মুখোমুখি: প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানের শেষে রাষ্ট্রপতি ভবনে নরেন্দ্র মোদী ও রাহুল গাঁধী। শুক্রবার দিল্লিতে। ছবি: রয়টার্স।
এক থেকে চার। তা নিয়ে বিতর্কের পরেও আসন পিছিয়ে গেল ছয় নম্বর সারিতে। বিকেলে অবশ্য পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার একটা চেষ্টা হল। কিন্তু ক্ষোভ তাতে মিটলো কই!
রাজপথে প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারেডে দেশের প্রধান বিরোধী দলের সভাপতির বসার আসন এ বারে পিছনো হল। রাহুল গাঁধী বসলেন একেবারে ষষ্ঠ সারিতে। ক্ষুব্ধ কংগ্রেস বলছে, এ হল নরেন্দ্র মোদী সরকারের সস্তা রাজনীতি আর অহঙ্কারের নমুনা। স্বাধীনতার পর এই প্রথম কংগ্রেসের সভাপতিকে প্রথম সারি থেকে হটিয়ে বসানো হল ছয় নম্বরে। আর সরকারের যুক্তি— ‘প্রোটোকল’। কিন্তু তাতেও অঙ্ক মিলছে কোথায়?
বিতর্ক দানা বাধছিল কাল থেকেই। প্যারেডে কংগ্রেস সভাপতির বসার আসন প্রথম সারি থেকে চতুর্থে নিয়ে যাওয়া হয়। কংগ্রেস হইচই করার পরে রাতে জানানো হয়— চতুর্থ নয়, ষষ্ঠ সারিতে বসবেন রাহুল। অথচ গত বছর পর্যন্ত কংগ্রেস সভানেত্রী হিসাবে প্রথম সারিতেই বসে এসেছেন সনিয়া গাঁধী। রাহুল অবশ্য কালই জানিয়ে দেন, তিনি যাবেন। আজ ষষ্ঠ সারিতেই রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদের পাশে বসে প্যারেড দেখেন তিনি। তবে দিনভর হইচইয়ের পরে সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি ভবনে ‘অ্যাট হোম’ অনুষ্ঠানে ক্ষত ঢাকার চেষ্টা করেছে সরকার। সেখানে ভিভিআইপি ব্লকেই বিদেশি অভ্যাগতদের পাশাপাশি রাহুল ও মনমোহনের আসন নির্দিষ্ট করা হয়। অন্য সকলের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁদের সঙ্গেও করমর্দন করে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
রাহুল অবশ্য সকালের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। বিকেলে সাংবাদিকরা এ নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করলে রাহুল বলেন, ‘‘এ সবকে আমি পরোয়া করি না!’’ তবে ক্ষিপ্ত কংগ্রেস। দলের প্রধান মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘সস্তা রাজনীতি। অহঙ্কারী শাসকরা সব প্রথাকে শিকেয় তুলে জাতীয় উৎসবেও কংগ্রেস সভাপতিকে ষষ্ঠ সারিতে বসিয়েছে।’’
কিন্তু সরকারের বক্তব্য, প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ‘প্রোটোকল’ মেনেই আসন নির্দিষ্ট করে। এ বারে দশ জন আসিয়ান নেতা আসায় আসনের বিন্যাস বদলাতে হয়েছে। তা ছাড়া লোকসভা বা রাজ্যসভায় কে কত প্রবীণ, তার ভিত্তিতে এ’টি নির্ধারণ হয়। রাহুল গাঁধী বিরোধী দলনেতাও নন। এ বারেও সনিয়া গাঁধীর জন্য প্রথম সারি বরাদ্দ ছিল। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহও প্রথম সারিতে বসেছেন। কংগ্রেসের পাল্টা প্রশ্ন, এই যুক্তিতে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ কী করে প্রথম সারিতে বসেন? গত বার তিনি শুধু এক জন বিধায়ক ছিলেন। আর প্রথম বারের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়কে সস্ত্রীক রাহুলের আগের সারিতে বসে থাকতে দেখা গিয়েছে আজও!
কংগ্রেসের ক্ষোভের জবাব দিতে এখন বিজেপি হঠাৎই দলে কোণঠাসা লালকৃষ্ণ আডবাণীর প্রসঙ্গ তুলছে। দলের এক নেতার মন্তব্য, ‘‘২০১২ সালে ২৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি ভবনের অনুষ্ঠানে তৎকালীন এনডিএ-র চেয়ারপার্সন লালকৃষ্ণ আডবাণীর জন্য আসনই রাখা হয়নি।’’ কংগ্রেসের বক্তব্য, সঙ্গে সঙ্গে সেই ভুল শুধরে তাঁকে যথাযথ আসন দেওয়া হয়। বিজেপি কি এর বদলা নিতে চাইছে?
কংগ্রেসের আরও অভিযোগ— শুধু আসন রাজনীতিও নয়, প্রথা অমান্য করে রাহুলের সঙ্গে বিদেশি রাষ্ট্রনেতাদের দেখা করতেও দিচ্ছেন না মোদী সরকার। কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মা বলেন, ‘‘সাধারণত কোনও বিদেশি নেতা ভারত সফরে এলে বিদেশ মন্ত্রকই বিরোধী নেতার সঙ্গে তাঁর আলোচনার আয়োজন করে। কিন্তু ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী হোন বা এখন ভারত সফরে থাকা আসিয়ানের রাষ্ট্রপ্রধানরা, কারও সঙ্গে রাহুলের বৈঠক কর্মসূচিতে রাখেনি সরকার।’’