রাজনাথ সিংহ। —ফাইল চিত্র।
দীর্ঘ সময় ধরে জাতগণনার দাবি জানিয়ে আসছিলেন বিরোধীরা। এ যাবৎ সেই দাবি অস্বীকার করে আসছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। সংবিধান গ্রহণের ৭৫তম বর্ষ উপলক্ষে আজ লোকসভায় হওয়া বিতর্কে কার্যত প্রথম বার জাতগণনা প্রশ্নে ইতিবাচক অবস্থান নিতে দেখা গেল সরকার পক্ষকে। বিতর্কের প্রথম বক্তা হিসেবে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ বলেন, জাতগণনা হলে সরকারের সমস্যা নেই। এ বিষয়ে নীল নকশা তৈরি করে সরকারের সঙ্গে বিরোধীদের আলোচনায় বসার পরামর্শ দেন তিনি। উজ্জীবিত বিরোধীদের দাবি, ক্রমাগত চাপে পড়ে অবশেষে জাতগণনার বিষয়ে ভাবতে বাধ্য হয়েছে সরকার। কংগ্রেস সাংসদ প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরার কথায়, “শেষ পর্যন্ত জাতগণনা মানতে হল সরকারকে।”
লোকসভা ভোটের আগে থেকেই বিরোধী শিবিরের বড় অংশের মূল দাবি ছিল, আসন্ন জনগণনার সঙ্গে ওবিসি-সহ অন্য পিছিয়ে পড়া শ্রেণির সংখ্যা নির্ধারণ করা হোক। যার ভিত্তিতে আগামী দিনে পিছিয়ে পড়াদের সংরক্ষণের সুবিধা দেওয়া হোক। বিজেপির কাছে সমস্যার হল, তৃতীয় মোদী সরকারের প্রথম ওবিসি কল্যাণ কমিটির বৈঠকে শরিক জেডিইউ জাতগণনা নিয়ে আলোচনার দাবি তোলে। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকও জানিয়ে দেয়, জনগণনার সঙ্গে জাতগণনার যে জল্পনা শুরু হয়েছে তা ঠিক নয়।
শাসক শিবির আজ যে ভাবে জাতগণনার পক্ষে সওয়াল করেছে তা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। রাজনাথ বলেছেন, “জাতগণনার প্রশ্নে আপনারা যে দাবি তুলেছেন তাতে আমার কোনও সমস্যা নেই। আপনারা কোন জাতকে কত শতাংশ সংরক্ষণ দিতে চান তার একটি নীল নকশা নিয়ে আসুন। যার ভিত্তিতে সংসদে আলোচনা করা যেতে পারে।”
বিরোধীদের চাপে সরকার জাতগণনা মেনে নিয়েছে বলে মনে করছেন কংগ্রেস সাংসদ প্রিয়ঙ্কা। আজ সাংসদ হিসেবে লোকসভায় নিজের প্রথম বক্তৃতায় তিনি বলেন, “আর্থ-সামাজিক বৈষম্য ঘোচাতে জাতগণনার প্রয়োজন রয়েছে। এটাই সময়ের দাবি। নীতি প্রণয়ন ও সামাজিক ন্যায় দেওয়ার প্রশ্নে জাতগণনার প্রয়োজনীয়তা থাকলেও, অতীতে যখনই এর জন্য দাবি উঠেছে শাসক শিবির বলেছে, জাতগণনা হলে গরু-মহিষ ছিনিয়ে নেওয়া হবে। মঙ্গলসূত্র চুরি করে নেওয়া হবে। অবশেষে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে সরকার।”
আজ সংবিধান নিয়ে আলোচনায় দফায় দফায় রাহুল গান্ধী ও কংগ্রেসের ভূমিকার সমালোচনায় সরব হন রাজনাথ। সেই সংবিধান নিয়েই আজ লোকসভার বিরোধী দলনেতাকে নিশানা করে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, “আজকাল অনেকেই পকেটে সংবিধান নিয়ে ঘুরে বেড়ান। কারণ এঁরা ছোটবেলা থেকে এমনটাই দেখে এসেছেন। কয়েক প্রজন্ম ধরে এঁরা দেখেছেন, এঁদের পরিবারের লোকেরা সংবিধানকে পকেটে পুরে রাখেন। সেটাই এঁরা শিখেছেন।” তাঁর সংযোজন, “১৯৯৫ সালে বিরোধী নেতা অটলবিহারী বাজপেয়ী রাষ্ট্রপুঞ্জে গিয়ে তৎকালীন সরকারের পাকিস্তান ও কাশ্মীর নীতির পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। কিন্তু দেশে ফিরে সেই বাজপেয়ী কেন্দ্রের নীতির সমালোচনা করেন। বিদেশে সরকারের সুরে সুর মিলিয়ে মুখ খুলে বিচক্ষণ বিরোধী নেতার ভূমিকা পালন করেছিলেন। এখনকার নেতারা বিদেশের মাটিতে গিয়ে কী কী সব বলে আসেন!..বিরোধী নেতার ভূমিকা কী ভাবে পালন করতে হয় তা এঁদের শিখতে হবে।”
আজ জরুরি অবস্থা নিয়ে সরব হয়ে রাজনাথ কংগ্রেসের নাম না করে বলেন, “যারা সংবিধানকে গুরুত্বহীন করে এক সময়ে জরুরি অবস্থা জারি করেছিল, এখন তারাই সংবিধান তৈরির যাবতীয় কৃতিত্বকে হাইজ্যাকের চেষ্টা করছে। ...দেশের শীর্ষ পদ গ্রহণের প্রশ্নে জন্মপরিচয় গুরুত্বহীন। তাই গরিব পরিবারের ছেলে প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি হতে পারেন।” রাজনীতিকদের মতে, সরকার চলতি অধিবেশনে এক দেশ এক ভোট বিল আনার পক্ষে। যা আমেরিকার ধাঁচে রাষ্ট্রপতি মডেলের শাসনব্যবস্থার পক্ষে সওয়াল করে বলেই অভিযোগ বিরোধীদের। আজ গরিব পরিবারের ছেলের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সঙ্গে রাষ্ট্রপতিও হতে পারেন— এই শব্দবন্ধ জুড়ে দিয়ে রাজনাথ নতুন বিতর্ক তৈরি করলেন বলেই মনে করছেন রাজনীতিকদের একাংশ।