নতুন ১০০ টাকার নোটের চেহারা।
ট্যাক্সির ভাড়া। আনাজের দাম। মুদিখানায় টুকিটাকি। রোজ যে ‘বড়’ নোটের খোঁজে মধ্যবিত্ত সম্ভবত সবচেয়ে বেশি বার পকেটে হাত দেয়, তা ১০০ টাকার নোটই। কিন্তু এখন সেই ১০০ টাকার নতুন নোট দেশের সমস্ত এটিএমে পুরোদস্তুর পেতে অপেক্ষা করতে হবে প্রায় এক বছর। বিশেষত গ্রাম এবং মফস্সলে দেরি হবে বেশি।
এটিএমে এই বন্দোবস্ত করতে সরকারের খরচ হবে অন্তত ১০০ কোটি টাকা। সৌজন্যে ওই নোটের মাপ বদল। যা দেখে অনেকেরই প্রশ্ন, খরচ যখন সরকার সেই করছেই, এ বিষয়ে আর একটু পরিকল্পনা করে এগোনো যেত না কি? কমানো যেত না সাধারণ মানুষের হয়রানি?
নোট বাতিলের পর থেকে একের পর এক নতুন নোট এনেছে মোদী সরকার। তার মধ্যে ২০০০, ৫০০ ও ২০০ টাকার নোট এটিএমে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে গিয়েও আমজনতার কাছে সময় চাইতে হয়েছে। বলতে হয়েছে, এটিএম মেশিনের ভিতরে যে ট্রে-তে টাকা থাকে, নতুন নোট এলে কিংবা কোনও নোটের মাপ বদলালে, সেই ট্রে-ও পাল্টাতে হয়। যাকে বলে ‘রি-ক্যালিব্রেশন’। এবং তা করতে হয় প্রতি মেশিনে আলাদা আলাদা ভাবে। তাই এই কাজে সময় লাগে। একই সঙ্গে, তা খরচসাপেক্ষ। গত বছরের অগস্টে ২০০ টাকার নতুন নোট আনা হয়েছিল। দেশ জুড়ে এটিএমে তার রি-ক্যালিব্রেশন এখনও শেষ হয়নি।
অনেকেরই প্রশ্ন, তা হলে এত ঘন ঘন নোট বদলের দরকার কি?
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সূত্রের দাবি, যত বড় অঙ্কের নোট, তা মাপে তত বড়। এই ফর্মুলা মেপেই নোট ছাপা হয়। তাতে সুবিধা হয় দৃষ্টিহীনদের। এ কথা মাথায় রেখেই সমস্ত নতুন নোটের প্রস্থ ৬৬ মিলিমিটার। ফারাক দৈর্ঘ্যে। ২০০০-এর তুলনায় ৫০০ টাকার নোট লম্বায় ছোট। তার থেকে ছোট ২০০-র নোট। এখানেই দলছুট পুরনো ১০০। ২০০ তো বটেই, মাপে তা ৫০০-র নোটের থেকেও বড়। তাই সেই মাপ পাল্টানো ছাড়া উপায় ছিল না। মাপজোক বদলালে, জাল নোটের কারবারিরাও অসুবিধায় পড়বেন বলে সূত্রের দাবি।
কিন্তু রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এক প্রাক্তন কর্তার মতে, ‘‘একসঙ্গে নতুন ২০০ ও ১০০ টাকার নোট আনলেই তো বারবার ট্রে-র মাপ বদলানোর ঝক্কি এড়ানো যেত। তা না করে খুচরোর সমস্যা মেটাতে হঠাৎ চালু করে দেওয়া হল ২০০ টাকার নোট!’’ অনেকের আবার প্রশ্ন, নোটের নতুন মাপ জাল করতেই বা সময় লাগবে ক’দিন?
প্রশ্ন উঠছে, ‘সামান্য’ ট্রে পাল্টাতে এক বছর লাগা নিয়েও। সে প্রসঙ্গে এটিএম শিল্পের সংগঠন ক্যাটমি-র এক কর্তা বলেন, ‘‘এটা নির্ভর করে বাজারে নোটের জোগানোর উপরেও। ট্রে-র মাপ পাল্টাল। কিন্তু বাজারে নতুন নোট যথেষ্ট এল না। তাতে লাভ হবে না। বরং তত দিন আগের মাপের ট্রে থাকলে, পুরনো ১০০ মিলবে।’’
ক্যাটমি-র অধিকর্তা ভি বালসুব্রহ্মণ্যন বলেন, ‘‘এটিএমে নতুন নোটের জোগানে ক্যাশ এজেন্সি ও ইঞ্জিনিয়ারকে সঙ্গে নিয়ে যেতে হয়। ব্যাঙ্কের সহযোগিতা লাগে। দিনে ১৫-২০টির বেশি এটিএমে কাজ হয় না।’’ দেশে এটিএম রয়েছে ২ লক্ষ ৩৭ হাজারটি। অর্থাৎ, খুব দ্রুত কাজ হলেও ৬ থেকে ৯ মাস লাগবেই।
এমনিতেই দেশে এটিএমের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। প্রতি এক লক্ষ মানুষের জন্য ৮.৯টি। যেখানে দক্ষিণ আফ্রিকায় তা ৬০টি, ব্রাজিলে ১২০। তার উপর এখন টাকা তোলা-সহ সমস্ত লেনদেন এটিএম আর নেট ব্যাঙ্কিংয়েই সারতে বলছে ব্যাঙ্ক। এই পরিস্থিতিতে একশোর নোট ঠিকঠাক পেতে এক বছর! বিরোধী নেতার কটাক্ষ, ‘‘একশোয় একশো পেতে তা হলে আরও এক বছর। অচ্ছে দিন তো সবুরেই মেলে। তাই না?’’