Renu Devi

নীতীশ আবার বিজেপির সঙ্গী হলে মুখ্যমন্ত্রী পদে হাওড়ার বধূ রেণু? জল্পনা শুরু বিহার রাজনীতিতে

বিহারের বেতিয়ার রেণুর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল হাওড়ার জগাছার বাসিন্দা দুর্গাপ্রসাদের। স্বামীর মৃত্যুর অনেক পরে তিনি বিহারে বাপের বাড়িতে ফিরে গিয়েছিলেন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২৪ ০৯:২৫
Share:

বাঁ দিক থেকে, নীতীশ কুমার এবং রেণু দেবী। — ফাইল চিত্র।

নীতীশ কুমার আবার এনডিএতে ফিরলেও তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী পদ ছাড়ার বিষয়ে তীব্র আপত্তি রয়েছে বিহারের বিজেপি নেতাদের বড় অংশেরই। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী পদে ‘সম্ভাব্য’ কিছু নাম নিয়ে জল্পনাও শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই। আর সেই তালিকার প্রথমে রয়েছে বেতিয়ার বিজেপি নেত্রী তথা প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী রেণু দেবীর নাম। ঘটনাচক্রে যিনি হাওড়ার বধূ!

Advertisement

বিহারের বেতিয়ার রেণুর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল হাওড়ার জগাছার দুর্গাপ্রসাদের। বৈবাহিক সূত্রে তাই দীর্ঘ দিন তিনি জগাছাতেই থাকতেন। স্বামীর মৃত্যুর অনেক পরে তিনি বিহারে নিজের বাপের বাড়ি ফিরে যান। তবে এখনও মাঝে মাঝেই সপরিবার জগাছার সেই বাড়িতে আসেন রেণু। দেশ জুড়ে লকডাউন চালু হওয়ার আগেও হাওড়ায় দেখা গিয়েছিল তাঁকে।

নব্বইয়ের দশকে বিজেপির মহিলা শাখা দুর্গাবাহিনীর হয়ে রাজনীতি শুরু রেণুর। ২০০০ সালে বিজেপি-জেডিইউ জোটের প্রার্থী হিসাবে প্রথম বিধানসভা ভোটে জেতেন বেতিয়া কেন্দ্রে। এর পরে তিনটি নির্বাচনেও ধারাবাহিক জয় পেয়েছিলেন অতি অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর (ইবিসি) এই নেত্রী। নীতীশ মন্ত্রিসভায় ছিলেন বিপর্যয় মোকাবিলা, পঞ্চায়েতি রাজ, শিল্পের মতো নানা গুরুত্বপূর্ণ দফতরের দায়িত্বে। ২০১৫ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থীর কাছে হেরে গেলেও ২০২০-তে ফের জিতে নীতীশ মন্ত্রিসভায় উপমুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান রেণু।

Advertisement

নীতীশের সঙ্গেও রেণুর সম্পর্ক ভাল। ফলে সম্রাট চৌধুরী, গিরিরাজ সিংহ, অশ্বিনী চৌবে, রবিশঙ্কর প্রসাদদের বিরোধিতার মুখে পড়ে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহেরা তাঁর নাম প্রকাশ্যে আনতে পারেন বলে জল্পনা রয়েছে। পরিবর্তে নীতীশের দলকে গত বার লোকসভা ভোটে জেতা ১৬টি আসন-সহ মোট ১৭টি আসন ছাড়া হতে পারে বলে জল্পনা রয়েছে। প্রসঙ্গত, বুধবার বিহারের প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, অনগ্রসর (ওবিসি) নেতা কর্পূরী ঠাকুরের জন্মশতবর্ষ কর্মসূচিতে নীতীশের মন্তব্যের পরে বিহার তথা জাতীয় রাজনীতিতে জল্পনা, দেড় বছরের মাথাতেই আবার বিরোধী জোট ছেড়ে বিজেপির সহযোগী হতে চলেছেন তিনি।

১৯৭৮ সালে জনতা পার্টির সরকারের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন কর্পূরী প্রথম বিহারে অনগ্রসর শ্রেণির (ওবিসি) জন্য সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। জন্মশতবর্ষে তাকে মরণোত্তর ভারতরত্ন দেওয়ার সিদ্ধান্তের জন্য নরেন্দ্র মোদী সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা জেডিইউ প্রধান নীতীশ। পাশাপাশি তাঁর ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ মন্তব্য— ‘‘জেডিইউ নেতৃত্ব কর্পূরী ঠাকুরের দর্শন অনুসরণ করে চলেছেন। পরিবারের কোনও সদস্যকে আমরা রাজনৈতিক ক্ষমতার বৃত্তে নিয়ে আসি না।’’ এ প্রসঙ্গে প্রয়াত কর্পূরীর পুত্র তথা জেডিইউর রাজ্যসভা সাংসদ রামনাথের উদাহরণ দেন নীতীশ। বলেন, “কর্পূরীরজির মৃত্যুর পরে আমরা রামনাথকে নেতৃত্বে নিয়ে এসেছিলাম।”

