ধুঁকছে উপত্যকার অর্থনীতি। —ফাইল চিত্র।
প্রথমে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার এবং তার পর করোনা সঙ্কট, দুইয়ের ভারে ধুঁকছে উপত্যকার অর্থনীতি। সেই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে এ বার জম্মু-কাশ্মীরের জন্য ১৩৫০ কোটি টাকার অর্থনৈতিক প্যাকেজ ঘোষণা করল কেন্দ্র। তার আওতায় আগামী এক বছরের জন্য জল ও বিদ্যুতের বিলের উপর ৫০ শতাংশ ছাড়া পাবেন স্থানীয় বাসিন্দারা। শুধু তাই নয়, ব্যবসার প্রয়োজনে যাঁরা ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়েছেন, আগামী ছ’মাসের জন্য তাঁদের প্রত্যেককে সুদের উপর ৫ শতাংশ করে ছাড় দেওয়া হবে।
আত্মনির্ভর ভারত প্রকল্পের আওতায় ইতিমধ্যেই জম্মু-কাশ্মীরকে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়াও স্থানীয় প্রশাসনের তরফে উপত্যকাবাসীর জন্য একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। তার বাইরে শনিবার কেন্দ্রশাসিত জম্মু-কাশ্মীরের জন্য অতিরিক্ত ১৩৫০ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজের ঘোষণা করেন সেখানকার লেফটেন্যান্ট গভর্নর (উপ রাজ্যপাল) মনোজ সিনহা। তাতেই উপত্যকার সাধারণ মানুষ, ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ী এবং পর্যটন শিল্পের জন্য একাধিক পদক্ষেপের ঘোষণা করেন তিনি।
এ দিন মনোজ সিনহা বলেন, ‘‘জম্মু-কাশ্মীরের জন্য ১৩৫০ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজে অনুমোদন দিয়েছি আমরা। উপত্যকার ব্যবসায়ী সম্প্রদায় কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের জন্য এই ঘোষণা করতে পেরে খুশি আমি। এর আওতায় আত্মনির্ভর ভারত প্রকল্প এবং স্থানীয় প্রশাসনের নেওয়া পদক্ষেপের বাইরেও অতিরিক্ত সুযোগ সুবিধা পাবেন তাঁরা।’’ ২০২১ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত ঋণগ্রহীতাদের কোনও স্ট্যাম্প ডিউটিও দিতে হবে না বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: রাজ্যে ধৃত জঙ্গিদের মধ্যে ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র থেকে পরিযায়ী শ্রমিক
সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মনোজ সিনহা বলেন, ‘‘চলতি অর্থবর্ষে বিনা কোনও শর্তে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের ঋণগ্রহীতাদের সুদের উপর ৫ শতাংশ ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। আগামী ছ’মাস তাঁরা এই সুবিধা পাবেন। এতে তাঁদের ভার খানিকটা হলেও লাঘব হবে এবং রোজগারের সুযোগ বাড়বে বলে ধারণা আমাদের।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আগামী এক বছরের জন্য জল ও বিদ্যুতের বিলের উপর ৫০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হবে। একই সঙ্গে ২০২১-এর মার্চ পর্যন্ত স্ট্যাম্প ডিউটি দিতে হবে না ঋণগ্রহীতাদের।’’
পর্যটন শিল্পের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, তাঁদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য উপত্যকার ব্যাঙ্কগুলির তরফে বিশেষ স্বাস্থ্য ও পর্যটন প্রকল্প চালু করা হবে বলেও জানান মনোজ সিনহা। এ ছাড়াও তাঁত ও হস্তশিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষের জন্য বিশেষ ক্রেডিট কার্ড প্রকল্প আনা হচ্ছে বলে জানান তিনি। মনোজ সিনহা বলেন, ‘‘তাঁত ও হস্তশিল্পের মানুষের জন্য ১ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ক্রেডিট কার্ডে সর্বোচ্চ খরচের সীমা ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। সুদের উপর ৭ শতাশ ছাড় পাবেন তাঁরা। ১ অক্টোবর থেকে মহিলা ও অল্পবয়সি ব্যবসায়ীদের জন্য উপত্যকার ব্যাঙ্কগুলিতে বিশেষ ডেস্ক চালু করা হবে।’’ প্রয়োজনে সেখানে তাঁদের কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থাও করা হবে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: মুর্শিদাবাদ থেকে এনআইএ-র হাতে পাকড়াও ৬ আল কায়দা জঙ্গি
তবে সরকারের এই ঘোষণায় তাঁরা সন্তুষ্ট নন বলে জানিয়েছেন জম্মু-কাশ্মীর আপনি পার্টির প্রেসিডেন্ট আলতাফ বুখারি। ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার এবং করোনার ধাক্কা, দুইয়ে মিলিয়ে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তাঁদের, সরকারের এই প্যাকেজ তার সামনে কিছুই নয় বলে দাবি করেন তিনি। আলতাফ বুখারি বলেন, ‘‘জম্মু-কাশ্মীরের অর্থনীতিকে ফের দাঁড় করাতে গেলে আরও বড় মনের প্রোজন। সব মিলিয়ে ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে আমাদের। তার সামনে ১৩৫০ কোটি টাকার প্যাকেজ সমুদ্রে এক ফোঁটা জলের চেয়ে বেশি নয়।’’