প্রজাতন্ত্রে গুঞ্জন, ‘পিঙ্ক’ কেন মোদী

সাধারণ ভাবে নখ এবং ওষ্ঠ রঞ্জন করাই যার ধর্ম, সেই রঙ যদি উঠে আসে ছাপান্ন ইঞ্চি প্রশস্ত ছাতির দাবিদার এক পুরুষের পোশাকে! গুঞ্জন হতে বাধ্য!

Advertisement

অগ্নি রায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:০৭
Share:

—ফাইল চিত্র

সাধারণ ভাবে নখ এবং ওষ্ঠ রঞ্জন করাই যার ধর্ম, সেই রঙ যদি উঠে আসে ছাপান্ন ইঞ্চি প্রশস্ত ছাতির দাবিদার এক পুরুষের পোশাকে! গুঞ্জন হতে বাধ্য!

Advertisement

নরেন্দ্র মোদী যে যথেষ্ট ফ্যাশন-সচেতন, এ কথা এত দিনে সকলেই জেনে গিয়েছেন। সোনার সুতো দিয়ে নাম লেখা দশলাখি স্যুট-পরিহিত মোদীকে নিয়ে এক সময় বিতর্কও কম হয়নি। এ বার গুঞ্জনে প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে তাঁর পাগড়ির রঙ। সোশ্যাল মিডিয়া তাই নিয়ে তোলপাড়।

প্রায় হাঁটু-ছোঁয়া গোলাপি রঙের রাজস্থানী পাগড়ি দেখে কেউ কেউ সেখানে তর্ক জুড়েছেন, এই তথাকথিত মেয়েলি রঙটি পাগড়িতে একেবারেই বেমানান! কেউ বলছেন, প্রজাতন্ত্র দিবসে গেরুয়া পরলেই ভাল হতো! অন্য এক দল বলছেন, মোটেই না। রাজস্থানের উৎসবে গোলাপি রঙের পোশাকই ছেলেদের আভিজাত্যের প্রতীক। দীর্ঘদিন ফ্যাশন নিয়ে পড়াশোনা করেছেন সমতা পার্টির প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জয়া জেটলি। তিনিও বলছেন, ‘‘রাজস্থানের সনাতন উৎসবে পুরুষদের গোলাপি পাগড়ি পরাটা উঁচু দরের ফ্যাশনের প্রতীক। বিশেষ করে মোদী যেটা পরেছেন সেই ওল্ড রোজ গোলাপিতে হাল্কা রুপোলি ছোঁয়া— সেটা একেবারেই উচ্চকিত নয়। বরঞ্চ খুবই নম্র আবেদনে পূর্ণ, যা ওই অনুষ্ঠানের সঙ্গে মানানসই।’’ একমত ডিজাইনার রাহুল মিশ্র, সুনীত বর্মা আর রিতু বেরি-ও।

Advertisement

গোলাপি রঙ যে মোদীর বেশ পছন্দের, তা আগেও দেখা গিয়েছে। ২০১৩-য় পটনার একটি সভায় মোদী বেবি পিঙ্ক গলাবন্ধ পরেছিলেন। তার পরে বছর দুয়েক আগে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে মোদী একটি গোলাপি পাগড়িই উপহার দিয়েছিলেন। নওয়াজের তখন নাতনির বিয়ে। সেই উপলক্ষে ওই পাগড়ি ছিল মোদীর বিশেষ উপহার। নওয়াজ সেটা পরেওছিলেন। সে বারই কাবুল থেকে ফেরার পথে হঠাৎ নওয়াজের সঙ্গে দেখা করতে যান মোদী। পরের দু’বছরে ভারত-পাক সম্পর্ক নানা রকম ওঠাপড়া দেখেছে। এত দিনে গোলাপি পাগড়ি মোদীর নিজের মাথায় উঠল।

