কেরিয়ারের ঝুলিতে রয়েছে একাধিক জনপ্রিয় ছবি। বক্স অফিসে প্রতিটি ছবিই বিপুল ব্যবসা করেছে। কিন্তু স্বপ্নপূরণ করতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল পরিচালককে। তাঁর বিবাহিত জীবনেও বার বার এসেছিল বিচ্ছেদ।
১৯৫৪ সালের অগস্ট মাসে ওন্টারিয়োর কাপুসকাসিং এলাকায় জন্ম জেমস ফ্রান্সিস ক্যামেরনের। বাবা-মা এবং চার ভাইবোনকে নিয়ে থাকতেন তিনি। গরমের ছুটি পড়লে পরিবারের সকলে মিলে ঠাকুরদার খামারবাড়িতে ঘুরতে যেতেন।
মাত্র ১৭ বছর বয়সে পরিবার-সহ ক্যালিফর্নিয়ায় চলে যান জেমস। দু’বার স্কুল বদল করার পর স্কুলের পড়াশোনা শেষ করেন তিনি। ১৯৭৩ সালে পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়বেন বলে ক্যালিফর্নিয়ার একটি কলেজে ভর্তি হন জেমস। তার পর ইংরেজি নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন তিনি।
পড়াশোনার বিষয় পরিবর্তন করার পরেও কলেজের গণ্ডি পার করতে পারেননি জেমস। ১৯৭৪ সালের শেষের দিকে কলেজের পড়াশোনা ছেড়ে দেন তিনি। পড়াশোনা ছেড়়ে দিয়ে উপার্জনের জন্য নানা ধরনের পথ খুঁজতে থাকেন জেমস।
এই সময়ে সাফাইকর্মী হিসাবে কাজ করা শুরু করেন জেমস। তার পর সেই চাকরি ছেড়ে ট্রাক চালাতে শুরু করেন। সেই সময় চলচ্চিত্র নির্মাণের দিকে ঝুঁকে পড়েন তিনি।
১৯৭৭ সালে ‘স্টার ওয়ার্স’ দেখার পর তার ‘ভিস্যুয়াল এফেক্টস’ থেকে অভিভূত হয়ে পড়েন জেমস। তার পর তিনি ছবি তৈরির সিদ্ধান্ত নেন। ট্রাকচালকের চাকরি ছেড়ে দেন তিনি।
শোনা যায়, ছবিনির্মাণের জন্য যথেষ্ট অর্থ ছিল না জেমসের কাছে। বন্ধুদের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে ১৯৭৮ সালে স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি তৈরি করেন তিনি। ১৯৮০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত কল্পবিজ্ঞান ঘরানার ‘ব্যাটল বিয়ন্ড দ্য স্টার্স’ ছবিতে শিল্প নির্দেশক হিসাবে কাজ করেন জেমস।
আশির দশকে ‘এসকেপ ফ্রম নিউ ইয়র্ক’ এবং ‘গ্যালাক্সি অফ টেরর’ নামের ছবির ক্রু সদস্য হিসাবে কাজের সুযোগ পান জেমস। ১৯৮২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘পিরান্হা ২: দ্য স্পনিং’ ছবিতে ‘স্পেশ্যাল এফেক্টস সুপারভাইজ়ার’ হিসাবে কাজ করেছিলেন জেমস। সেই ছবির পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন মিলার ড্রেক।
কানাঘুষো শোনা যায়, ছবির প্রযোজকের সঙ্গে মতের অমিল হওয়ায় কাজ ছেড়ে চলে যান মিলার। তখন ছবি পরিচালনার দায়িত্ব এসে পড়ে জেমসের কাঁধে। প্রথম ছবিতেই বক্স অফিস কাঁপিয়ে দেন তিনি।
হলিপাড়া সূত্রে খবর, ১৯৮২ সালে একটি চিত্রনাট্য লেখেন জেমস। বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে ছবি তৈরির প্রস্তাব দিলেও নবাগত পরিচালকের সঙ্গে কেউ কাজ করতে চাননি। এক খ্যাতনামী প্রযোজনা সংস্থার মালিক গেল অ্যানে হার্ড সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন।
হলিউডের গুঞ্জন, আশির দশকে মাত্র ১ ডলারের (ভারতীয় মুদ্রায় বর্তমানে যার পরিমাণ ৮৫ টাকা) বিনিময়ে জেমসের কাছ থেকে চিত্রনাট্য কিনে নেন গেল। তবে শর্ত রাখেন যে, সেই ছবির পরিচালনার দায়িত্ব নিতে হবে জেমসকেই। গেলের এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান তিনি।
খুব কম খরচে ‘দ্য টার্মিনেটর’ ছবিটি পরিচালনা করেন জেমস। তবে এই ছবি মুক্তির পর পরিচালক হিসাবে রাতারাতি জনপ্রিয়তা পেয়ে যান তিনি। আর কেরিয়ারের পথে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি জেমসকে।
‘অ্যালিয়েন্স’, ‘টার্মিনেটর ২: জাজমেন্ট ডে’, ‘টাইটানিক’-এর মতো একাধিক সফল ছবি পরিচালনা করেন জেমস। তাঁর কেরিয়ারের ঝুলিতে রয়েছে ‘অবতার’-এর জনপ্রিয় ছবির একাধিক পর্বও। বর্তমানে হলিউডের সফল পরিচালকদের তালিকার একেবারে উপরের দিকে নাম লিখিয়ে ফেলেছেন জেমস।
হলিপাড়া সূত্রে খবর, পাঁচ বার বিয়ে করেছেন জেমস। ১৯৭৮ সালে শ্যারন উইলিয়ামসকে বিয়ে করেছিলেন পরিচালক। ১৯৮৪ সালে বিবাহবিচ্ছেদ হয় তাঁদের।
বিবাহবিচ্ছেদের পর প্রযোজক গেলকে বিয়ে করেন জেমস। কিন্তু দ্বিতীয় বার বিয়ে করার পরেও সংসার দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ১৯৮৯ সালে বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায় জেমস এবং গেলের।
গেলের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর হলি পরিচালক ক্যাথরিন বিগেলোর প্রেমে পড়েন জেমস। ১৯৮৯ সালে তাঁকে বিয়েও করেন পরিচালক। দু’বছর সংসারের পর ১৯৯১ সালে বিচ্ছেদ হয় তাঁদের।
বার বার বিয়ে ভাঙার পরেও সম্পর্ক থেকে বিশ্বাস হারাননি জেমস। ‘দ্য টার্মিনেটর’ ছবির অভিনেত্রী লিন্ডা হ্যামিলটনের সঙ্গে প্রেম করতে শুরু করেন তিনি। ১৯৯৩ সালে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন লিন্ডা। সন্তানের জন্মের চার বছর পর ১৯৯৭ সালে লিন্ডাকে বিয়ে করেন জেমস।
কানাঘুষো শোনা যায়, লিন্ডা এবং জেমসের সংসারে ভাঙন ধরানোর নেপথ্যে ছিলেন অন্য এক হলি অভিনেত্রী। হলিউডের নায়িকা সুজ়ি অ্যামিসের সঙ্গে নাকি বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন জেমস।
দু’বছর ছাদ আলাদা করে নেওয়ার পর পাঁচ কোটি ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৪২৮ কোটি টাকা) ক্ষতিপূরণ নিয়ে পরিচালককে বিবাহবিচ্ছেদ দেন লিন্ডা। ২০০০ সালে সুজ়িকে বিয়ে করেন জেমস। বিয়ের পর এক পুত্রসন্তান এবং দুই কন্যাসন্তানের জন্ম দেন সুজ়ি।