স্মৃতিতে: মুম্বই হামলায় নিহত পুলিশকর্মীদের শ্রদ্ধা। মঙ্গলবার মুম্বইয়ে পুলিশ স্মৃতিসৌধে। পিটিআই
‘‘আহত হয়েছি। কিন্তু ছিটকে যাইনি।’’ ২৬/১১ হামলার পরে ঠিক এটাই বলেছিলেন রতন টাটা। জঙ্গি-তাণ্ডবের আঁচ তখনও নেভেনি পুরোপুরি। দমবন্ধ তিন দিনের হামলা শেষ হতেই বুলেটে ছারখার তাজ হোটেলের গেটে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। ১১ বছর আগেকার নিজের সেই ছবি দিয়েই রতন টাটা আজ টুইট করলেন, ‘‘জীবনের অপচয় আজও ব্যথা দেয়। নির্মম ভোগান্তি কিছুতেই ভোলার নয়। তবু এত কিছুর পরেও মুম্বইয়ের অদম্য মানসিকতা, একতার কথা ভাবলে গর্ব হয়।’’ তার পরেই অশীতিপর শিল্পপতি ফের লিখলেন, ‘‘আহত হয়েছি। কিন্তু আমরা হারিয়ে যাইনি।’’
২৬/১১-র ১১তম বার্ষিকীকে আজ নিহতদের উদ্দেশে সংসদে শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ২০০৮-এ টানা তিন দিন শহরের একাধিক হোটেল, রেস্তরাঁ, স্টেশনে লস্কর হামলায় অন্তত ১৬৬ জনের প্রাণ গিয়েছিল। আহত হন শতাধিক। আজ মুম্বইয়ে পুলিশ স্মৃতিসৌধে মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল ভগৎ সিংহ কোশিয়ারীর সঙ্গে নিহতদের স্মরণ করেন দেবেন্দ্র ফডণবীস। তখনও তিনি মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেননি। উপমুখ্যমন্ত্রী পদে বহাল অজিত পওয়ারও। তা-হলে কেন তাঁকে দেবেন্দ্রর সঙ্গে দেখা গেল না— প্রশ্ন উঠতে থাকে। তার পরে দিনভর জল গড়িয়েছে মহা-নাট্যের। নেটিজ়েনের একটি অংশকে কিন্তু দেখা গেল— মরাঠা অঙ্কে নয়, তাঁরা মজে ২৬/১১-র স্মৃতিচারণেই। সেই সূত্রে ভাইরাল হল রতন টাটার টুইটও। ২০০৮-এর ওই হামলায় তাজ হোটেলেই প্রাণ গিয়েছিল ৩১ জনের। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়েও বন্ধ হয়নি এই হোটেল। ভোল পাল্টে হাসপাতাল হয়। ২৬/১১-র ধাক্কায় তাজ কিন্তু পুরো এক মাস বন্ধ ছিল। টাটা আশ্বাস দিয়েছিলেন ঘুরে দাঁড়ানোর। তার পর অংশত খুললেও, আরও আধুনিক নিরাপত্তায় মুড়ে তাজের ঘুরে দাঁড়াতে সময় লেগেছিল ২১ সপ্তাহ। আজ তাই শুধু শোকপ্রকাশ নয়, ২৬/১১ স্মরণে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ই বেশি করে ধরা পড়ল টাটার টুইটে।
পাকিস্তানকে নিশানায় রেখে আমেরিকা-ইজ়রায়েল আজ ফের ২৬/১১ হামলার তীব্র নিন্দা করেছে। দু’দেশেরই ছ’জন করে নাগরিকের প্রাণ গিয়েছিল মুম্বইয়ে। মার্কিন বিদেশসচিব মাইক পম্পেয়ো আজ ওয়াশিংটনে এক সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত মুম্বই হামলার মূল ষড়যন্ত্রকারীদের শাস্তি হল না। যাঁরা হামলার শিকার হয়েছিলেন, তাঁদের প্রতি সুবিচার হল না এত দিনেও।’’ ইজ়রায়েলেরও দাবি, হামলার মূল চক্রীরা ১১ বছর পরেও বুক ফুলিয়ে ঘুরছে পাকিস্তানে। তাদের শাস্তির দাবিতে এবং সন্ত্রাস দমনে পাক নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে ওয়াশিংটনে পাক দূতাবাসের সামনে আজ বিক্ষোভও দেখায় ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের বেশ কয়েকটি সংগঠন।