দিগ্বিজয় সিংহ। —ফাইল চিত্র।
রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের দ্বিতীয় সঙ্ঘপ্রধান মাধব সদাশিবরাও গোলওয়ালকরের নানা বক্তব্য এবং মতামত নিয়ে মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দিগ্বিজয় সিংহ মন্তব্য করার পরে আসরে নামল সঙ্ঘ। সংগঠনের নেতারা দাবি করলেন, সবই বাজে কথা। এমনকি গোলওয়ালকরের মন্তব্য-সহ যে ছবি দিগ্বিজয় সিংহ টুইটারে শেয়ার করেছেন, তা-ও ভুয়ো বলে দাবি করল সঙ্ঘ।
শনিবার দিগ্বিজয় নিজের টুইটার হ্যান্ডলে গোলওয়ালকরের ‘উই অ্যান্ড আওয়ার নেশনহুড আইডেন্টিফায়েড’ বই থেকে নেওয়া দু’টি মন্তব্য এবং সঙ্ঘনেতার ছবি পোস্ট করেন। সেখানে গোলওয়ালকরের মন্তব্য বলে দাবি করে লেখা আছে, ‘‘যখনই ক্ষমতা হাতে আসবে, তখনই সরকারের ধনসম্পত্তি, রাজ্যের জমি ও জঙ্গল নিজেদের বিশ্বাসভাজন দু’-তিন জন ধনী লোককে সঁপে দাও। ৯৫ শতাংশ জনতাকে ভিখারি বানিয়ে দাও, তার পরে সাত জন্মেও ক্ষমতা হাতছাড়া হবে না।’’ একই সঙ্গে আরও একটি মন্তব্য তুলে নেওয়া হয়েছে ওই বইটি থেকে, যেখানে গোলওয়ালকর লিখেছেন, ‘‘আমি সারা জীবন ইংরেজের দাসত্ব করতে তৈরি, কিন্তু দলিত, পিছড়ে বর্গ এবং মুসলমানদের সমানাধিকার দেওয়া স্বাধীনতা আমার চাই না।’’
মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং প্রবীণ কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয়ের এই পোস্টটি ভাইরাল হতে সময় নেয়নি। অনেকেই যেমন দিগ্বিজয়ের বক্তব্য এবং সঙ্ঘনেতাদের মনোভাব নিয়ে সরব হন, তেমনই বিজেপি সমর্থকেরা দিগ্বিজয়ের গ্রেফতারি চেয়ে মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানকে অনুরোধ করেন। গোলওয়ালকরের নানা বক্তব্য এবং স্বাধীনতার সময়ে সঙ্ঘের মুখপত্র, সঙ্ঘ নেতাদের মন্তব্যও সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বিজেপি এবং সঙ্ঘ-বিরোধী অংশের বক্তব্য, সঙ্ঘনেতারা যেমন দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশ না নিয়ে ইংরেজদের নানা ভাবে সাহায্য করেছেন, তেমনই তাঁরা স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ভারতের সংবিধানকেও অস্বীকার করতে ছাড়েননি। এই প্রসঙ্গে ১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর সংবিধানসভায় বি আর অম্বেডকর রচিত সংবিধান গৃহীত হওয়ার পরে ৩০ নভেম্বর সঙ্ঘের মুখপত্র ‘অর্গানাইজ়ার’-এ তার সমালোচনার প্রসঙ্গও টেনেছেন অনেকে। সে সময় ‘অর্গানাইজ়ারে’ সঙ্ঘ স্পষ্টই জানিয়েছিল, মনুস্মৃতি অবলম্বন করা হয়নি। সাভারকর, গোলওয়ালকরের মতো হিন্দুত্ববাদী নেতারা বরাবরই ভারতে মনুস্মৃতির আদলে সংবিধানের দাবি করেছেন। অথচ মনুস্মৃতি মহিলা এবং দলিত ও পিছিয়ে পড়া শ্রেণির ক্ষমতায়নের তীব্র বিরোধী বলেই পরিচিত। এমনকি ভারতের ত্রিবর্ণ রঞ্জিত জাতীয় পতাকাকে মেনে নিতেও তীব্র আপত্তি ছিল সঙ্ঘের। সেই সংক্রান্ত নানা নথি এবং খবরও ছড়িয়েছে সমাজমাধ্যমে।
দিগ্বিজয়ের পোস্টের সূত্র ধরে ভারতীয় সংবিধান, মহিলা ও দলিত ক্ষমতায়ন নিয়ে সঙ্ঘের প্রাক্তন প্রধান এবং সঙ্ঘনেতাদের মনোভাব আলোচনায় উঠে আসায় অস্বস্তিতে পড়ে যান সঙ্ঘ নেতারা। তড়িঘড়ি আসরে নেমে সঙ্ঘ নেতা সুনীল অম্বেকর দাবি করেন, দিগ্বিজয় ভুয়ো (ফটোশপ করা) ছবি পোস্ট করেছেন। গোলওয়ালকর কখনও ওই ধরনের কিছু বলেননি বলেও দাবি তাঁর।
সঙ্ঘনেতা সবই ভুয়ো বলে দাবি করলেও বিষয়টি ছাড়তে নারাজ বাম নেতারা। কংগ্রেসেরও একটি অংশ বিষয়টি নিয়ে সঙ্ঘ এবং তার রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপিকে আক্রমণের সুযোগ হারাতে নারাজ। তাঁরা বিষয়টি নিয়ে সমাজমাধ্যমে আরও চর্চা চালিয়ে সঙ্ঘের অস্বস্তি বাড়াতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।