ছবি সংগৃহীত।
প্রথমে নিপা ভাইরাস, এখন কোভিড-১৯। মাঝে ভয়াবহ বন্যা। পরপর দুর্যোগের এই ত্রিভুজ সামলানোর ফল কেরলে ভোটের বাক্সে পাওয়া যাবে বলে আশা করছে সিপিএম। পিনারাই বিজয়নের নেতৃত্বাধীন এলডিএফ সরকারের চার বছর পূর্তি উপলক্ষে শাসক দলের অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন সে রকমই।
দক্ষিণী এই রাজ্যে পাঁচ বছর অন্তর সরকার বদলানোই বহু দিনের রেওয়াজ। গত বছর লোকসভা ভোটে কেরলের ২০টি লোকসভা আসনের মধ্যে মাত্র একটিতে জিততে পেরেছিল শাসক সিপিএম, বাকি ১৯টিই পেয়েছিল কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইউডিএফ। এর পরে ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে বামেদের ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হবে, লোকসভার ফল থেকে এমন ইঙ্গিতই পড়ে নেওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু সিপিএমের যুক্তি অন্য কথা বলছে। বিরোধী কংগ্রেস ও বিজেপি অবশ্য করোনা মোকাবিলায় বিজয়ন সরকারের দক্ষতা মেনে নিয়েও ভোটের দৌড়ে বামেদের অতটা এগিয়ে রাখতে রাজি নয়।
বিজয়ন সরকারের চার বছর পূর্তির সময়ে সিপিএমে যে অভ্যন্তরীণ রিপোর্ট তৈরি হয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে, লোকসভা ভোটে কেরলের মানুষের মনোভাব ছিল প্রবল বিজেপি-বিরোধী। জাতীয় দল এবং কেন্দ্রে সরকার গড়ার দাবিদার হিসেবে সেই বিজেপি-বিরোধিতার সুফল কংগ্রেস ঘরে তুলেছে। লোকসভার পরে বিধানসভার কিছু আসন এবং স্থানীয় প্রশাসনের নানা উপনির্বাচনে বামেরা আবার ভাল সমর্থন পেয়েছে এবং কোনও ক্ষেত্রেই বিজেপি কোনও সুবিধা পায়নি। এর সঙ্গে যোগ করতে হবে পরপর তিন বছরে নিপা, বন্যা ও করোনা মোকাবিলায় সরকারের ‘দক্ষতা’র প্রশ্ন। প্রতি বারই রাজ্য যে ভাবে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে, তা গোটা দেশে এবং কিছু ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও সমাদর পেয়েছে। দক্ষ হাতে পরপর সঙ্কট সামাল দেওয়ার সুবাদে আগামী বিধানসভা ভোটে সরকার বদলের রেওয়াজে ব্যতিক্রম ঘটিয়ে চাকা ঘোরানো যাবে বলে রিপোর্টে ব্যাখ্যা করেছে আশাবাদী সিপিএম।
করোনা মোকাবিলায় কেরল যে নজর কেড়েছে, তা অস্বীকার করতে পারছে না বিরোধী কংগ্রেস ও বিজেপিও। তবে তাদের অভিযোগ, এই চার বছরে উন্নয়নের নিরিখে রাজ্য এগোতে পারেনি। বিরোধী দলনেতা রমেশ চেন্নিথালার কথায়, ‘‘বিপর্যয় মোকাবিলা ভাল ভাবে হচ্ছে ঠিকই। তবে তার জন্য উন্নয়নের প্রশ্ন আড়ালে চলে গিয়েছে! একের পর প্রকল্প এলডিএফ সরকার এখনও শেষ করতে পারেনি। উপরন্তু রাজ্যের ঋণের বোঝা বেড়েছে।’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি কে সুরেন্দ্রনের আবার দাবি, ‘‘কেরলের জন্য নরেন্দ্র মোদী সরকার যে ভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে, অতীতে কোনও কেন্দ্রীয় সরকার তা করেনি। এই করোনার সময়েও কেন্দ্র সব রকম সাহায্য করেছে বলেই রাজ্য সরকার কাজ করতে পেরেছে।’’
এমন ব্যাখ্যা অবশ্য মানতে নারাজ সিপিএম নেতৃত্ব। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও রাজ্যসভার সাংসদ এলামারাম করিমের প্রশ্ন, ‘‘এমন বড় বড় বিপর্যয় পরপর মোকাবিলা করতে হলে তার পিছনে তো সময়, অর্থ, পরিশ্রম যাবেই। আর বন্যা বা করোনা মোকাবিলায় কেন্দ্র ঠিক কেমন অর্থ সাহায্য করেছে, তার হিসেব কি বিজেপি নেতারা দেবেন?’’