—ফাইল চিত্র।
আফগানিস্তান জুড়ে তালিবান সন্ত্রাসের মধ্যে সে দেশের বিদেশমন্ত্রী মহম্মদ হানিফ মিরের সঙ্গে তাজিকিস্তানে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। আগামিকাল সে দেশে ‘সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন’ (এসসিও)-র আফগানিস্তান সংক্রান্ত বহুপাক্ষিক বৈঠক। যাতে উপস্থিত থাকবেন চিন, পাকিস্তান-সহ এসসিও গোষ্ঠীর অন্য রাষ্ট্রগুলির বিদেশমন্ত্রীরাও। জয়শঙ্কর আজ টুইট করে বলেছেন, “আফগানিস্তানের বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় সেখানকার সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানলাম। আগামিকাল আফগানিস্তান সংক্রান্ত এসসিও গোষ্ঠীর বৈঠকের দিকে তাকিয়ে রয়েছি।”
তাজিকিস্তানে যখন আফগান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা চলছে, তখন তালিবানের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতির বার্তা দেওয়া হয়েছে বলে খবর। তবে সেই শান্তির বার্তা কতটা টেকসই হবে তার নিশ্চয়তা দেখতে পাচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা। তালিবানের পক্ষ থেকে আজ বলা হয়েছে, যুদ্ধ প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। এখন যে শহরগুলি তালিবানদের দখলের বাইরে রয়েছে— তারা চায় না, সেগুলির ক্ষতি হোক। সেই কারণেই যে আফগান সেনারা আত্মসমর্পণ করেছেন, তাঁদের শহরের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। তালিবান মুখপাত্র আমির খান মুত্তাকি বলেছেন, ‘‘পাহাড়, মরুভূমি পেরিয়ে এখন শহরের কাছে এসে পড়েছে বাহিনী। কিন্তু আমরা শহরের মধ্যে যুদ্ধ করতে চাই না। সেই কারণে আমাদের ডাকে সাড়া দিলে ভাল হয়।’’ পাশাপাশি, প্রচ্ছন্ন হুমকির সুরে বলা হয়েছে, তুরস্ক যদি নতুন করে সেনা পাঠিয়ে আফগানিস্তানের সেনার হাত শক্ত করে, তা হলে ফের সংঘাতের সৃষ্টি হবে। এই আবহেই আগামীকাল কাতারের রাজধানী দোহাতে তালিবানের সঙ্গে আফগান প্রশাসনের একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হতে চলেছে। প্রশাসন-তালিবান মধ্যস্থতাকারী কাউন্সিলের প্রধান আবদুল্লা আবদুল্লা তো থাকছেনই, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইও বৈঠকে যোগ দিতে পারেন।
কূটনৈতিক শিবিরের মতে, আফগানিস্তানের যুদ্ধপরিস্থিতি আপাতত কিছুটা শান্ত হোক বা না হোক, দীর্ঘমেয়াদি ভাবে নিশ্চিন্ত হওয়ার কোনও কারণই নেই ভারতের। গত এক মাসে নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কায় সে দেশে ভারতের পায়ের ছাপ ক্রমশ কমছে— নয়াদিল্লির কাছে যা গভীর উদ্বেগের। হেরাট, কন্দহর ও জালালাবাদের ভারতীয় কনস্যুলেট কার্যত কূটনীতিকহীন। আফগানিস্তান থেকে আমেরিকা পুরোপুরি ভাবে সেনা প্রত্যাহার করার পরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। কনস্যুলেটগুলি কবে আবার খোলা যাবে, তারও কোনও নিশ্চয়তা নেই।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ঠিক এটাই চেয়েছিল পাকিস্তান। সেই ২০০২ সালে থেকে পাক সরকার সক্রিয় ভাবে আফগানিস্তানকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে গিয়েছে যাতে সে দেশে ভারতকে কনস্যুলেট খোলার অনুমতি না দেওয়া হয়। ইসলামাবাদের যুক্তি, ভারত-আফগানিস্তান সম্পর্কের এমন কোনও গুরুত্ব নেই যাতে দেশের সর্বত্র কনস্যুলেট খুলতে হবে। তাতে আফগানিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তানের সমস্যা বাড়বে বলেই বোঝানো হয়েছে কাবুলকে। আর আফগানিস্তান থেকে ভারতের গুটিয়ে যাওয়ার অর্থ, সে দেশের রাজনৈতিক পরিসরে কট্টরপন্থী পাক মদতপ্রাপ্ত তালিবানের প্রভাব বেড়ে যাওয়া। কাশ্মীর এবং ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত আরও বিপদগ্রস্ত হয়ে ওঠা। তাজিকিস্তানে আগামিকালের বৈঠকে এই বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করবেন জয়শঙ্কর। জানাবেন, রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ছাড়া, হিংসার মাধ্যমে ক্ষমতায় এলে তাকে ‘বৈধতা’ দেওয়া ভারতের পক্ষে সম্ভব নয়।
কিন্তু প্রশ্ন হল, রাশিয়া, চিন, পাকিস্তান এবং ইরানকে পাশে পেলে ভারতের আপত্তিতে তালিবানের কতটা সমস্যা হবে? যদিও আফগানিস্তানে বহু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প চালাচ্ছে ভারত, যাতে তালিবানেরও স্বার্থ জড়িত। সরাসরি কাবুলে ভারতীয় দূতাবাস আক্রমণ করাটাও যে কারণে সম্ভব নয় তাদের পক্ষে। কিন্তু এই ভারসাম্যের খেলায় তালিবানের সঙ্গে প্রকাশ্যে দৌত্যস্থাপন করে নয়াদিল্লির উপর তাদের নির্ভরতা বাড়ানো ছাড়া এই মুহূর্তে মোদী সরকারের সামনে বেশি রাস্তা নেই— এমনই মনে করছে কূটনৈতিক শিবির।