উল্টোরথের শোভাযাত্রা। বুধবার পুরীতে। পিটিআই
স্মরণাতীত কালে এমনটা কবে হয়েছে, মনে পড়ছে না বর্ষীয়ান সেবায়েতদের। তখন বুধবার বেলা একটা কুড়ি। রীতিমাফিক বলভদ্রের রথ তালধ্বজ, সুভদ্রার দর্পদলনের পরে জগন্নাথদেবের রথ নন্দীঘোষও গুন্ডিচা মন্দির থেকে উল্টোপথে বাহুড়া যাত্রায় অগ্রসর হল।
পুরীতে বৃষ্টি হয়নি উল্টোরথে। তবে রথযাত্রার মতো উল্টোরথও পর্যাপ্ত শৃঙ্খলা মেনেই সম্পন্ন হয়েছে বলে দিনশেষে সন্তুষ্ট ওড়িশা প্রশাসন। এক-একটি রথ টানার সময়ে দূরত্ব রেখে সর্বাধিক ৪০০ জন সেবায়েতের উপস্থিতি ছাড়াও রথ চলার সময়ে ভিতরে দশ জনের বেশি যাতে না-ওঠেন, সে-দিকে নজর রাখা হয়। তবে বিগ্রহের রথারোহণ (পাহুন্ডি) বা অন্য কিছু আচারঅনুষ্ঠানের সময়ে যে দূরত্ব রাখা যাবে না তা আগেই বুঝিয়ে বলে প্রশাসন তথা মন্দির কর্তৃপক্ষ। এটা মাথায় রেখেই সেবায়েত তথা পুলিশপ্রশাসনের আধিকারিকদের করোনা-পরীক্ষা করানোর সতর্কতা বজায় রাখা হয়েছিল।
জগন্নাথদেবের রথ শ্রীমন্দিরে পৌঁছতে অবশ্য কিছুটা সময় লেগেছে। বড় দান্ড বা রথযাত্রার তিন কিলোমিটার পথ পেরোতে বিকেল পাঁচটা লাগে। জগন্নাথের রথে করেই পুরো পথ আসেন প্রবীণ সেবায়েত তথা বড়গ্রাহী (মনিটার) জগন্নাথ দয়িতাপতি। তিনি বলেন, ‘‘প্রথামাফিক রথ ফিরতি পথের মাঝখানে এক ঘণ্টা দাঁড়িয়েছিল। তখন গজপতি মহারাজ আসেন। তা ছাড়া মন্দির থেকে লক্ষ্মীদেবী এলে লক্ষ্মীনারায়ণ ভেটের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।” আর এক জন বড়গ্রাহী রামচন্দ্র দয়িতাপতিও প্রথমে বলভদ্র ও পরে জগন্নাথদেবের রথে ছিলেন। তিনি বলেন, “পুরীর সাধারণ মানুষ সহযোগিতা করেছে। কেউ রথ দেখতে ভিড় করেননি এতে সুবিধা হয়েছে।”
বাস্তবিক শ্রীক্ষেত্রে এখন কার্ফু। রথযাত্রার পরে গুন্ডিচায় জগন্নাথদর্শনের চেষ্টায় কয়েক জন ভক্তকে নিরস্ত করতে লাঠি চালানোর ঘটনাও ঘটেছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাই এ দিন বড় দান্ডের লাগোয়া বাড়ির ছাদে ওঠাতেও নিষেধ ছিল। পুরীর এক পুলিশকর্তা বলেন, “লাগোয়া বাড়িগুলিতে যাতে পুরীর অন্যত্র থাকা আত্মীয়েরা আসতে না-পারেন, তাই আমরা সতর্ক ছিলাম। এ সব ভেবেই বাড়ির ছাদ, বারান্দাতেও কাউকে দাঁড়াতে বারণ করা হয়।”
তবে শ্রীমন্দির পর্যন্ত পৌঁছলেও জগন্নাথদেবের মন্দিরের রত্নবেদীতে শনিবার ফেরার কথা। আজ, বৃহস্পতিবার জগন্নাথদেব সুনাবেশ অনুষ্ঠানে স্বর্ণালঙ্কারে ভূষিত হবেন। কাল, শুক্রবার অধরপানা। শ্রীবিগ্রহের অধর পর্যন্ত তিনটি হাঁড়িতে সর-রাবড়ি রেখে পুজো হবে। শনিবার নীলাদ্রি বিজের আচারের পরে লক্ষ্মীর মানভঞ্জন করে শ্রীমন্দিরে ঢুকবেন প্রভু জগন্নাথ। সে-দিন মন্দিরে রসগোল্লাভোগ হবে।
অন্য বারের মতো সবই হবে, শুধু সেবায়েত ও প্রশাসনের কর্তব্যরত আধিকারিক ছাড়া কারও ধারেকাছে ঘেঁষার হুকুম নেই।