সারসের সঙ্গে আরিফ মহম্মদ। অমেঠীর ‘জয়-বীরু’। ছবি: সংগৃহীত।
তাকে উদ্ধারকারী ‘বন্ধু’র কাছ থেকে তুলে নিয়ে আসা হয়েছিল। ‘বন্ধু’কে না দেখতে পেয়ে তার পর থেকেই খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দিয়েছিল। ক্রমে সে দুর্বল হয়ে পড়ায়, উপায় না দেখে শেষমেশ তার মান ভাঙাতে ‘বন্ধু’কে ডেকে নিয়ে আসা হল।
এ এক সারস এবং মানুষের কাহিনি। যে কাহিনি শুরু হয়েছিল বছরখানেক আগে। মানব ‘বন্ধু’র নাম আরিফ মহম্মদ। অমেঠীর বাসিন্দা। এক বছর আগে বাড়ির সামনেই সারসটিকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করেছিলেন আরিফ। সারসটির পা ভেঙে গিয়েছিল। সেটিকে সুস্থ করে তোলেন আরিফ। তার পর আবার মাঠেই ছেড়ে দিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু সারসটি আবার আরিফের বাড়িতেই ফিরে আসে। সেই থেকেই ‘বন্ধুত্বের’ সূত্রপাত।
আরিফ যেখানেই যেতেন, তার সঙ্গে সারসটিও উড়তে উড়তে যেত। সেই ঘটনার ভিডিয়োও ভাইরাল হয়েছিল। দু’জনের এমন নিবিড় সম্পর্কের কারণে ওরা অমেঠীর ‘জয়-বীরু’ নামেই পরিচিতি পেয়েছে। কিন্তু ভাইরাল হওয়া ভিডিয়ো বন দফতরের কাছে পৌঁছতেই আরিফের বাড়িতে হাজির হয় তারা। সারসটিকে নিজের কাছে রাখার অভিযোগে আরিফের বিরুদ্ধে প্রাণী সুরক্ষা আইনে মামলাও করা হয়। শুধু তাই-ই নয়, সারসটিকে আরিফের কাছ থেকে নিয়ে যাওয়া হয়। এখানেই দুই ‘বন্ধু’র সম্পর্কে ছেদ পড়ে।
সারসটিকে কাছছাড়া করায় আরিফ মনমরা হয়ে পড়েছিলেন। সারসটির ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে। বন দফতরের কর্মীরা জানান, সারসটিকে আরিফের কাছ থেকে নিয়ে আসার পর খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দেয়। নেটাগরিকরা যখন জানতে পারেন সারসটিকে আরিফের থেকে আলাদা করা হয়েছে, তখন তাঁরা দুই ‘বন্ধু’র পুনর্মিলনের জন্য আবেদন জানান উত্তরপ্রদেশ সরকারের কাছে। তার পরই আরিফকে সারসটির সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়।
এর পর কানপুর চিড়িয়াখানায় হাজির হন আরিফ। একটি বড় খাঁচার মধ্যে ছিল সারসটি। আরিফকে দেখেই তাঁর কাছে ছুটে আসার চেষ্টা করে সারসটি। খাঁচার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ছুটে বেড়াচ্ছিল সেটি। আরিফ নিজে হাতে সারসটিকে খাওয়ান। উদ্ধারকারী ‘বন্ধু’কে দেখার পর সারসের উচ্ছ্বাসের ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে। যা দেখে মনে হবে, সত্যিকারের বন্ধুকে বিচ্ছিন্ন করলেও বন্ধুত্বকে আলাদা করা যায় না।