রতন টাটার সঙ্গে গোয়া। ছবি সৌজন্য ইনস্টাগ্রাম।
অফিসে ঢুকতেই চমকে গিয়েছিলেন মহিলা সাংবাদিক। যাঁর সাক্ষাৎকার নিতে এসেছেন তাঁর ঠিক পাশের চেয়ারটিতেই একেবারে ‘রাজা’র মতো বসে আছে একটি কুকুর। সাদা-কালো গায়ের রং। নিস্পৃহ চোখে তাকিয়ে রয়েছে অফিস ঘরের খোলা দরজার দিকে। যেন কড়া নজরে ‘মেপে নেবে’ আগন্তুককে!
সাংবাদিক যাঁর সাক্ষাৎকার নিতে গিয়েছিলেন তিনি শিল্পপতি রতন টাটা। অফিসের বাইরে অপেক্ষা করছিলেন মহিলা। সে সময়ই তার নজরে আসে রতন টাটার পাশের চেয়ারে কুকুরটি বসে রয়েছে। সাংবাদিককে ভিতরে আসতে বলা হল। কিন্তু কুকুরে তাঁর ভীষণ ভয়। আর টাটার পাশে বসে থাকা সেই কুকুরও আগন্তুককে দেখে একটু সচকিত হয়ে উঠেছিল। রতন টাটার চেয়ারম্যান শান্তনুকে ডেকে নিজের ভয়ের কথা বলেন সাংবাদিক। কোনও ভাবে সেই কথাটা কানে গিয়েছিল রতনের।
সাংবাদিকের কথা শুনে মৃদু হেসেছিলেন তিনি। তার পরই পাশে বসা কুকুরটির দিকে ঘুরলেন এবং ঠিক যেমন এক জন মানুষের সঙ্গে কথোপকথন হয় সেই ভঙ্গিতে তাকে বললেন, ‘গোয়া, উনি তোমাকে দেখে ভয় পাচ্ছেন। একদম ভাল ছেলের মতো চুপ করে বসে থাকবে, কেমন!’
মাত্র কয়েকটি কথা। আশ্চর্যজনক ভাবে একেবারে শান্ত হয়ে বসে রইল কুকুরটি। সাংবাদিক বলেন, “৩০-৪০ মিনিট ওই ঘরে ছিলাম। গোয়া এক বারের জন্যও আমার ধারেকাছে ঘেঁষেনি! এ রকম কখনও আগে আমি দেখিনি। সত্যিই আশ্চর্য হয়েছিলাম।”
গোয়া। রতনের সব সময়ের সঙ্গী। না, কোনও বিদেশি প্রজাতির কুকুর নয়। সে একটি পথকুকুর। টাটা গ্রুপের আন্তর্জাতিক সদর দফতর বম্বে হাউসে পথকুকুরদের দেখাশোনা করা হয়। তাদেরই এক জন গোয়া। তবে সবাইকে ছাপিয়ে রতনের সবচেয়ে প্রিয় হয়ে উঠেছে এই কুকুরটি। তাঁর সব সময়ের সঙ্গীও বটে।
গোয়া পথকুকুর হলেও তাঁর গুরুত্ব অনেক বেশি। সাংবাদিককে রতন বলেন, “গোয়া একটি পথকুকুর। ও আমাদের ‘দত্তক’ নিয়েছিল। পরে ওকে আমরা দত্তক নিই।” গোয়া সব সময়ই রতনের অফিসে থাকে। তাঁর পাশের চেয়ারেই ওর জায়গা। এমনকি রতন কোনও আলোচনা বা বৈঠক করলেও সেখানে থাকে গোয়া।
রতন যে পশুপ্রেমী সেটা কারও অজানা নয়। গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর তাঁর একটি টুইট করা ছবি সকলের হৃদয় জিতে নিয়েছিল। ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি পড়ছিল, এক ব্যক্তিকে দেখা গিয়েছিল বৃষ্টিভেজা একটি পথকুকুরকে নিজের ছাতার তলায় আশ্রয় দিয়েছেন। বৃষ্টির জল থেকে নিজেদের বাঁচাতে আড়াল ভাগাভাগি করে নিয়েছিলেন। সেই ছবি ভাইরাল হয়। পরে জানা যায়, ওই ব্যক্তি টাটা সংস্থার এক জন কর্মী।
ছবির সঙ্গে একটি লাল রঙের হৃদয় ‘ইমোজি’ দিয়ে রতন লিখেছিলেন, ‘এই বর্ষায় আরাম ভাগাভাগি। তাজ হোটেলের এই কর্মী বেশ সহৃদয়। তাঁর ছাতাটি এক ভিজে যাওয়া পথকুকুরের সঙ্গে ভাগ করে নিচ্ছেন। ব্যস্ত মুম্বইয়ের একটি হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া মুহূর্ত। এমন দরদ পথের প্রাণীগুলিকে অনেক দূরে এগিয়ে দিতে পারে।’