প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি হচ্ছে ২৪ ফেব্রুয়ারি। আর ঘটনাচক্রে ওই দিনই ভারতের সমুদ্রসীমায় ভারতীয় নৌসেনার নেতৃত্বে এক সঙ্গে নৌ-মহড়া শুরু করতে চলেছে রাশিয়া এবং আমেরিকা।
কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, বিষয়টি নেহাত কাকতালীয় বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। রাশিয়া-ইউক্রেন প্রশ্নে নরেন্দ্র মোদী সরকারের কৌশলগত ভারসাম্যের যে নীতি গত দু’বছর ধরে বিভিন্ন চাপ সত্ত্বেও অক্ষুণ্ণ রয়েছে, এই নৌ মহড়া তারই সার্থক প্রতিফলন। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ওই মহড়ায় আমেরিকার পাশাপাশি, থাকবে ইরানও। লোহিত সাগরের উত্তপ্ত পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে ওয়াশিংটন এবং তেহরান পরস্পর যুযুধান হওয়া সত্ত্বেও তাদের এক ঘাটে আনতে পেরেছে নয়াদিল্লি। কূটনৈতিক শিবিরের দাবি, মোদী সরকার দ্বিতীয় দফার শেষবেলায় নিঃসন্দেহে বিদেশনীতির ক্ষেত্রে একটি অসাধ্যসাধন করল।
বঙ্গোপসাগরে ‘মিলন ২৪’ নামের মহড়াটির দ্বাদশ সংস্করণটি চলবে ২৪ থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ইতিমধ্যেই আমেরিকা নৌসেনা ও জাহাজ পাঠিয়ে দিয়েছে। পাঠিয়েছে ক্ষেপণাস্ত্র মোকাবিলার সরঞ্জামও। রাশিয়া পাঠিয়েছে তিনটি সাঁজোয়া রণতরী, যারা মহড়ায় যোগ দেবে আমেরিকার সঙ্গে সমন্বয় করে। কূটনৈতিক শিবিরের মতে, বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ কারণ মস্কো এবং ওয়াশিংটনের মধ্যে গত দু’বছর ধরে সংঘাত (ইউক্রেনকে ঘিরে) ক্রমবর্ধমান। সাম্প্রতিক অতীতে এই দুই দেশের যুদ্ধজাহাজ পাশাপাশি সমন্বয় করে মহড়ায় অংশ নিচ্ছে, এমনটা দেখা যায়নি। এমনকি, আগের বছর ভারতের নেতৃত্বাধীন এই ‘মিলন মহড়া’র একাদশ সংস্করণে আমেরিকা তার নৌবহর পাঠালেও রাশিয়া মুখ ফিরিয়েই থেকেছে। সাউথ ব্লকের দাবি, এই দুই ‘শত্রুপক্ষ’কে এক জলে ভাসাতে বহু কূটনৈতিক সলতে পাকাতে হয়েছে। দু’টি দেশের সঙ্গেই ভারতের দর কষাকষির আলাদা আলাদা তাস রয়েছে। দু’টি দেশই পৃথক ভাবে ভারতের বাজারের উপর কিছুটা হলেও নির্ভরশীল। দু’দেশেরই অস্ত্র এবং অন্যান্য পণ্য ও পরিষেবার অন্যতম বড় বাজার ভারত।
শুধু রাশিয়া এবং আমেরিকাই যে এই মুহূর্তে বিশ্ব রাজনীতিতে যুযুধান এমনটা নয়। লোহিত সাগরের বাণিজ্য পোতগুলিতে হুথি জঙ্গি হামলার জন্য ইরানের দিকেই তর্জনী তুলছে জো বাইডেন প্রশাসন। এ হেন যুযুধান আমেরিকা এবং ইরানকেও ‘মিলন ২৪’-এ পাশাপাশি দেখা যাবে। মোট ৫১টি রাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল যোগ দেবে এই মহড়ায়। থাকবে ১৫টি দেশের যুদ্ধজাহাজ। আমন্ত্রিত দেশগুলির মধ্যে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, তাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, মরিশাস, মালয়েশিয়া, জাপান, ফ্রান্স, বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়া। এক কথায়, চিন-বিরোধী ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অক্ষকে এই জলভাগে নিয়ে আসা হয়েছে, যার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে ইরান এবং রাশিয়ার মতো দেশগুলিকেও। যাদের সঙ্গে চিনের সদ্ভাব রয়েছে। আয়োজক দেশ ভারতের আইএনএস বিক্রান্ত, আইএনএস বিক্রমাদিত্য-সহ মোট ২০টি যুদ্ধজাহাজ এই মহড়ায় যোগ দেবে। এই নৌমহড়ায় আকাশপথ থেকে অংশ নেবে ভারতের অন্তত ৫০টি যুদ্ধবিমান।