রিচার্ড সুজিত গোমস ফাইল চিত্র।
প্রায় দু’বছর ধরে সে সারা বিশ্বে মূর্তিমান বিভীষিকা রূপে বিরাজ করলেও দমদম ক্যান্টনমেন্টের রিচার্ড সুজিত গোমসের কাছে কার্যত ‘শাপে বর’ হয়ে উঠেছে করোনা।
আফগানিস্তানে কাজে ফেরার ব্যাপারে সব কিছু ঠিক ছিল সুজিতের। ফেরার দু’দিন আগে হঠাৎ শরীর খারাপ। কাবুলের বিমানে ওঠার আগে আবশ্যিক আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করতে গিয়ে ধরা পড়ল করোনা পজ়িটিভ। বাতিল হল আফগানিস্তান যাত্রা। আর আফগানিস্তানে যাওয়াই হয়নি তাঁর। “ভাগ্যিস, আমার করোনা হয়েছিল। তাই তো যাত্রা বাতিল হল। করোনা না-হলে যাওয়া ঠিক ছিল। তা হলে কি আর এই পরিস্থিতিতে দেশে ফিরতে পারতাম,” সুজিতের গলায় স্পষ্টতই বেঁচে যাওয়ার স্বস্তি।
আফগানিস্তানের হেলমন্দ প্রদেশে একটি কেটারিং সংস্থায় রাঁধুনির কাজ নিয়ে ২০১১ সালে দেশ ছেড়েছিলেন সুজিত। প্রথম দফায় ২০১৫ পর্যন্ত ছিলেন। দ্বিতীয় দফায় যান ২০১৬-র নভেম্বরে। ছুটিতে বাড়ি ফেরেন গত জানুয়ারিতে। সুজিত বললেন, “তিন মাস ছুটি পেয়েছিলাম। মার্চের শেষে ফেরার কথা ছিল। বাদ সাধল করোনা। গন্ধের অনুভূতি চলে গিয়েছিল। জ্বর ও শরীর দুর্বল হচ্ছিল। বাড়িতেই চিকিৎসা করে সেরে উঠি মে মাসে।” কেটারিং সংস্থা জানিয়েছিল, নেগেটিভ রিপোর্ট পাঠালে তাঁকে কাজে ফেরার অনুমতি দেওয়া হবে। সুজিত জানান, করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট পাঠানোর পরেও কিন্তু ওই সংস্থা আর কাজে ফিরে যেতে বলেনি। সুজিত বলেন, “আফগানিস্তানের পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করেছিল তার কয়েক মাস আগে থেকেই। সম্ভবত সেটা আঁচ করেই ওরা কাজে যোগ দেওয়ার জন্য আমাকে আর ডাকেনি।”
ওই সংস্থায় আমেরিকান সেনাদের জন্য খাবার তৈরি করতেন সুজিত। “চার কিলোমিটারের একটা ঘেরা জায়গায় থাকতে হত আমাদের। ওই ঘেরা জায়গার বাইরে বেরোনো নিষেধ ছিল। বেরোতে হলে বিশেষ অনুমতি নিতে হত। কার্যত বন্দিজীবন। তবু একটু বেশি উপার্জন করতে পারব, পরিবার ভাল থাকবে— এই আশাতেই ওখানে রাঁধুনির কাজ নিয়ে গিয়েছিলাম,” বললেন সুজিত।
দুই যমজ ছেলে ও স্ত্রী স্নিগ্ধাকে নিয়ে সংসার ওই যুবকের। কলকাতায় বিকল্প কাজ পাননি। “খুবই অর্থকষ্টে আছি। তবু আফগানিস্তানের পরিস্থিতি দেখে মনে হয়, ভাগ্যিস, আর ফিরে যাইনি,” বললেন সুজিত। সুখের চেয়ে যে স্বস্তি ভাল, ধরা পড়ছে তাঁর স্ত্রীর গলাতেও। “ওর কাজ চলে যাওয়ায় টানাটানি খুব। তবু বলব, মানুষটা তো চোখের সামনে রয়েছে। ডাল-ভাত খেয়ে চলে যাচ্ছে,” বলছেন স্নিগ্ধা।