শপথ নিতে হাজির রঞ্জন গগৈ। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র
স্ত্রী রূপাঞ্জলি, মেয়ে রশ্মি, জামাই তন্ময় মেহতা সঙ্গে এসেছিলেন। যে কোনও সাংসদের পরিবারের প্রিয়জনই সংসদে তাঁর শপথগ্রহণের সাক্ষী থাকতে চান। প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয়নি।
ব্যতিক্রমী ঘটনাটা ঘটল শপথগ্রহণের সময়। বেলা ১১টায় রাজ্যসভার অধিবেশনের শুরুতেই চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডু শপথগ্রহণের কথা ঘোষণা করেন। রঞ্জন গগৈ ওয়েলের দিকে এগোতেই উঠল ‘শেম, শেম’ ধ্বনি। রাজ্যসভার গ্যালারিতে হাজির পরিবারের সদস্যদের সামনেই দেশের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতিকে লক্ষ্য করে বিরোধী বেঞ্চ থেকে উড়ে এল বিদ্রুপ। গগৈয়ের দিকে আঙুল তুলেই অনেকে ‘শেম অন ইউ’, ‘ডিল’ ‘ডিল’ বলে আওয়াজ তুললেন।
এর মধ্যেই ‘আই রঞ্জন গগৈ…’ বলে শপথ পাঠ শুরু করলেন প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি। নায়ডু বিরোধীদের অনুরোধ করলেন থামার জন্য। বোঝানোর চেষ্টা করলেন, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা রয়েছে কাউকে মনোনীত করার। বিরোধীরা বাইরে গিয়ে তাঁদের কথা বলতেই পারেন, কিন্তু সংসদের মধ্যে সদস্যদের সম্মান করা উচিত।
তাতে অবশ্য বিদ্রুপ থামল না। শপথ পাঠের মধ্যেই সমাজবাদী পার্টি ছাড়া বাকি বিরোধীরা ওয়াক-আউট করলেন। তৃণমূলের সাংসদেরা অবশ্য সে সময় সংসদে ছিলেন না। তাঁরা রাজ্যসভায় থেকে প্রতিবাদ করতে চাননি বলেই দলীয় সূত্রের খবর।
অবসরের চার মাসের মধ্যেই প্রাক্তন প্রধান বিচারপতিকে রাষ্ট্রপতি রাজ্যসভায় মনোনীত করার পর পরই প্রশ্ন উঠেছে, গগৈ কি বিচারবিভাগের স্বাধীনতা বিসর্জন দিলেন? কিন্তু রাজ্যসভায় যে তাঁকে ধিক্কার শুনতে হবে, তা বোধহয় গগৈ ভাবেননি। শপথগ্রহণের পরে অবশ্য সংসদ ভবন থেকে বেরিয়ে বিরোধীদের প্রতিবাদের প্রশ্নে হাসি মুখেই গগৈ বলেন, ‘‘খুব শীঘ্র ওঁরাই আমাকে স্বাগত জানাবেন।’’ সাংসদ পদ গ্রহণ করা প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, অনেক ভাবনাচিন্তা করেই এই প্রস্তাব গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। গগৈয়ের যুক্তি, ‘‘সংসদে আমার উপস্থিতি সাংসদদের সামনে বিচারবিভাগের মতামত তুলে ধরতে সাহায্য করবে।’’
শপথ নেওয়ার জন্য গুয়াহাটি থেকে দিল্লিতে এসে রাজধানীর একটি হোটেলে উঠেছেন গগৈ। সরকারি সূত্রের খবর, বর্তমান প্রধান বিচারপতি শরদ অরবিন্দ বোবডে বুধবার রাতে তাঁর সঙ্গে হোটেলে দেখা করতে যান। তবে গগৈয়ের শপথগ্রহণের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রাজ্যসভায় ছিলেন না।
বিরোধীদের ওয়াক-আউটের প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, ‘‘রাজ্যসভায় বিভিন্ন জগতের বহু স্বনামধন্য ব্যক্তি এসেছেন। প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি গগৈও গুরুত্বপূর্ণ যোগদান করবেন। এর আগেও প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রাজ্যসভায় এসেছেন। আজ যাঁরা চিৎকার করলেন, তাঁরাই প্রাক্তন প্রধান বিচারপতিকে রাজ্যসভায় নিয়ে এসেছেন।’’ গগৈয়ের আগে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রঙ্গনাথ মিশ্র কংগ্রেসের টিকিটে রাজ্যসভায় সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মা বলেন, ‘‘আমাদের আপত্তির কারণ হল, উনি সবেমাত্র অবসর নিয়েছেন। অনেক বিতর্কিত রায় দিয়েছেন। বলতে দ্বিধা নেই, উনি প্রধান বিচারপতি হিসেবেও বিতর্কিত। সরকারের নিয়োগ তিনি যে ভাবে গ্রহণ করলেন, তাতে লেনদেনের বিষয়ে প্রশ্ন ওঠে। এতে প্রধান বিচারপতি পদের অমর্যাদা হয়েছে। ’’ তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র বলেন, ‘‘উনি প্রতিষ্ঠানের অমর্যাদা করেছেন। গোটা দেশকে খাটো করেছেন। লজ্জাজনক যে, একজন প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রাজ্যসভার একটি আসন, দিল্লিতে একটা বাংলোর জন্য নিজের আত্মাকে বেচে দিলেন!’’