ফাইল চিত্র।
যুদ্ধ-বিধ্বস্ত শহরের রাস্তা কি বেমালুম শুনশান?
অন্তত গুগল ম্যাপ তাই বলছে। গুগল ম্যাপে ‘লাইভ ট্রাফিক’-এ ক্লিক করলে আশপাশের হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, বেলারুস, রোমানিয়ার রাস্তায় ট্রাফিক কতটা, সেটা ভালই মালুম হচ্ছে। মায় রাশিয়ার রাস্তারও ট্রাফিকের হাল ফুটে উঠছে। সেখানে ফাঁকা রাস্তা সবুজ রঙে, আবার বেশি যানবহুল রাস্তা গেরুয়া বা লাল রঙে রঞ্জিত হয়ে রয়েছে। রাস্তার সেই রং এসে থমকে গিয়েছে ইউক্রেনের সীমান্তে। সারা ইউক্রেন জুড়ে কোথাও সেই রঙের বাহার নেই। যেন মৃত এক নগরী!
সরাসরি উপগ্রহ মারফত বিশ্বের তাবড় শহরের প্রধান রাস্তার এই ছবি ফুটে ওঠে গুগল ম্যাপে। বহু মানুষ অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করেন। বাড়ির বাইরে তাঁরা লোকেশন অন করে রাখেন। অনেকে আবার গুগল ম্যাপ দেখে রাস্তা খুঁজে খুঁজে যান। সেই সব ফোন মারফতই এই ট্রাফিক আপডেট পায় গুগল। সেই আপডেট-এর উপরে নিয়ন্ত্রণ থাকে গুগলেরই। সম্প্রতি গুগল জানিয়েছে, ইউক্রেনের রাস্তার সেই হাল মুছে ফেলা হয়েছে ম্যাপ থেকে। কেন?
গুগলের লোকাল গাইড, এই রাজ্যের বাসিন্দা শৌনক দাস মনে করছেন, যুদ্ধ-বিধ্বস্ত শহরে কোথায় কত যান চলছে, তা ওই ম্যাপ মারফত জেনে যেতে পারে শত্রুপক্ষ। এখন তো রাস্তায় যানবাহন বলতে মূলত সাঁজোয়া গাড়ি আর দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া মানুষদের নিয়ে যাতায়াত করা বাস। ফলে, কোন রাস্তায় সেই সব যানবাহনের ভিড় বেশি, তা সহজেই গুগল ম্যাপ থেকে অনুমান করে ফেলতে পারে শত্রুপক্ষ।
পাশাপাশি প্রতিটি শহরে কোথায় স্কুল, কলেজ, সরকারি দফতর, রেস্তরাঁ, দ্রষ্টব্য স্থান রয়েছে, সে সবও গুগল ম্যাপে এক ক্লিকে জানা সম্ভব। গুগল ওয়েবসাইটে অ্যাডমিনিস্ট্রেটর কনি সম্প্রতি লিখে জানিয়েছেন, উইক্রেনবাসীর নিরাপত্তার কথা ভেবেই গুগল ম্যাপে আপলোড করা ইউক্রেনের ছবি, ভিডিয়ো, রিভিউ, দ্রষ্টব্য স্থান ধীরে ধীরে মুছে ফেলা হবে। শৌনকের কথায়, তা করতে কিছু দিন সময় লাগবে, কারণ কনি জানিয়েছেন, শুধু ইউক্রেন নয়, রাশিয়া এমনকি বেলারুসের ওই সব তথ্যও মুছে ফেলবে গুগল। তাঁর কথায়, “আমাদের মতো ইউক্রেনের লোকাল গাইডদের নির্দেশ পাঠিয়ে বলা হয়েছে, নতুন কোনও আপডেটও আপাতত বন্ধ রাখতে হবে। ইউক্রেনের লাইভ গুগল ম্যাপও বন্ধ করা হচ্ছে। বলা হয়েছে, ইউক্রেনের মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থেই বন্ধ করা হয়েছে লাইভ ট্রাফিক আপডেট। শুধু পড়শি দেশের সমান্তবর্তী এলাকায় মানুষ কোথায় ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন, তার আপডেট দেওয়া হবে।”
২০১৭ সালে আমেরিকার সানফ্রান্সিসকোয় গুগল-এর লোকাল গাইড সামিটে শৌনকের সঙ্গে সামনাসামনি দেখা হয়েছিল নাতালিয়া রায়বা-র। ইউক্রেনের কিভের যুবতী লোকাল গাইড নাতালিয়ার সঙ্গে তার পর থেকে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন শৌনক। বলেন, “পরশুই কথা হয়েছে। বাড়ির চারপাশের এলাকা বোমা-বিধ্বস্ত। শৌচালয়ের বাথটবে বিছানা পেতে সেখানেই দিনরাত থাকছে নাতালিয়া। ও বলছে, প্রচুর মানুষ নাকি মারা গিয়েছেন। কিন্তু সে সব কিছু ফুটে উঠছে না।”