ফাইল চিত্র।
চিন, পাকিস্তান এবং ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে এসসিও গোষ্ঠীভুক্ত রাষ্ট্রগুলির বিদেশমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে সন্ত্রাসবাদ এবং ইউক্রেন নিয়ে সরব হতে দেখা গেল বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে। উজ়বেকিস্তান-এর তাসখন্দে গভীর রাত পর্যন্ত চলা এই বৈঠকের পরে জয়শঙ্কর ভারতের দাবিগুলি নিয়ে টুইট করেছেন। একই সঙ্গে আফগানিস্তানে ভারতের ধারাবাহিক মানবিক সাহায্যের কথা তুলে ধরে চাবাহার বন্দরকে দ্রুত চালু করার আবেদনও জানিয়েছেন তিনি।
কৌশলগত ভাবে এই বৈঠক ভারতের কাছে ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিদেশ মন্ত্রকের দাবি, এই মঞ্চের পূর্ণ সুযোগ নিয়ে বর্তমান ভূকৌশলগত উদ্বেগগুলি তুলে ধরেছেন জয়শঙ্কর। ইউক্রেন প্রশ্নে পশ্চিমের সুরে সুর না মিলিয়েও রাশিয়া এবং আমেরিকার মধ্যে ভারসাম্য ধরে রেখেছে ভারত। আজও তাঁর বক্তব্যে সেই ভারসাম্যের সুরই বেজেছে। বিদেশমন্ত্রীর কথায়, “বিশ্ব এখন উদ্বেগজনক অবস্থার মধ্যে রয়েছে খাদ্য সঙ্কট এবং জ্বালানি সঙ্কটের ফলে। এর কারণকোভিডের ফলে সব তছনছ হয়ে যাওয়া এবং ইউক্রেন সংঘাত। এই বিষয়গুলির যত দ্রুত সম্ভব নিষ্পত্তি করা প্রয়োজন।”
জয়শঙ্কর আজ সুষ্ঠু এবং পাকাপোক্ত আন্তর্জাতিক সরবরাহ ব্যবস্থা তৈরি করা এবং বহুপাক্ষিক কূটনীতির উপরে জোর দিয়েছেন।
আফগানিস্তান এবং ইরানের সঙ্গে সহযোগিতায় তৈরি হওয়া চাবাহার বন্দরের কাজ তালিবানের উত্থানের পরে অনিশ্চয়তার মধ্যে। পাকিস্তানকে এড়িয়ে মধ্য এশিয়ায় পৌঁছোনোর জন্য এই বন্দর ভারতের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। আজ জয়শঙ্কর বলেছেন এসসিও-র সামগ্রিক অর্থনৈতিক উত্থানের জন্য চাবাহার বন্দর বড় ভূমিকা নিতে সক্ষম। সমরখন্দে সেপ্টেম্বরে এসসিও গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির রাষ্ট্রনেতাদের বৈঠক হওয়ার কথা। তার প্রস্তুতি নিয়েও তাসখন্দে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক।
উজ়বেকিস্তান-সহ চারটি দেশের বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকও করেছেন জয়শঙ্কর। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই। তাঁর সঙ্গে বিদেশমন্ত্রীর বৈঠক হওয়ার কথাও রয়েছে। তবে কখন এই বৈঠক হবে তা এখনও স্পষ্ট হয়নি। অন্য দিকে ভুটানের ডোকলাম মালভূমিতে চিনা সেনার পরিকাঠামো নির্মাণের চিত্রে ফের বেড়েছে উদ্বেগ। তার মধ্যেই আজ দু’দিনের ভুটান সফরে গেলেন সেনাপ্রধান মনোজ পাণ্ডে। এই সফরে রাজা জিগমে খেসর নামগিয়েল ওয়াংচুক, তাঁর বাবা ও প্রাক্তন রাজা জিগমে সিংগে ওয়াংচুক ও ভুটান সেনার প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
সাম্প্রতিক উপগ্রহ চিত্রে দেখা গিয়েছে, ডোকলাম মালভূমিতে একটি গ্রাম তৈরি করছে চিনা সেনা। এ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়, জাতীয় নিরাপত্তার পক্ষে উদ্বেগজনক সব বিষয় ও চিনা কার্যকলাপের উপরে নজর রাখে দিল্লি। প্রয়োজনে স্বার্থরক্ষায় পদক্ষেপ করা হয়।
সূত্রের খবর, ডোকলাম মালভূমির পরিস্থিতি ও গোটা অঞ্চলে চিনের কার্যকলাপ নিয়ে ভুটানি নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলবেন সেনাপ্রধান পাণ্ডে। ২০১৭ সালে ডোকলামে ভুটানি এলাকায় একটি রাস্তা তৈরির চেষ্টা করে চিন। ফলে ওই এলাকায় ৭৩ দিন মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিল ভারতীয় ও চিনা সেনা। গত বছরের অক্টোবরে সীমান্ত বিবাদ মেটানোর জন্য দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করেছে ভুটান ও চিন। তার পরেও ডোকলামে চিনা কার্যকলাপ দিল্লি ও থিম্পুর উদ্বেগ বাড়িয়েছে।