অমিত শাহ। ছবি: পিটিআই।
পুরনো অভ্যেস। এসপি বা বিএসপি যখন ক্ষমতায় ছিল একই কাজ করে গিয়েছে। বিজেপি বুঝিয়ে দিল, তারাও পূর্বসূরিদের দেখানো পথেই হাঁটবে। ভোটের আগে শিলান্যাসের ঝড়। অখিলেশ-মায়াবতীদের করা সেই সব শিলান্যাসের অধিকাংশই পরে আর বাস্তবায়ন হয়নি। পাঁচ বছর হাত গুটিয়ে থাকার পরে ভোটের মুখে বৃহস্পতিবার রাজ্যের সহারনপুরে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেন বিজেপি নেতা অমিত শাহ।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানালেন, ৫০.৪৩ একর জায়গার উপরে বিশ্ববিদ্যালয়টি নির্মাণ করতে ৯২ কোটি টাকা খরচ হবে। আর এই শিলান্যাস করে অমিত শাহ আসলে মনে করিয়ে দিলেন, আর একটি শিলান্যাস নিয়ে অখিলেশ যাদবেরা অনেক কথা বলেছিলেন। কিন্তু সেই প্রকল্প এখন ‘সাকার’ হচ্ছে। সেটা অযোধ্যার রামমন্দির প্রকল্প। এ দিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মূল নিশানা ছিলেন এসপি নেতা অখিলেশই। অমিত বলেন, “কত কথা অখিলেশ বলেছিলেন! বাঁকা সুরে স্লোগান দিতেন, ‘মন্দির ওহি বানায়েঙ্গে/ লেকিন তিথি নহি বতায়েঙ্গে!’ কিন্তু আমরা তাঁদের দেখিয়ে দিয়েছি। গোটা বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছি।”
আবার বহুমাত্রিক লড়াইয়ে অখিলেশ বিনা নোটিসে লকডাউন ও ট্রেন-বাস বন্ধ করে দেওয়া নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের বিজেপি সরকারকে নিশানা করছেন। এ দিন ললিতপুরে একটি নির্বাচনী জনসভায় এসপি নেতা বলেন, “এখন হিন্দু-মুসলমান করছে বিজেপি। ভাবছে, এ ভাবেই ভুলিয়ে দেওয়া যাবে— কী ভাবে হাজার হাজার কিলোমিটার পায়ে হেঁটে ঘরে ফিরতে হয়েছে শ্রমিক ভাইদের। আমাদের সরকার থাকলে ওঁদের জন্য বাসের ব্যবস্থা করত। আর বিজেপি সরকার সীমানায় ব্যারিকেড দিয়ে তাঁদের রাজ্যে ঢোকা আটকেছিল। গোয়ালঘর খুলে দিয়েছিল ভিন্ রাজ্য থেকে আসা শ্রমিকদের নিভৃতবাসের জন্য! মানুষ ভোটের বাক্সে এ সবের জবাব দেবেন।”
অমিত শাহ দাবি করেছেন, যোগী আদিত্যনাথ মুখ্যমন্ত্রী হয়ে উত্তরপ্রদেশের মাফিয়া রাজের অবসান ঘটিয়েছেন। বলেন, “আগের আমলে মাফিয়ারাই সরকার চালাত। এখন ওরা আবার বলছে, রাজ্যে নাকি আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে। যেন কত আইন-শৃঙ্খলা ছিল ওদের আমলে! আমার কাছে তথ্য আছে, যোগীর আমলে উত্তরপ্রদেশে অপরাধের সংখ্যা ৬০ শতাংশ কমে গিয়েছে।” কেন্দ্রে কংগ্রেস সরকারকে বিঁধে অমিত বলেন, “একটা সময় ছিল, যখন পাকিস্তান বিনা বাধায় দেশের মধ্যে নাশকতা চালিয়ে যেত। তার কোনও জবাব দেওয়ার মুরোদ তখনকার সরকারের ছিল না। বিজেপি সরকারের আমলে এক বার হামলার জবাব ওদের মাটিতে ঢুকে সার্জিকাল স্ট্রাইক করে দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তান বুঝে গিয়েছে, মনমোহন সিংহ নয়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী এখন নরেন্দ্র মোদী। তার পরে আর তারা ভারতের দিকে চোখ তুলে দেখার সাহস করছে না!”
উত্তরপ্রদেশ সরকারের উপ-মুখ্যমন্ত্রী কেশবপ্রসাদ মৌর্যের একটি টুইট নিয়ে গত কাল বিস্তর হইচই হয়েছিল। বাবরি মসজিদ ভাঙার পর থেকে হিন্দুত্ববাদীরা স্লোগান দেয়, ‘ইয়ে তো স্রিফ ঝাঁকি হ্যায়, কাশী-মথুরা বাকী হ্যায়!’ (এ তো একটা ঝাঁকুনি মাত্র, এর পরে কাশী ও মথুরাতেও মন্দির বানানো হবে)। ৬ ডিসেম্বর বাবরি ধ্বংসের ক’দিন আগে রাজ্যের উপ-মুখ্যমন্ত্রীর টুইট— ‘অযোধ্যা আর কাশীতে মস্ত মন্দির তৈরি হচ্ছে, এর পরে পালা মথুরার।’ ধর্মগ্রন্থের চরিত্র কৃষ্ণের জন্মস্থান মথুরায় বলে মনে করা হয়। হিন্দুত্ববাদীদের দাবি, মথুরায় পুরনো একটি মসজিদের মধ্যেই জন্মস্থান কৃষ্ণের। অখিলেশ কাল বলেন, “মৌর্যের এই টুইট প্রমাণ, ভোটের আগে বিষয়টি নিয়ে অশান্তি তৈরির চেষ্টা করছে বিজেপি। সাম্প্রদায়িক সংঘর্য লাগিয়ে হিন্দু ভোট এককাট্টা করাতে চায় তারা।” এ দিন বিএসপি নেত্রী মায়াবতী মৌর্যের ওই টুইটের নিন্দা করে বলেন, “হিন্দু-মুসলমান বিজেপির হাতের শেষ অস্ত্র। এই অস্ত্র প্রয়োগ করে ফেলায় প্রমাণ হল, উত্তরপ্রদেশে হার যে নিশ্চিত বুঝেছে তারা। তবে এ বার আর ওই অস্ত্রে কাজ হবে না!”