উমানন্দ দ্বীপে বাঘ। নিজস্ব চিত্র
এ তো ফেলুদার গল্প নয় যে সার্কাস থেকে বাঘ পালাবে! চিড়িয়াখানা থেকেও বাঘ পালানোর সম্ভাবনা নেই। তবে কি চোখের ভুল! না তো। ওই যে জল থেকে বেরিয়ে থাকা হলদে কালো ডোরাকাটা পিঠ আর সাদাটে বিরাট মাথা। ভুলের অবকাশই নেই।
চিতাবাঘ বা ‘নাহরফুটুকি’ নয়, এ দস্তুরমতো রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। স্থানীয় ভাষায় ‘ঢেকিতাপতিয়া’ বাঘ। গুয়াহাটির জাহাজঘাট থেকে উমানন্দ মন্দির যাওয়ার নিত্যদিনের ফেরির চালক, সহকারীর চোখ কপালে। মাছ ধরা নৌকাগুলোর মাঝিমাল্লাদের মধ্যেও ততক্ষণে চেঁচামেচি চলছে। জলে বাঘ, বাঘ! বাঘ এ দিকে উজানবাজারের দিকে রওনা হয়েছে। মাঝিরাই প্রথমে চেষ্টা করে গুয়াহাটিমুখী বাঘের গতিপথ বদলে দেন। মন্দিরমুখী যাত্রীদের অনেকে জলে খাবি খাওয়া প্রাণীটার ছবি ক্যামেরাবন্দি করতে ব্যস্ত। প্রথমে তো সেই খবর বিশ্বাসই করতে চাননি বনকর্মীরা। গুয়াহাটির ব্রহ্মপুত্রে বাঘ আসবে কী ভাবে। কয়েক দশক আগে শেষ বার উত্তর গুয়াহাটিতে বাঘের দেখা মিলেছিল। কিন্তু বনকর্মীরা যতক্ষণে উমানন্দে হাজির হয়েছেন ততক্ষণে দর্শনার্থী, পুরোহিত, দোকানি, ফেরিকর্মী, নিত্যযাত্রীদের কোলাহল আর জলযানের দৌরাত্ম্য থেকে নিজেকে বাঁচাতে উমানন্দ দ্বীপে পাথরের খাঁজে লুকিয়ে পড়়েছে বাঘমামা।
বাঘের আতঙ্কে দ্বীপ খালি করে পুরোহিত, ভক্ত, কর্মী, দোকানদার সকলকে এ পারে নিয়ে আসা হয়। এ পার থেকে খাঁচা ও ঘুমপাড়ানি গুলি-বন্দুক নিয়ে রওনা হন চার পশু চিকিৎসক ও বনকর্মীরা। চলে আসে এনডিআরএফ বাহিনী। শেষ পর্যন্ত ৫ ঘণ্টা ওই ভাবে থাকার পরে পাথরের আড়ালে থাকা বাঘটিকে ঘুমপাড়ানি গুলিতে কাবু করে খাঁচাবন্দি করা হয়। নিয়ে আসা হয় চিড়িয়াখানায়। পথশ্রমে ও আতঙ্কে বাঘের অবস্থা বিধ্বস্ত। তার উপরে রয়েছে ঘুমপাড়ানি গুলির ঘোর। আপাতত শুশ্রুষা চলছে অতিথির।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ওরাং জাতীয় উদ্যান থেকে প্রায়ই বাঘ বেরিয়ে আসে। তেমনই কোনও প্রাপ্তবয়স্ক বাঘ সম্ভবত জঙ্গল থেকে বেরিয়ে, বিভিন্ন গ্রাম ও শীতকালে জল কম থাকায় নদীর চর হয়ে গুয়াহাটির দিকে চলে এসেছে। অথবা সে দীর্ঘেশ্বরী বা কুরুয়ার বনাঞ্চল হয়েও এসে থাকতে পারে। স্থলপথে বাঘের কাছে ১০০ কিলোমিটার বিচরণ কঠিন নয়। তবে অসমে জলপথ ও নদীচর মিলিয়ে প্রায় ১০০ কিলোমিটার পথ এ ভাবে, সকলের চোখের আড়ালে পাড়ি দেওয়ার ঘটনা নজিরবিহীন।