(বাঁ দিকে) লালু এবং জিতনরাম। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
বিহারে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের জোট বদলের জল্পনা দানা বাঁধতেই শুরু হল পাল্টা তৎপরতা। নেতৃত্বে বিরোধী জোট ‘মহাগঠবন্ধন’-এর বৃহত্তম দল আরজেডির প্রধান লালু প্রসাদ। ঘটনাচক্রে, যাঁর দল বিধায়ক সংখ্যার নিরিখে বিহার বিধানসভায় বৃহত্তম।
সূত্রের খবর, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জিতনরাম মাঝিঁর ‘হিন্দুস্তানি আওয়াম মোর্চা’ (হাম)-এর সঙ্গে ইতিমধ্যেই কথা হয়েছে লালুর। হাম-এর চার বিধায়কের সমর্থনের বিনিময়ে জিতনের ছেলে সন্তোষ কুমার সুমনকে উপমুখ্যমন্ত্রিত্বের প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। লালুর এই প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ হলে বিহার বিধানসভায় বিজেপি-জেডিইউ জোটকে বাদ দিয়েই সরকার গড়ার কাছাকাছি পৌঁছে যেতে পারে ‘মহাগঠবন্ধন’। তাই বিকল্প বন্দোবস্ত হিসাবে বিজেপি সরকার ভেঙে লোকসভা ভোটের সঙ্গে বিহার বিধানসভার ভোট করানোর জন্য নীতীশের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে বলে রাজনৈতিক মহলে কানাঘুষো চলছে।
২৪৩ আসনের বিহার বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ১২২ বিধায়কের সমর্থন। আরজেডির রয়েছে ৭৯ জন বিধায়ক। এ ছাড়া, কংগ্রেসের ১৯, সিপিআইএমএল লিবারেশনের ১২, সিপিএমের ২, সিপিআইয়ের ২ এবং ১ নির্দল বিধায়ক রয়েছেন বিজেপি বিরোধী মহাজোটে। অর্থাৎ, ১১৫ বিধায়কের সমর্থন পেতে পারেন লালুরা। এ ছাড়া হায়দরাবাদের সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়েসির ‘অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন’ (মিম)-এর এক জন বিধায়কও প্রয়োজনে ‘মহাগঠবন্ধন’কে সমর্থন করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে জিতনের চার বিধায়ককে পাশে পেলে ১২০-তে পৌঁছে যাবে বিজেপি বিরোধী জোট। লালুদের প্রয়োজন হবে আর মাত্র দুই বিধায়কের সমর্থন।
অন্য দিকে, দ্বিতীয় বৃহত্তম দল বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা ৭৮। নীতীশের ৪৫। অর্থাৎ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ব্যবধান এক সুতোর, ১২৩। মনোনীত বিধায়কের এমন পরিস্থিতি অনেক ক্ষেত্রেই বিধানসভার স্পিকারের ভূমিকা ‘নির্ণায়ক’ হয়ে ওঠে। স্পিকার পদে রয়েছেন লালুর ঘনিষ্ঠ অনুগামী আরজেডি নেতা অওয়ধবিহারি চৌধুরী। ফলে শিবির বদলেও খুব স্বস্তিতে থাকতে পারবেন না নীতীশ। এই পরিস্থিতিতে বিহারের ১৯ জন কংগ্রেস বিধায়কের মধ্যে ১২ জনের সঙ্গে নীতীশ শিবির ‘যোগাযোগ’ রাখছে বলে খবর।
প্রসঙ্গত, একদা জেডিইউ নেতা জিতনরাম ছিলেন নীতীশের ঘনিষ্ঠ অনুগামী। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি নরেন্দ্র মোদীর নাম প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করার পর এনডিএ জোট থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল নীতীশের দল জেডিইউ। ২০১৪-এর লোকসভা ভোটে একলা লড়ে বিহারে জেডিইউ-র ভরাডুবির পরে মুখ্যমন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দেন নীতীশ। মুখ্যমন্ত্রী করেন তাঁর অনুগামী দলিত নেতা জিতনরামকে। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই দু’জনের সম্পর্কের অবনতি হয়। জিতনরামকে সরিয়ে ফের মুখ্যমন্ত্রী হন নীতীশ। জিতনরাম জেডি(ইউ) ছেড়ে ‘হাম’ গড়ে এনডিএ জোটে শামিল হন। ২০১৫-র বিধানসভা ভোটে তিনি বিজেপির সমর্থনে বিধায়ক হলেও ‘হাম’-এর অন্য কোনও প্রার্থী জিততে পারেননি। অন্য দিকে, আরজেডি-কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়ে ফের মুখ্যমন্ত্রী হন নীতীশ।
২০১৭ সালে নীতীশ ফের বিজেপির হাত ধরার পরে এনডিএ জোটের অন্দরে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছিলেন জিতনরাম। নীতীশ তাঁকে মন্ত্রী করেননি। এর পরে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেস, আরজেডি, রাষ্ট্রীয় লোক সমতা পার্টি (আরএসএলপি)-র মহাগঠবন্ধনে শামিল হন তিনি। কিন্তু মহাজোটের শরিক হিসেবে তিনটি আসনে লড়ে একটিতেও হাম জিততে পারেনি। জিতনরাম নিজেও গয়া লোকসভা কেন্দ্রে হেরে গিয়েছিলেন। এর পর ২০২০-র বিহার বিধানসভা ভোটের আগে এনডিএতে ফিরে যান জিতনরাম। তাঁর দল ৭টি আসনে লড়ে ৪টিতে জয়ী হয়। মন্ত্রী হন তাঁর ছেলে সুমন। ২০২২ সালের অগস্টে নীতীশের দল এনডিএ ছেড়ে আরজেডি-কংগ্রেস-বামেদের ‘মহাগঠবন্ধন’-এ শামিল হওয়ার সময় জিতনও তাঁর সঙ্গী হয়েছিলেন। কিন্তু নীতীশের সঙ্গে ফের সংঘাতের কারণে গত জুনে ‘মহাগঠবন্ধন’ ছেড়ে বিজেপির সহযোগী হন তিনি।