সচিন পাইলট। —ছবি পিটিআই।
কংগ্রেসে থেকে যাওয়ার পথ নিজেই বন্ধ করলেন সচিন পাইলট। তাঁর বিজেপিতে যাওয়ার পথেও বাধা বিস্তর।
চাপ তৈরি করতে সচিন ও তাঁর অনুগামী ১৮ জনের বিধায়ক পদ খারিজ করতে বিধানসভার স্পিকারের কাছে আর্জি জানিয়েছিল কংগ্রেস। স্পিকার তাঁদের নোটিস পাঠান। সেই নোটিসের বিরুদ্ধে আজ সচিনরা রাজস্থান হাইকোর্টে মামলা করলেন। তাঁর আইনজীবী হিসেবে মাঠে নামলেন ‘মোদী-সরকারের ঘনিষ্ঠ’ দুই আইনজীবী হরিশ সালভে ও মুকুল রোহতগি। শুক্রবার দুপুরে মামলার শুনানি হবে।
কিন্তু বিজেপির অন্দরমহলেই যে সচিনের বিজেপিতে প্রবেশ নিয়ে আপত্তি রয়েছে, বৃহস্পতিবার তার স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলেছে। সচিন আসতে চাইলে স্বাগত বলে রাজস্থানের বিজেপি নেতারা পরিমিত মন্তব্য করলেও, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে নীরব ছিলেন। আজ এনডিএ-র সাংসদ হনুমান বেনিওয়াল অভিযোগ তুলেছেন, বসুন্ধরা তাঁর ঘনিষ্ঠ বিজেপি বিধায়কদের সঙ্গে ফোনে কথা বলে অশোক গহলৌতের সরকার যাতে না পড়ে, সেটাই দেখতে বলেছেন। কংগ্রেস বিধায়কদেরও বসুন্ধরা ফোন করছেন বলে তাঁর অভিযোগ। অনেকের মতে, সচিন যাতে গহলৌত সরকার ফেলার কৃতিত্ব নিয়ে তাঁর প্রতিপক্ষ হয়ে উঠতে না পারেন, সেটাই বসুন্ধরার লক্ষ্যে।
বুধবার রাতে গাঁধী পরিবারের বার্তা পেয়ে সচিনকে বোঝানোর চেষ্টা শুরু করেছিলেন আহমেদ পটেল। তাঁকে রাজস্থানের উপমুখ্যমন্ত্রী ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলেও ভবিষ্যতে তাঁকে কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটিতে আনা হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেওয়া হয়। কিন্তু বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিন আদালতে চলে যাওয়ায় কংগ্রেস নেতৃত্বের মত, তিনি ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্ন’-এ পৌঁছে গিয়েছেন। রাতে গহলৌত শিবির একটি অডিয়ো প্রকাশ করে দাবি করেছে, সচিন নিজেই বিজেপির সঙ্গে লেনদেন করছে। অডিয়োয় সচিন অনুগত এক বিধায়ককে কেন্দ্রের এক মন্ত্রী বলছেন, ‘তোমাদের যিনি দিল্লিতে আমাদের কাছে রয়েছেন (সচিন), তার হাতেই সবার টাকা দিয়ে দেওয়া হল। সরকার পড়লে সবাইকে সরাসরি টাকা দেওয়া হবে।’
সূত্রের খবর, বিজেপি সচিনকে শর্ত দিয়েছে, ১৯-২০ জনে হবে না। কংগ্রেস থেকে আরও বিধায়ক ভাঙিয়ে আনতে হবে। রাজস্থানে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সতীশ পুনিয়া অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে সচিনের কোনও যোগাযোগ হয়নি।’’ রোহতগি-সালভেকে নিয়োগ প্রসঙ্গে পুনিয়ার যুক্তি, ‘‘পেশাদার আইনজীবী হিসেবে তাঁরা যে কোনও মামলা লড়তে পারেন।’’
সচিন ও তাঁর অনুগামী বিধায়করা প্রথমে বিধানসভার স্পিকার সি পি জোশীর নোটিসের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন। স্পিকারের আইনজীবীরা যুক্তি দেন, এই মামলা দাঁড়ায় না। কারণ স্পিকার এখনও সিদ্ধান্তই নেননি। সচিনরাই হুইপ সত্ত্বেও পরিষদীয় দলের বৈঠকে যোগ দেননি। কেন তাঁদের বিধায়ক পদ খারিজ হবে না, তার ব্যাখ্যা চেয়ে নোটিস পাঠানো হয়েছে। স্পিকার জানিয়ে দেন, শুক্রবার বিকেল পাঁচটার আগে সিদ্ধান্ত হবে না। কিন্তু সচিনরা পিটিশনে সংশোধন করে সংবিধানের দশম তফসিলের ২(১)(এ) ধারার সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ওই ধারায় কোনও বিধায়ক পদত্যাগ না করে স্বেচ্ছায় সদস্যপদ ছেড়ে দিলেও তাঁর বিধায়ক পদ চলে যেতে পারে। সাংবিধানিক প্রশ্ন তোলায় মামলা ডিভিশন বেঞ্চে চলে যায়।