বৃহস্পতিবার নরিম্যান পয়েন্টে এনসিপিএ লনে কাচের বাক্সে শায়িত রয়েছে রতন টাটার দেহ। ছবি: রয়টার্স।
মুম্বইয়ের ওরলিতে পারসিদের অন্ত্যেষ্টিস্থলে বৃহস্পতিবার বিকেলে শেষকৃত্য সম্পন্ন হল শিল্পপতি রতন টাটার। কেন্দ্রীয় সরকারের হয়ে রতনের শেষকৃত্যে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই মুহূর্তে দেশে নেই। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডের ঘোষণা মতো পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় টাটা সন্স গোষ্ঠীর সাম্মানিক চেয়ারম্যানের। বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন শিন্ডে। মহারাষ্ট্রের সব সরকারি ভবনের পতাকা অর্ধনমিতও থাকবে।
প্রিয় মালিককে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে হাজির গোয়া। ছবি: সংগৃহীত।
বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টের সময় ওরলির ওই অন্ত্যেষ্টিস্থলে আনা হয় টাটার দেহ। তার আগে নরিম্যান পয়েন্টে এনসিপিএ লনে কাচের বাক্সে রাখা ছিল তাঁর দেহ। বাক্সের উপর জড়ানো ছিল জাতীয় পতাকা। সামনে রাখা ছিল রতনের পরিচিত সেই হাসিমুখের ছবি। এনসিপিএ লনে এসে হাজার হাজার মানুষ শেষ শ্রদ্ধা জানান রতনকে। সেখানেই সকলের সঙ্গে প্রিয় মালিককে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে যায় তাঁর পোষ্য গোয়া। গলায় লাল বকলস বেঁধে তাকে নিয়ে এসেছিলেন তার দেখভালকারী। ছবির সামনে বেশ কিছু ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় সাদা-কালো দাগওয়ালা সারমেয়কে। ছবির ওই মানুষটাই গোয়া থেকে তাকে মুম্বইয়ে নিজের বাড়িতে নিয়ে এসেছিলেন। তাই তিনি সারমেয়ের নাম রেখেছিলেন ‘গোয়া’। রাস্তার কুকুরদের জন্য রতনের ভালবাসা সুবিদিত। রাস্তা থেকে বহু কুকুরকে নিয়ে এসে ‘বম্বে হাউস’-এ রাখতেন তিনি। টাটা গোষ্ঠীর সদর দফতর রয়েছে সেখানে। বম্বে হাউসের মতো তাজ হোটেলেও যখন-তখন প্রবেশ করতে পারে রাস্তার কুকুরেরা। গোয়ার ঠাঁই হয়েছিল ‘বম্বে হাউস’-এ। এক বার গোয়া গিয়েছিলেন টাটা। সেখানে কিছুতেই তাঁর পিছু ছাড়ছিল না সাদা-কালো রঙের সারমেয়। তখনই তাকে মুম্বই নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন শিল্পপতি।
টাটার শেষকৃত্যে শাহ ছাড়াও যোগ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী শিন্ডে, উপমুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস, গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র পটেল। উপস্থিত ছিলেন টাটা গোষ্ঠীর শীর্ষকর্তা থেকে দেশের বিশিষ্টজনেরা। শাহ এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে জানিয়েছেন, লক্ষ লক্ষ ভারতবাসীর সঙ্গে তিনিও টাটার মৃত্যুতে শোকপালনে শামিল হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর হয়ে পুস্পস্তবকও দিয়েছেন শিল্পপতির মরদেহে।
বুধবার রাতে মুম্বইয়ের একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন টাটা। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। বয়সজনিত সমস্যা নিয়ে গত কয়েক দিন মুম্বইয়ের ওই হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। রবিবার রাতে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর মিলেছিল যে, বর্ষীয়ান এই শিল্পপতিকে মুম্বইয়ের এক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আরও দাবি করা হয়েছিল, আচমকা শারীরিক অবস্থার অবনতির কারণে তাঁকে আইসিইউতে ভর্তিও করানো হয়েছে। কিন্তু সোমবার সকালেই সব জল্পনা উড়িয়ে দিয়ে শিল্পপতি নিজেই জানিয়েছিলেন, সব খবর ভুয়ো। বরং বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যার কারণে নিয়মমাফিক চেক-আপের জন্যই হাসপাতালে গিয়েছিলেন তিনি। এর পর বুধবার রাতে তাঁর মৃত্যুর খবর মেলে।