এক রাতে আচমকা কি বদলে গেল এত দিনের ‘সত্য’? নীতীশের জবাব এখনও মেলেনি। ছবি: পিটিআই।
আচমকা লালুপ্রসাদ আর কংগ্রেসের সঙ্গ খুব অসহ্য হয়ে উঠল নীতীশ কুমারের কাছে। মহাজোট সরকারে থাকা আর এক মুহূর্তও সম্ভব ছিল না তাঁর পক্ষে— ইস্তফা দিয়ে এমনটাই জানিয়েছিলেন। রাত পোহানোর আগেই নীতীশের মনে হল উন্নয়ন এবং সুশাসনের স্বার্থে বিজেপি-ই তাঁর সবচেয়ে বিশ্বস্ত সহযোগী হতে পারে। তাই সাতসকালে বিজেপিকে সঙ্গে নিয়ে নতুন সরকারও গড়ে ফেললেন। কিন্তু, ২০১৩ সালে নরেন্দ্র মোদীর নাম বিজেপি তথা এনডিএ-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষিত হওয়ার পর থেকে চলতি বছরের মাঝামাঝি পর্যন্ত কিন্তু এই বিজেপি অত্যন্ত অসহনীয় ছিল বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে।
এই সময়টার মধ্যে নীতীশ কুমার ঠিক কী কী বলেছেন বিজেপি, আরএসএস এবং নরেন্দ্র মোদী সম্পর্কে? দেখে নিন এক ঝলকে:
‘‘সেই সময়টা এসে গিয়েছে, যখন আপনাকে আরএসএস-বিরোধিতার কথা ভাবতেই হবে। এক আরএসএস-মুক্ত ভারত গড়ার লক্ষ্যে সব অ-বিজেপি দলগুলির হাত মেলানো উচিত।’’ বিহারের স্বার্থেই বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন বলে নীতীশ আজ দাবি করছেন। কিন্তু এই নীতীশই কিছু দিন আগে বলেছিলেন, ‘‘... বিজেপি বলে উন্নয়নের কথা, কিন্তু রাজনীতিটা করে বিভাজনের।’’ নরেন্দ্র মোদী উন্নয়নের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সে সবই আদতে ভুয়ো বলে কিছু দিন আগে পর্যন্তও সম্ভবত মনে করতেন নীতীশ। তিনি বলেছিলেন, ‘‘দু’বছর কেটে যাওয়ার পরও মোদী সরকারের মেক-ইন-ইন্ডিয়া শুধুই প্রতিশ্রুতি, কাজ কিছুই হয়নি।’’
আরও বলেছিলেন, ‘‘মেক-ইন-ইন্ডিয়ার মাধ্যমে মোদীর সরকার ফের গরিবদের মেরে পুঁজিপতিদের স্বার্থরক্ষার পথ বেছে নিয়েছে।’’ বিজয় মাল্য প্রসঙ্গে মোদীর প্রতি নীতীশের তিক্ত কটাক্ষ ছিল, ‘‘আগে ছিল ললিত মোদী, এ বার হয়েছে মাল্য-মোদী...।’’
বিজেপির সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে কিছু দিন আগে পর্যন্তও অত্যন্ত ‘ভয়’ পেতেন নীতীশ কুমার। ২০-২১ মাসে আগেই বলেছিলেন, ‘‘মোদীর আসল মুখটা বেরিয়ে পড়েছে— বিহারের নির্বাচনে সাম্প্রদায়িক রং লাগানোর প্রবল চেষ্টা চলছে, কিন্তু দাদরির বিষয়ে কানে তালা লাগানো নীরবতা।’’
সে দিন ...। লালুকেই সবচেয়ে কাছের মনে হয়েছিল নীতীশের। ছবি: পিটিআই।
শুধু হিন্দুত্ববাদ নয়, বিজেপি-আরএসএস-কে দলিত-বিরোধী বলেও সে সময় দেগে দিয়েছিলেন নীতীশ। বিহার বিধানসভা নির্বাচনের মুখে দাঁড়িয়ে নীতীশ বলেছিলেন, ‘‘সংরক্ষণ নীতি পুনর্বিবেচনা করার যে আহ্বান মোহন ভাগবত জানাচ্ছেন, তা বিজেপির আসল রূপটা দেখিয়ে দিচ্ছে এবং তাদের তফসিলি জাতি-উপজাতি-বিরোধী / ওবিসি-বিরোধী অবস্থানটা স্পষ্ট করে দিচ্ছে।’’
আরও পড়ুন: নীতীশের পুনর্বিজেপি ভব! প্রশ্ন উঠছে নীতি নিয়েই
বিজেপির মতো দলের ‘আসল রূপ’টা চিনে নিতে বিহারের মানুষ যে সক্ষম, বিধানসভা নির্বাচনের আগে সে কথা খুব জোর দিয়ে বলেছিলেন নীতীশ। তাঁর কথায়, ‘‘জাত-পাতের রাজনীতির মাধ্যমে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকা আর মোদীজির আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তির ঢাক পেটানোর যে রাজনীতি বিজেপি করছে, তার ফাঁদে পা দেওয়ার মতো বোকা বিহার নয়।’’ বিহার সে বার প্রমাণ করেছিল, বিহার ‘বোকা’ নয়। বিজেপির দিকে যায়নি বিহারের ভোট। কিন্তু নীতীশ এ বার কী করলেন? তিনি কি নিজেই ‘বোকা’ হয়ে গেলেন? নাকি অন্যদের ‘বোকা’ বানালেন? প্রশ্ন তুলছে কংগ্রেস-আরজেডি।