছে, সেই দুর্নীতির টাকা তিনি কলকাতার ভুয়ো সংস্থার খাতায় পাঠিয়েছিলেন। কলকাতারই দুই ব্যক্তি ওই কাগুজে সংস্থাগুলি তৈরি করেছিলেন। একশো টাকায় ১৫-২০ পয়সা কমিশনের ভিত্তিতে কাজ করার কথা তাঁরা স্বীকারও করেছেন। ইডি-র দাবি, আসলে সত্যেন্দ্রই ওই সংস্থাগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতেন।
সূত্রের খবর, রাজনীতিতে আসার আগে সত্যেন্দ্র প্রথমে কেন্দ্রীয় পূর্ত দফতরে চাকরি করতেন। পরে চাকরি ছেড়ে নির্মাণ সংক্রান্ত একটি পরামর্শদাতা সংস্থা খোলেন। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাজকর্মের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। ইডি ইতিমধ্যেই জৈন পরিবার ও তাঁদের নিয়ন্ত্রণাধীন সংস্থাগুলির ৪.৮১ কোটি টাকার সম্পত্তি সাময়িক ভাবে বাজেয়াপ্ত করেছে। আদালতে ইডি জানায়, এই মামলায় প্রথমে সত্যেন্দ্রকে গ্রেফতার না করেই তদন্ত চালাতে চেয়েছিল তারা। কিন্তু মন্ত্রী উত্তর এড়িয়ে যাচ্ছিলেন। সত্যেন্দ্রর আইনজীবী বলেন, ‘‘২০১৮ সালে এই মামলা দায়ের হয়েছিল। এখন ২০২২। এর মধ্যে অন্তত ছ’বার মন্ত্রীকে ডাকা হয়েছে এবং প্রত্যেক বারই তিনি সহযোগিতা করেছেন। তদন্তকারী সংস্থা শুধু বড় বড় কথা বলছে। মন্ত্রীর সঙ্গে কালো টাকার যোগের প্রমাণ কোথায়?’’
পঞ্জাবের আপ সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিজয় সিংলার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় সপ্তাহখানেক আগেই তাঁকে বরখাস্ত করে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান। সত্যেন্দ্রর ক্ষেত্রে কেজরীওয়ালও কেন একই পথে হাঁটছেন না, বিজেপির মুখপাত্র গৌরব ভাটিয়া আজ সেই প্রশ্ন তুলেছেন। কেজরীওয়ালের বক্তব্য, এই মামলার যদি এক শতাংশও সারবত্তা থাকত, তা হলে তিনি নিজেই সত্যেন্দ্রর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেন। আপ শীর্ষ নেতা বলেন, ‘‘পঞ্জাবের মন্ত্রীর একটি অডিয়ো রেকর্ডিং পাওয়া গিয়েছিল, যার কথা কোনও তদন্তকারী সংস্থা বা বিরোধীরা জানতই না। চাইলে আমরা সেটা ধামাচাপা দিয়ে দিতেই পারতাম। কিন্তু আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি, তাঁকে গ্রেফতার করিয়েছি। বিচার ব্যবস্থায় আমাদের আস্থা আছে। সত্যেন্দ্র জৈন সত্যের পথে হেঁটেই নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করবেন।’’
দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়ার অভিযোগ, হিমাচল প্রদেশের আসন্ন নির্বাচনে হারের ভয় পাচ্ছে বিজেপি। তাই সেই রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত আপ নেতা সত্যেন্দ্র জৈনকে আটকাতে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইডি হেফাজতে থাকাকালীন রোজ জৈন মন্দিরে যেতে চেয়েছিলেন সত্যেন্দ্র। তা মঞ্জুর করা হয়নি। তবে তাঁর আবেদন মেনে জৈন সম্প্রদায়ের খাবার তাঁকে দেওয়া হবে।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।