কোনও ব্যক্তি বা সংগঠনের নাম না করলেও নীতীশের ওই মন্তব্যের নিশানা আরজেডি প্রধান লালুপ্রসাদ এবং তাঁর পরিবার বলেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের ধারণা। জয়প্রকাশ নারায়ণের মতোই সমাজবাদী (সোশ্যালিস্ট) নেতা কর্পূরীও ছিলেন লালু-নীতীশদের অন্যতম রাজনৈতিক পথপ্রদর্শক। যে ভাবে লালু তাঁর স্ত্রী ও পুত্র-কন্যাদের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করার বন্দোবস্ত করেছেন, তা নিয়েই নীতীশ কটাক্ষ করেন বলে আরজেডি শিবিরের একাংশের দাবি। বস্তুত, বৃহস্পতিবার সকালে লালু-কন্যা রোহিণী এক্স হ্যান্ডলে দু’টি পোস্টে নাম না-করে নীতীশকে আক্রমণও করেন। অভিযোগ করেন বার বার জোট বদল নিয়ে। যদিও পরে পোস্টটি মুছে দেওয়া হয়।

তবে রাজনৈতিক তৎপরতা তাতে থামেনি। বৃহস্পতিবার প্রাক্তন জেডিইউ সভাপতি লালন সিংহ, বিহার বিধানসভার প্রাক্তন স্পিকার বিজয় নারায়ণ চৌধুরির মতো ঘনিষ্ঠ নেতাদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেন নীতীশ। অন্য দিকে, বিহার বিজেপির সভাপতি সম্রাট চৌধুরি এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা সে রাজ্যের বিজেপি নেতা অশ্বিনী চৌবে রওনা দিয়েছেন দিল্লিতে। জল্পনা চলছে, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত হবে এনডিএ-তে নীতীশের প্রত্যাবর্তনের পরিকল্পনা। অন্য দিকে, বিজেপি এবং জেডিইউ দু’পক্ষই তাদের বিধায়কদের পটনায় আসার নির্দেশ দিয়েছে।

প্রায় দু’দশক আগে বিহারে যাদব পরিবারতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে বিজেপির সমর্থনেই প্রথম বার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন নীতীশ। কিন্তু ২০১৩ সালে বিজেপি মোদীকে ‘প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী’ ঘোষণা করায় এনডিএ ছাড়েন তিনি। নীতীশের একদা ঘনিষ্ঠেরা বলেন, সে সময়ে তাঁর লক্ষ্য ছিল, ভোটের পরে অ-কংগ্রেস দলগুলি ভাল ফল করলে সেই জোটের নেতা হিসেবে কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে প্রধানমন্ত্রিত্বের দাবি জানানো। কিন্তু ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে মোদীর বিপুল ভোটে জয় নীতীশের পরিকল্পনায় জল ঢেলে দেয়। উল্টে বিহারে ৪০টি লোকসভা আসনের মধ্যে মাত্র দু’টি আসন পেয়েছিল নীতীশের দল।

২০১৫-য় আরজেডি-কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে বিহারের বিধানসভা ভোটে জিতে মুখ্যমন্ত্রী হলেও ‘বাস্তব পরিস্থিতি’ বুঝতে পেরে ২০১৭-র জুলাই মাসে এনডিএ-তে ফিরে গিয়েছিলেন নীতীশ। ২০১৯-এর লোকসভা এবং ২০২০-র বিহার বিধানসভা ভোটে বিজেপির জোটসঙ্গী ছিলেন তিনি। কিন্তু ২০২০ সালে বিহারের বিধানসভা ভোটে বিজেপির সঙ্গে লড়ে জিতলেও ২০২২ সালের অগস্টে এনডিএ ছেড়ে বিহারে আরজেডি-কংগ্রেস-বামেদের সমর্থন নিয়ে ‘মহাগঠবন্ধন’ সরকার গড়েছিলেন নীতীশ। এ বার ফের কুর্মি নেতার জোটবদল নিয় জল্পনা শুরু হয়েছে বিহারে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement