সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি রোহিনটন নরিম্যান। ছবি: সংগৃহীত।
বিচারপতি নিয়োগ ও সংবিধানের ‘মূল কাঠামো’ নিয়ে বিতর্কে এ বার কেন্দ্রকে নিশানা করলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি রোহিনটন নরিম্যান। তাঁর মতে, আইনমন্ত্রী হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের রায় মেনে চলা কিরেন রিজিজুর কর্তব্য। আর সরকার যদি বিচারপতি পদে নিয়োগের জন্য সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়ামের সুপারিশ করা নাম নিয়ে দীর্ঘদিন টালবাহানা করে তবে তা ‘গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক’।
সম্প্রতি প্রবীণ আইনজীবী ফলি নরিম্যান বলেন, ‘‘কলেজিয়াম ব্যবস্থার সংস্কার নিশ্চয়ই প্রয়োজন। আইনমন্ত্রীর উচিত অটলবিহারী বাজপেয়ী জমানায় তৈরি বিচারপতি নিয়োগ কমিশন বিলটি খতিয়ে দেখা।’’ সেইসঙ্গে বিচার বিভাগ ও সরকারের মধ্যে আলোচনার প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে বম্বে হাই কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি এম সি চাগলা ও তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মোরারজি দেশাইয়ের কথা উল্লেখ করেন তিনি। আজ সেই এম সি চাগলারই নামাঙ্কিত বক্তৃতায় ফলি-পুত্র প্রাক্তন বিচারপতি রোহিনটন বলেন, ‘‘আমরা কলেজিয়াম ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আইনমন্ত্রীর ক্রুদ্ধ বক্তৃতা শুনেছি। সংবিধানের দু’টি মূল বিষয় তাঁর জানা উচিত। ভারতে অন্তত পাঁচ জন বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ সংবিধানের ব্যাখ্যা করে। সংবিধানের ১৪৪ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সেই ব্যাখ্যা মেনে নেওয়া আইনমন্ত্রীর কর্তব্য। নাগরিক হিসেবে কেউ রায়ের সমালোচনা করতেই পারেন। কিন্তু আইনমন্ত্রী সরকারি পদে রয়েছেন।’’
বিচারপতি রোহিনটনের কথায়, ‘‘যদি নির্ভীক বিচারপতিরা না থাকেন তবে আমরা নতুন এক অন্ধকার যুগে প্রবেশ করব। সরকার যদি বিচারপতি পদে নিয়োগের জন্য কলেজিয়ামের সুপারিশ করা নাম নিয়ে গড়িমসি করে তবে তা গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক। ৩০ দিনের মধ্যে ওই নাম নিয়ে সরকারের অবস্থান জানানোর নিয়ম চালু করা উচিত। তা না হলে সেই সুপারিশই গৃহীত হবে, রাখা উচিত এমন ব্যবস্থাও।’’ অবসর নেওয়ার আগে কলেজিয়ামের সদস্য ছিলেন বিচারপতি রোহিনটন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘কলেজিয়ামেরও উচিত বিচারপতি নিয়োগ বিধির দুর্বল দিকগুলি সম্পর্কে পদক্ষেপ করা।’’
বিচারপতি নিয়োগের পাশাপাশি সংবিধানের কিছু অংশকে ‘মূল কাঠামো’ হিসেবে চিহ্নিত করে তা সংসদীয় সংশোধনের আওতার বাইরে রাখা নিয়ে সরব হয়েছেন উপ-রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়। ১৯৭৩ সালের কেশবানন্দ ভারতী মামলার রায়ে সংবিধানের কিছু অংশকে ‘মূল কাঠামো’ হিসেবে চিহ্নিত করে সুপ্রিম কোর্ট। বিরোধীদের দাবি, সরকার সংবিধানের মূল কাঠামো সংশোধন করতে চায় নরেন্দ্র মোদী সরকার। আর সেই সংশোধনকে চ্যালেঞ্জের ক্ষেত্র সুপ্রিম কোর্টে নিয়োগ করতে চায় পছন্দের লোক।
ধনখড়ের নাম না করে বিচারপতি রোহিনটনের কটাক্ষ, ‘‘১৯৮০ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত সরকার সংবিধানের আওতার বাইরে গিয়ে কাজ করলে তা রুখতে মূল কাঠামোকেই প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন বিচারপতিরা। ৪০ বছর আগে মূল কাঠামোর ধারণাকে দু’বার চ্যালেঞ্জ করার চেষ্টা হয়েছিল। এই ধারণাটি যে চালু রয়েছে সে জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।’’
অন্য দিকে এ দিনও বিচার বিভাগকে নিশানা করেছেন আইনমন্ত্রী কিরেন রিজিজু। সম্প্রতি বিচারপতি হিসেবে প্রস্তাবিত নামে কেন্দ্রের আপত্তির কারণ প্রকাশ করা হয় কলেজিয়ামের তরফে। তার মধ্যে রয়েছে গোয়েন্দা রিপোর্টে পাওয়া তথ্যও। বিষয়টি নিয়ে ফের বিচার বিভাগকে বিঁধে রিজিজুর বক্তব্য, ‘‘জাতীয় স্বার্থে কিছু বিষয় প্রকাশ করা উচিত নয়।’’ তাঁর কথায়, ‘‘গণতন্ত্রে নাগরিকেরাই শেষ কথা। সংিবিধানই পবিত্র গ্রন্থ। বিচারপতিদের ভোটে দাঁড়াতে হয় না। তাই তাঁদের উচিত কাজের মান বজায় রাখা। নাগরিকেরা সবই দেখছেন।’’