ছবি: এপি।
৯৭ বছরের বাবা স্বাধীনতা সংগ্রামী। ছেলে ৩৮ বছর ভারতীয় বায়ুসেনায় কাজ করেছেন। পেয়েছেন রাষ্ট্রপতি পদক। সাম্মানিক ‘ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট’ হিসেবে অবসর নিয়েছেন গত বছর। আর এ বছরই খারিজ তাঁর নাগরিকত্ব! ক্ষুব্ধ, অপমানিত চবিন্দ্র শর্মা ঘিমিরে।
বিশ্বনাথ জেলার বহুবাজারের বাসিন্দা চবিন্দ্র বলেন, “রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের কাছ থেকে পদক পেয়েছি আমি। ৯৭ বছরের বাবা দেশ ও আমায় নিয়ে গর্বিত। কিন্তু এতদিন দেশের সেবা করার পরে এখন আদালতে গিয়ে নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে হবে!” বাবার লিগ্যাসি ডেটা ব্যবহার করে তাঁর ভাই-বোনদের নাম এনআরসিতে ঢুকেছে। কিন্তু চবিন্দ্র কেন বাদ? জবাব নেই! চাকরি করা অবস্থাতেই, প্রথম খসড়ায় তাঁর নাম বাদ পড়ে। নাম ছিল না দ্বিতীয় খসড়াতেও। বাবার ১৯৫১ সালের লিগ্যাসি হাতে তিন বার শুনানিতে গিয়েছিলেন। প্রতিবার এনআরসি কর্মীরা, ভুল স্বীকার করেন। আশ্বাস দেন। অবশ্য স্ত্রী, ছেলে-মেয়ের নাম তালিকাভুক্ত হওয়ায় তিনি খানিকটা নিশ্চিন্ত।
নাগরিকত্বহীনতাকে মেনে নিতে পারছেন না গোর্খা স্বাধীনতা সংগ্রামী তথা অসম কংগ্রেসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য চবিলাল উপাধ্যায়ের নাতনি মঞ্জু দেবীও। তাঁর মতে ‘রহস্যজনক’ ভাবে ডি-ভোটার হওয়ায় খসড়াতেও নাম বাদ পড়েছিল তাঁর। বার বার গিয়েছেন শুনানিতে। ক্ষুব্ধ মঞ্জুদেবীর কথায়, “লাগাতার একই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে আর অর্থহীন, অপমানকর লড়াই করতে করতে আমি ক্লান্ত।” এমনকী তাঁর দুই সন্তানের নামও এনআরসি থেকে বাদ পড়েছে।
খসড়া এনআরসি থেকে লক্ষাধিক গোর্খা পরিবারের নাম বাদ পড়ার পরেই গোর্খা সংগঠনগুলি কেন্দ্রের দ্বারস্থ হয়। গত বছর কেন্দ্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানিয়ে দেয়, ১৯৫০ সালের ভারত-নেপাল চুক্তি অনুযায়ী ভারতে থাকা গোর্খাদের নাগরিকত্বে সন্দেহ করে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে পাঠানো চলবে না। কিন্তু বিজ্ঞপ্তি কাজে রূপায়ণ করেনি অসম সরকার। ভোটার তালিকায় গোর্খাদের নামের পাশ থেকে সরানো হয়নি ‘ডি’। ফলে বিশ হাজারের বেশি গোর্খা পরিবারের নাম এমনিতেই বাদ। বাদ পড়েছেন ডি-ভোটার না হওয়া অনেক পরিবারও।
ভারতীয় গোর্খা পরিষদের অসমের মুখপাত্র নন্দ কিরাতি দেওয়ান বলেন, “বাদ পড়া গোর্খার সংখ্যা লক্ষাধিক হতে পারে। আমরা গত সপ্তাহেই স্বরাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে দেখা করেছি।’’ তাঁর দাবি, অসম সরকার গোর্খাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নিক।