অক্টোবরের পর নভেম্বরেও ভ্লাদিমির পুতিনের দেশ থেকে সব চেয়ে বেশি তেল আমদানি করেছে ভারত। ফাইল ছবি।
এত কাল ধরে যারা ভারতকে তেল সরবরাহ করে গেল, সেই ইরাক ও সৌদি আরবকেও পিছনে ফেলে দিয়েছে রাশিয়া। অক্টোবরের পর নভেম্বরেও ভ্লাদিমির পুতিনের দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি তেল আমদানি করেছে ভারত। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত আমদানিকৃত তেলের মাত্র ০.২ শতাংশ আসত রাশিয়া থেকে। সেই অঙ্কটা বিপুল ভাবে বদলে গিয়েছে নভেম্বরে। এমনই দাবি করা হল সাম্প্রতিক একটি রিপোর্টে।
ভরটেক্সা নামক একটি সংস্থার রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, নভেম্বরে রাশিয়া থেকে দিনে ৯,০৯,৪০৩ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল আমদানি করেছে ভারত। অন্য দিকে, ইরাক থেকে দিনে ৮,৬১,৪৬১ ব্যারেল এবং সৌদি আরব থেকে ৫,৭০,৯২২ ব্যারেল তেল আমদানি করা হয়েছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পরেই পুতিনের দেশকে অর্থনৈতিক ভাবে চাপে ফেলতে তাদের তেলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে পশ্চিমি বিশ্বের দেশগুলি। পাল্টা চাল হিসাবে রাশিয়াও তেলের দাম বিপুল কমিয়ে দেয়। তার পর থেকেই রুশ তেলের উপর বাড়তে থাকে ভারতের নির্ভরতা। গত বছর ডিসেম্বরে রাশিয়া থেকে দিনে মাত্র ৩৬,২৫৫ ব্যারেল তেল আমদানি করত ভারত। অন্য দিকে, ইরাক এবং সৌদি আরব থেকে আসত যথাক্রমে প্রায় ১০ লক্ষ এবং সাড়ে ৯ লক্ষ ব্যারেল। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরেই এই পরিসংখ্যান বদলাতে শুরু করে। এপ্রিলে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বেড়ে দাঁড়ায় দিনে আড়াই লক্ষ ব্যারেলেরও বেশি। জুনে তা প্রায় সাড়ে ৯ লক্ষের কাছাকাছি পৌঁছে যায়।
ইউক্রেনে হামলার পরেও কেন রাশিয়া থেকে তেল কিনছে ভারত, এই প্রশ্নে আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে নয়াদিল্লিকে। আগ্রাসক রাশিয়াকে ভারত সাহায্য করছে, এমন অভিযোগও উঠেছিল। চাপ এখনও যথেষ্ট রয়েছে। জি-৫ গোষ্ঠী রাশিয়া থেকে তেল কেনায় বাধ্যতামূলক নিষেধাজ্ঞা চাপানোর চেষ্টা করছে ভারত-সহ বেশ কিছু দেশের উপরে। এই বিতর্কের আবহেই বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জানিয়েছিলেন, ইউরোপ এক বিকেলে রাশিয়া থেকে যে পরিমাণ তেল কেনে, ভারত তা আমদানি করে এক মাসে। তিনি বার্তা দিতে চেয়েছিলেন, ইউরোপের কোনও অধিকারই নেই এ ব্যাপারে ভারতকে উপদেশ দেওয়ার। কেন্দ্রীয় পেট্রেলিয়াম মন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরীরও বক্তব্য, তেল পাওয়া যাচ্ছে বলেই ভারত কিনছে। প্রশ্নটা নৈতিকতার নয়, চাহিদার। কিন্তু এর পরেও বিতর্ক থামেনি। তার মধ্যেই প্রকাশ্যে এল ভারতের রাশিয়া থেকে তেল আমদানির এই রিপোর্ট।