Population Control

Population Control Bill: জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে বিল প্রত্যাহার, বিজেপি-র সঙ্গে সঙ্ঘের মতপার্থক্য চলে এল প্রকাশ্যে

দীর্ঘ দিন ধরে দুই সন্তান নীতি চালুর পক্ষে সঙ্ঘ পরিবার। তাদের আশঙ্কা, অবিলম্বে ওই নীতি না নিলে দেশে হিন্দুরা সংখ্যালঘু হয়ে পড়বেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২২ ০৬:২৫
Share:

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডবিয়া স্পষ্ট জানিয়ে দেন, এই মুহূর্তে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে কোনও বিল আনার কথা ভাবছে না সরকার। ফাইল চিত্র।

জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে সঙ্ঘ পরিবারের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদী সরকারের মতবিরোধ প্রকাশ্যে এল। আজ রাজ্যসভায় সরকারের চাপে বাধ্য হয়েই সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ বিজেপি নেতা রাকেশ সিন্‌হা তাঁর‌ আনা ‘জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ বিল, ২০১৯’ প্রত্যাহার করে নেন। রাজ্যসভার এই সাংসদের আনা বিলটি ছিল প্রাইভেট মেম্বার বিল বা বেসরকারি বিল। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডবিয়া স্পষ্ট জানিয়ে দেন, এই মুহূর্তে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে কোনও বিল আনার কথা ভাবছে না সরকার।

Advertisement

দেশে দীর্ঘ দিন ধরেই দুই সন্তান নীতি চালু করার পক্ষে সঙ্ঘ পরিবার। তাদের আশঙ্কা, অবিলম্বে ওই নীতি না নিলে আগামী দিনে দেশে হিন্দুরাই সংখ্যালঘু হয়ে পড়বেন। সেই মতো সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ বিজেপি নেতা রাকেশ ২০১৯ সালে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বেসরকারি বিলটি রাজ্যসভায় পেশ করেছিলেন। আজ রাজ্যসভায় ওই বিলটি নিয়ে আলোচনায় অধিকাংশ বিরোধী সাংসদই বিলের প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বিরোধীদের মতে, জোর করে নয়, বরং গণতান্ত্রিক ভাবে জনসচেতনতা বাড়িয়ে জন্মনিয়ন্ত্রণের কাজ করতে হবে সরকারকে। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেন, ‘‘দক্ষিণের একাধিক রাজ্য জন্মনিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য ভাল কাজ করে চলেছে। ফলে রাজ্যগুলির জনসংখ্যার বৃদ্ধির হারের সূচক ঋণাত্মক রয়েছে। তাই মাথায় রাখতে হবে, জনসংখ্যা কম থাকায় নীতি আয়োগের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় অর্থ বণ্টনের ক্ষেত্রে যেন বঞ্চনার শিকার না হয় ওই রাজ্যগুলি।’’

সিপিআইয়ের বিনয় বিশ্বম বা তৃণমূলের জহর সরকারের মতো সাংসদেরা অভিযোগ তোলেন, বেসরকারি বিলটির নেপথ্যে একটি বিশেষ সম্প্রদায়কে নিশানা করা হচ্ছে। জহর বলেন, গর্ভধারণের জাতীয় হার ফি-বছর কমছে। তার অর্থ, জনসংখ্যার বৃদ্ধি কম হচ্ছে। এই আবহে নতুন করে ওই বিল আনার অর্থ কী, সেই প্রশ্ন তোলেন জহরেরা। বরং মহিলাদের সচেতনতা বৃদ্ধির উপরে জোর দেন তৃণমূল সাংসদ।

Advertisement

মাণ্ডবিয়া স্পষ্ট করে দেন, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক গতিতে কাজ এগোনোয় সরকার এই মুহূর্তে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আলাদা করে কোনও আইন আনার কথা ভাবছে না। তিনি বলেন, আগে শিশু-মৃত্যুর হার বেশি ছিল। তাই মানুষ একাধিক সন্তান নিতেন। কিন্তু বর্তমানে জাতীয় স্বাস্থ্য নীতির কল্যাণে মা ও শিশুদের মৃত্যু অনেকাংশেই কমে গিয়েছে। ফলে আগের মতো বেশি সংখ্যায় সন্তানের কথাও আর ভাবছেন না অনেকে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী দাবি করেন, ২০২৫ সালে দেশে জাতীয় গর্ভধারণের যে হার সরকার স্থির করেছিল, তা নির্দিষ্ট সময়ের আগেই তা ছুঁয়ে ফেলা সম্ভব হবে।

আজ বিতর্কের শেষে মাণ্ডবিয়া রাকেশকে ওই বিল প্রত্যাহারের অনুরোধ করলে তিনি তা করে নেন। রাজনীতির অনেকের মতে, এটি সঙ্ঘ পরিবারের কাছে একটি বড় ধাক্কা। কারণ সঙ্ঘ পরিবার মনে করে, জাতীয় গর্ভধারণের হার যেটুকু কমেছে, তা হিন্দু সমাজের মধ্যেই। মুসলিম সমাজের ক্ষেত্রে তা আদৌ কমেনি। সঙ্ঘ নেতারা মনে করেন, জনসংখ্যার বিস্ফোরণের মাধ্যমে আগামী দিনে এ দেশে সংখ্যাগুরু হয়ে দাঁড়াবে মুসলিম সমাজ। তাই একমাত্র আইন করেই মুসলিম সমাজের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমানো সম্ভব। সঙ্ঘ দীর্ঘ সময় ধরে ওই নীতির পক্ষে সরব হলেও সরকার যে এই বিষয়ে ভিন্ন পথে হাঁটছে, তা-ই আজ স্পষ্ট করে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement