প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েট হয়ে বেরনো ৬০ শতাংশের বেশি ছেলেমেয়ে চাকরিই পাচ্ছেন না। অল ইন্ডিয়া কাউন্সিল ফর টেকনিক্যাল এডুকেশন (এআইসিটিই)-এর সম্প্রতি এক সমীক্ষায় এই উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতি বছর সারা দেশ থেকে ৮ লক্ষ ছাত্রছাত্রী ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে বেরোচ্ছেন। অথচ তাঁদের বেশির ভাগই চাকরি জোটাতে পারছেন না। এই ভয়াবহ পরিস্থিতির পিছনে কি তা হলে অধিকাংশ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষকতার মান দায়ী? এই প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে।
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ব্যাঙের ছাতার মতো ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ গড়ে উঠছে গত কয়েক বছর ধরে। ভাল সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়ার সুযোগ না পেয়ে এ সব কলেজগুলোতে ভর্তি হচ্ছে ছাত্ররা। শিক্ষাবিদদের মতে, দুটো দিক থেকে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এক- অনেক খারাপ রেজাল্ট করা ছাত্রছাত্রীও অভিভাবকদের টাকার জোরে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে আসছেন। এঁদের বড় অংশটাই নিজেদের যোগ্যতা মান বাড়াতে ব্যর্থ হচ্ছেন। দুই- অনেক কলেজের পরিকাঠামো বা শিক্ষাদানের মানও খুব দুর্বল।
সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, এক শতাংশেরও কম ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রছাত্রী সামার ইন্টার্নশিপে অংশ নিচ্ছেন। এ দেশে মোট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সংখ্যা সাত হাজারের কিছু বেশি। ইঞ্জিনিয়ারিং সংক্রান্ত যত কর্মশালা হয়, তাঁর মাত্র ১৫ শতাংশ হয় তিন হাজারের বেশি ইনস্টিটিউট মিলিয়ে। বোঝাই যাচ্ছে এখানেই মানের একটা বিশাল ফারাক তৈরি হয়ে যায়। যার জেরে দেশের বেশির ভাগ কলেজ থেকে যে সব ছেলেমেয়ে পাশ করে বেরোচ্ছেন, তাঁরা অন্যদের থেকে অনেক পিছিয়ে থাকছেন। কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রেও সমস্যা তৈরি হচ্ছে। ফলে ইঞ্জিনিয়ারিং বেকারের সংখ্যা প্রতি বছর উত্তরোত্তর বাড়ছে।
এই সমস্যা দূর করতে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক ন্যাশনাল এন্ট্রান্স একজামিনেশন ফর টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউশন (এনইইটিআই) বা নীতি-র ব্যবস্থা করতে চলেছে। এর মাধ্যমে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষকদের ট্রেনিং দেওয়ার পাশাপাশি, এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীদের ইনডাকশন এবং প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক সূত্রে খবর, এনইইটিআই বা নীতি-র পরীক্ষা হবে ন্যাশনাল টেস্টিং সার্ভিস (এনটিএস)-এর তত্ত্বাবধানে। ২০১৮-র জানুয়ারিতে এই পরীক্ষা চালু হবে। মেডিক্যাল কোর্সের জন্যও চালু করা হচ্ছে ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি কাম এন্ট্রান্স টেস্ট। বছরে একাধিক বার হবে এই পরীক্ষা। দেশের বিভিন্ন আইআইটি-র সহযোগিতায় প্রশ্নপত্র তৈরি করা হবে।
বর্তমানে ৪০ শতাংশ ইঞ্জিনিয়ার চাকরি পাচ্ছেন। এআইসিটিই-র লক্ষ্য হল এটাকে ৬০ শতাংশে নিয়ে যাওয়া। পাশাপাশি, ৭৫ শতাংশ ছাত্রছাছাত্রী যাতে সামার ইন্টার্নশিপে অংশ নিতে পারেন সেই ব্যবস্থা করা। এ ছাড়া ২০২২-এর মধ্যে সব কলেজে যাতে যথেষ্ট সংখ্যায় কর্মশালার আয়োজন করা যায় সে দিকটাও লক্ষ্য রাখবে এআইসিটিই।
এখন থেকে সমস্ত ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটকে প্রতি বছর কারিক্যুলামে পরিবর্তন আনতে হবে। এবং এই পদ্ধতি প্রতি বছর ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছে এআইসিটিই।
আরও পড়ুন: হেল্থ ড্রিঙ্ক বানাতে তিন কোটি টাকা সাহায্য দশম শ্রেণির তিন ছাত্রকে!