একান্ত মোদীভক্ত এবং বিজেপি শিবিরের জ্যোতিষী গজানন কৃষ্ণ অবশ্য দাবি করছেন, এই রঙ বাছার পিছনে রয়েছে গ্রহ-রাশির অঙ্ক। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমি আগেই ভবিষ্যৎবাণী করেছিলাম প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে যদি মোদী গোলাপি কিম্বা বেগুনি রঙের পাগড়ি পরে যান, তবে মঙ্গল হবে। মানুষ আরও বেশি করে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হবেন।’’

মোদী জ্যোতিষীর কথা মেনেই গোলাপি বেছেছেন কি না, তা অবশ্য নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে রঙটি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে নিশ্চিত। আর এও ঠিক যে, এই ভোট-বাজারে মানুষকে ‘আকৃষ্ট’ করাটা এখন খুবই জরুরি। সে ক্ষেত্রে মহিলাদের পছন্দের রঙ বাছার মধ্যে কোনও বার্তা আছে কি না, সেটাও আলোচনায় উঠে আসছে। কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের গোয়েন্দা শাখার সাম্প্রতিক রিপোর্টে কিন্তু বলা হয়েছে, নোট বাতিলের হয়রানিতে সবচেয়ে বেশি রুষ্ট এটিএম লাইনে দাঁড়ানো গৃহকর্ত্রীরা। নিন্দুকদের দাবি, মোদীর ‘গোলাপি-বার্তা’ আসলে রুষ্ট প্রমীলা ব্রিগেডকে একটা মধুর প্রলেপ দেওয়ার চেষ্টা! আবার কেউ কেউ বলছেন, বাজারে আসা নতুন গোলাপি নোটের কথা মনে করাতেই মাথায় গোলাপি!

প্রধানমন্ত্রী মোদীর পাগড়ির রঙ নিয়ে আলোচনা এত দিন হতো মূলত স্বাধীনতা দিবসের পরে। পরপর তিন বার স্বাধীনতা দিবসে মোদী তিন রকম রঙের পাগড়ি পরে লালকেল্লায় বক্তৃতা দিয়েছেন। প্রথম বার সদ্য জিতে আসার পর লাল। যার ব্যাখ্যা হয়েছিল শৌর্যের প্রতীক হিসাবে। দ্বিতীয় বছর সেটা বদলে গিয়ে হল গেরুয়া-ছোঁয়া হলুদ। তখন ব্যাখ্যা মিলল, ক্ষমতায় বসে হকিকত বুঝে কিছুটা ‘উদার’ হচ্ছেন মোদী। তৃতীয় বারের পাগড়িতে তো বহু রঙের খেলা। বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, এ ভাবে বহুত্ববাদকেই তুলে ধরতে চাইছেন মোদী।

রঙের সেই প্রতীকী ব্যঞ্জনা মাথায় রেখেই এ বারে গোলাপি নিয়ে হইহই করছেন নারী আন্দোলন এবং সমকামী অধিকার আন্দোলনের অনেক কর্মী। তাঁরা দাবি করছেন, মোদী গোলাপি পরে মহিলাদের ক্ষমতায়নের কথা বলতে চেয়েছেন। সমকামীরা বলছেন, মোদী নাকি তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। কেউ কেউ এমনও মনে করছেন, অসহিষ্ণুতার অভিযোগকে সরিয়ে রেখে ৫৬ ইঞ্চির পৌরুষ-অহঙ্কার একটু মোলায়েম করে নিয়ে মোদী এ বার সকলকে কাছে টানার, বিভিন্নতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার বার্তা দিচ্ছেন। তাই এই ‘মেট্রোসেক্সুয়াল’ পোশাক। সবচেয়ে প্রত্যাশিত টুইট-টি করেছেন অমিতাভ বচ্চন। গোলাপি নোট আসার পরেও ‘পিঙ্ক’ ছবির কথা টেনেছিলেন। এ বারে লিখেছেন, ‘‘জয় পিঙ্ক, জয় হিন্দ!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement