এক দিকে নিম্ন আদালতে সলমন খান দোষী সাব্যস্ত আর অন্য দিকে গায়ক অভিজিতের বিতর্কিত মন্তব্য। এই দুয়ে মিলে বুধবার দিনভর সকলের মুখে মুখে ফিরেছে একটি ছবির কথা। বলিউডের ভিতরকার বিতর্কে ইন্ধন জুগিয়েছে বলিউডেরই একটি ছবি।
‘জলি এলএলবি’। সে ছবিতেও উঠে এসেছিল কুখ্যাত ‘হিট অ্যান্ড রান’ মামলার প্রসঙ্গ। বিএমডব্লিউ মামলা নামেই পরিচিত সেটি।
এবং সেই ছবিতে শিল্পপতির ছেলের হয়ে সওয়াল করতে গিয়ে আইনজীবী বলেছিলেন, ‘‘ফুটপাথ জ্যায়সে সোনে কে লিয়ে নেহি হোতা হ্যায়...।’’ উত্তরে ক্ষতিগ্রস্তদের আইনজীবী বলে ওঠেন, ‘‘ওয়সে ফুটপাথ গাড়ি চালানে কে লিয়ে ভি নেহি হোতা হ্যায় সাব...।’’
২০১৩ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবির গল্পে ছিল, এক বড়লোকের ছেলে মদ্যপ অবস্থায় মধ্যরাতে বন্ধুদের সঙ্গে গাড়ি নিয়ে রেষারেষি করতে করতে ফুটপাথে উঠে পড়ে। তার গাড়িতে চাপা পড়ে মৃত্যু হয় কয়েক জনের। এর পরে ছবি গড়ায় রাহুলের বিচারকে কেন্দ্র করে। অর্থের জোরে রাহুল প্রথমে বিচারব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে। পরে জগদীশ ত্যাগী ওরফে জলির কাছে হার মানতে হয় সবাইকেই। শাস্তি হয় রাহুলের।
‘জলি এলএলবি’র পরিচালক সুভাষ কপূর এ দিন বলছিলেন, তাঁর ছবি সলমনের দুর্ঘটনাকে মাথায় রেখে তৈরি নয়। বরং ১৯৯৯ সালের ১০ জানুয়ারি দিল্লিতে সঞ্জীব নন্দার বিএমডব্লিউ মামলাই তাঁর উপজীব্য ছিল। মদ্যপ অবস্থায় ফুটপাথে গাড়ি চালিয়ে দিয়ে সঞ্জীব সে দিন কেড়ে নিয়েছিল ছ’টি নিরীহ প্রাণ। সঞ্জীব নন্দাকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল দিল্লির আদালত। পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ড হয় তার। পরে দিল্লি হাইকোর্ট ওই সাজা কমিয়ে দু’বছর করে। শেষমেশ সুপ্রিম কোর্ট ২০১২ সালের অগস্টে সঞ্জীবের শাস্তি আরও কমিয়ে তাকে দু’বছর সামাজিক পরিষেবা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। একই সঙ্গে জরিমানা করে ৫০ লক্ষ টাকা। সুভাষের কথায়, ‘‘তখন আমি সাংবাদিক। সামনে থেকে ওই মামলার প্রতিটা দিন দেখেছিলাম। ওই ঘটনাকে ধরেই ‘জলি এলএলবি’ ছবিটা করি।’’ এ দিন মুম্বইয়ের আদালতে সলমনের রায় ঘোষণার ক্ষেত্রেও সঞ্জীব নন্দা এবং অ্যালিস্টার পেরেইরার মামলার কথা বারবারই উঠেছে।
সুভাষ এটাও মানেন, দু’টি ঘটনা আলাদা হলেও ‘জলি এলএলবি’-র সঙ্গে সলমন মামলার অনেক মিল আছে। যদিও সলমনের মামলাটি নিয়ে আলাদা করে কোনও মন্তব্য করতে চাননি সুভাষ। তাঁর কথায়, ‘‘সলমন খান অবশ্যই বড় অভিনেতা। এই মামলা নিয়ে আমার কিছুই বলার নেই। আদালত যা ভাল বুঝেছে, করেছে।’’ সাবধানী শোনায় সুভাষের গলা। যৌন হয়রানির মামলায় তাঁকেও সম্প্রতি গ্রেফতার হতে হয়েছিল কিনা!
সুভাষ এড়িয়ে গেলেও সলমন দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরে কিন্তু এ দিন বারবারই উঠেছে ‘জলি’ উকিলের প্রসঙ্গ। কলকাতায় যাদবপুর থানার অতিরিক্ত ওসি দেবাশিস দত্ত যেমন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘আইনের লম্বা হাত আর ঈশ্বরের সাজা কখনও দরিদ্র আর ধনীকে আলাদা করে না। ৬ মে ২০১৫— আমাকে আবার জলি এলএলবি দেখতে হবে।’’ ২০১৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর সলমন খানেরই একটি টুইটের কথাও তুলে ধরেছেন দেবাশিসবাবু। তাতে সলমন বলেছিলেন, ‘‘একটি নিরীহ প্রাণকে রক্ষা করা মানে সমস্ত মানবতাকে রক্ষা করা... একটি নিরীহ প্রাণকে হত্যা করা সমগ্র মানবতাকে হত্যা করারই সামিল।’’