‘কি’ থেকে কী হয়! সংস্কার নিয়ে চিন্তায় পুরীর প্রশাসন

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে মন্দিরে পান্ডারাজ ঠেকানোর মতো রত্নভাণ্ডারের ভিতরের জরাজীর্ণ কুঠুরির সংস্কার জরুরি বলে মনে করেন মন্দিরের মুখ্য প্রশাসক। তখন স্থাপত্য বিশারদদের ভিতরে ঢুকতে হবে। কিন্তু রথের আগে সে-সব সিদ্ধান্ত ঝুলিয়ে রাখাই বাস্তববুদ্ধি বলে মনে করছে প্রশাসন।

Advertisement

ঋজু বসু

পুরী শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৮ ০৪:২১
Share:

রথযাত্রার প্রস্তুতি। ফাইল চিত্র।

ফেলুদা-কাহিনি ‘ছিন্নমস্তার অভিশাপ’ মনে পড়ে যাচ্ছে এই জগন্নাথ-ধামে এসে।

Advertisement

কথায় কথায় হেঁয়ালিতে চৌকস মহেশবাবু চাবি হারানোর দুঃখে নাতনির সঙ্গে মজা করেছিলেন, ‘কি’ হারিয়েছে, ‘কি’ পাচ্ছি না! রত্নভাণ্ডারের চাবি প্রসঙ্গ উঠলেই রক্ষণাত্মক মন্দির প্রশাসনের সরকারি কর্তাদের ভাবগতিক খানিকটা তেমনই। ‘কি’ পাইনি তার হিসাব মেলাতে রাজি নন কেউই।

তাঁদের আর কী দোষ! এ মাসের শেষে জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রা, তারপরেই রথ। বচ্ছরকার এই পার্বণ নির্বিঘ্নে পার করা স্বাভাবিক ভাবেই অগ্রাধিকার পাচ্ছে। জগন্নাথ মন্দির সংস্কারের লক্ষে গত ৪ এপ্রিল রত্নভাণ্ডার পরিদর্শনের নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। তখনই নজরে আসে, ‘বাহির ভাণ্ডার’-এর তিনটি চাবি, পুরীর গজপতি রাজা, মন্দির প্রশাসন এবং রত্নভাণ্ডারের ভারপ্রাপ্ত সেবায়েত ভাণ্ডার মেকাপের কাছে থাকলেও, ভিতর ভাণ্ডার’-এর চাবি নেই। সে-চাবি থাকার কথা ছিল কালেক্টরের জিম্মায়, সরকারি ট্রেজারি-তে। মন্দির লাগোয়া প্রশস্ত অফিসঘরে বসেই আনন্দবাজারকে সে-দিনের চাবি-কাণ্ডের কথা বলছিলেন মুখ্য প্রশাসক, আইএএস-কর্তা প্রদীপ জেনা। তাঁর কথায়, ‘‘ভিতর ভাণ্ডার খুলছে না-দেখে মন্দিরের ভিতরের গুচ্ছের পুরনো চাবি নিয়ে আসা হয়েছিল। তা তালার সঙ্গে মেলেনি। কিন্তু আমি সিদ্ধান্ত নিই, রত্নভাণ্ডারের ভিতরের কুঠুরি ভাঙার দরকার নেই।’’ কারণ, জাফরি-কাটা দরজা দিয়ে আলো ফেলে ভিতর-ভাণ্ডারের ছবিটা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলেন স্থাপত্যবিশারদ ইঞ্জিনিয়াররা। দ্বিতীয়ত, একবার রত্নভাণ্ডারের ভিতরের দ্বার ভাঙলে, সব সম্পদের খতিয়ান নিতে হত। এখনই ওই গুরুদায়িত্ব বহন করতে চাননি মুখ্য প্রশাসক।

Advertisement

মন্দিরের ১৯৭৮ সালের নথি অনুযায়ী, ২২১ কোটি টাকার সোনার অলঙ্কার, ১৯৭ লক্ষ টাকার রুপোর সামগ্রী রয়েছে রত্নভাণ্ডারে। এর মধ্যে ভিতর ভাণ্ডারে ৩৬৭টি উপকরণ ৪৩৬৪ ভরির হবে। ভিতর ভাণ্ডারের সামগ্রী সাধারণত জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রার কাজে লাগে না। মন্দিরের রত্নভাণ্ডার সাব-কমিটির সদস্য প্রবীণ সেবায়েত রামচন্দ্র দয়িতাপতির বাবা নরসিংহ দয়িতাপতি ১৯৭৮-এ বন্ধ রত্নভাণ্ডারের খতিয়ান নিয়েছিলেন। ১০০ বছর আগে রামনবমীর পরে মন্দিরের প্রভুর রঘুনাথ বেশ দেখা যেত। এখন সে-অনুষ্ঠান বন্ধ। সেই রঘুনাথ ভাণ্ডারের অলঙ্কারও ভিতর ভাণ্ডারে তালাবন্ধ। সাবেক রাজাদের যুদ্ধজয়ের মুকুটটুকুটও না কি রয়েছে কিছু।

সেবায়েতকুল থেকে আইএএস-কর্তা এক বিষয়ে একমত। পুরনো অব্যবহৃত চাবি যেখানেই থাকুক, জগন্নাথের গুপ্তধনের ভাঁড়ারে হাত দেওয়া সোজা নয়। কেন? রত্নভাণ্ডারের বাহির ভাণ্ডার খুলতেই রাজা, মন্দির প্রশাসন ও সেবায়েত ভাণ্ডার মেকাপ-কে একজোট হতে হয়। বাহির ভাণ্ডারে জগন্নাথের বিভিন্ন উৎসবের সময়ের সাজসজ্জা রাখা। নিত্য সেবায় ব্যবহারের কিছু সামগ্রী, যেমন সোনার জিভছোলা, স্নানের রুপোর ঘড়াটড়া ভাণ্ডার মেকাপ আগে থেকে অনুমতি নিয়ে তাঁর অফিসঘরে বার করে রাখেন। প্রদীপবাবুর কথায়, ‘‘জগন্নাথের সংসারে কুটোটি নড়লেও রিলে সিস্টেমে তার খবর ছড়াবেই। একা দরজা খুলে কিছু সরানো অসম্ভব।’’ ভাণ্ডার মেকাপ কিছু বার করে দিলেও কাজ মিটলে অন্য সেবায়েতদের হাত ঘুরে তা ফিরে আসবে।

তবে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে মন্দিরে পান্ডারাজ ঠেকানোর মতো রত্নভাণ্ডারের ভিতরের জরাজীর্ণ কুঠুরির সংস্কার জরুরি বলে মনে করেন মন্দিরের মুখ্য প্রশাসক। তখন স্থাপত্য বিশারদদের ভিতরে ঢুকতে হবে। কিন্তু রথের আগে সে-সব সিদ্ধান্ত ঝুলিয়ে রাখাই বাস্তববুদ্ধি বলে মনে করছে প্রশাসন।

‘কি’ থেকে কী হয় কে বলতে পারে!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement