প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। ছবি পিটিআই।
কৃষি আইন বহাল রাখার প্রশ্নে নরেন্দ্র মোদী সরকার যখন অনড়, সরকার ও কৃষকদের মধ্যে বছরের শেষ বৈঠকেও যখন জট আটকে রইল, তখন আজ বেসুরে বাজলেন বিজেপির শীর্ষ নেতা তথা প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। দলীয় নেতারা আন্দোলনকারী কৃষকদের মাওবাদী বা খলিস্তানপন্থী হিসেবে যে ভাবে দাগিয়ে দিচ্ছিলেন, আজ সংবাদমাধ্যমে একটি সাক্ষাৎকারে তার সমালোচনায় সরব হন রাজনাথ। সূত্রের মতে, শিখ সমাজের কৃষক আন্দোলনকারীদের দেশবিরোধী হিসাবে যে ভাবে দাগিয়ে দেওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়েছে, তার প্রভাব সেনাবাহিনীতেও পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তাই আর দেরি না করে শিখদের বার্তা দিতে মুখ খোলেন রাজনাথ সিংহ। তিনি বলেন, শিখদের ন্যায়পরায়ণতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন থাকতে পারে না।
কৃষকদের আন্দোলন মাওবাদী ও নকশালপন্থীদের হাতে চলে গিয়েছে বলে দিন কয়েক আগেই সরব হয়েছিলেন রেল তথা কেন্দ্রীয় খাদ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল। আন্দোলনের গোড়ার দিকে বিক্ষোভকারীদের খলিস্তানপন্থী বলেও দাগিয়ে দেওয়ার প্রবণতা বিজেপি নেতাদের মধ্যে লক্ষ্য করা গিয়েছিল। কৃষক আন্দোলনকে খাটো করতে বিজেপি নেতাদের ওই ধরনের বেফাঁস মন্তব্য মোটেই ভাল ভাবে নেয়নি সঙ্ঘ পরিবারও। সে কথা জানিয়ে দেওয়া হয বিজেপি নেতৃত্বকে। পাশাপাশি মধ্যপ্রদেশে ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বহাল রাখার দাবিতে সরব হয়ে পথে নামে সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ ও ভারতীয় কিসান সংঘ। মধ্যপ্রদেশের বিজেপি সরকারের কাছে তুলো, ভুট্টার মতো ফসলে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য দেওয়ার দাবিতে আন্দোলনে নামে দুই সংগঠন। হরিয়ানা ও পঞ্জাবের কৃষকেরা যে দাবিতে পথে নেমেছেন, কার্যত সেই দাবিকে সমর্থন করে আন্দোলনে নামে ওই দুই সংগঠন।
নতুন আইনের প্রশ্নে সঙ্ঘ ও বিজেপির মধ্যে যে ফাটল রয়েছে তা ইতিমধ্যেই স্পষ্ট। পাঁচ সপ্তাহের টানা আন্দোলন মতানৈক্য সৃষ্টি করেছে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বেও। দু’শিবিরের আলোচনার গোড়াতেই, দ্বিতীয় বৈঠকের সময়ে রাজনাথ আন্দোলনকারীদের একটি প্রস্তাব দিয়েছিলেন যে, ওই আইন দু’বছর বলবৎ হওয়ার পরে তা পর্যালোচনা করে দেখা হোক। যদি আইনে ত্রুটি থাকে, মোদী সরকার তা প্রত্যাহার করে নেবে। সরকারের একটি সূত্রের মতে, ওই প্রস্তাব রাজনাথের ব্যক্তিগত মতামত ছিল। যার সঙ্গে সরকারের কোনও সম্পর্ক নেই।
ঘটনাচক্রে দ্বিতীয় বৈঠকের পরে আলোচনা থেকে সরে যান রাজনাথ। কৃষকদের ওই আন্দোলনকে বিরোধীদের চক্রান্ত বলেই মন্তব্য করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর মতে, বিরোধীদের ভুল বোঝানোর কারণেই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছেন কৃষকেরা। অথচ, আন্দোলনের পিছনে বিরোধীদের ভূমিকা নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মতামত জানতে চাওয়া হলে তিনি এ ধরনের কিছু বলেননি বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান। এক দিকে দলে মতপার্থক্য, অন্য দিকে ওই আন্দোলন আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনগুলিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কায় ভুগছেন বিজেপির বড় অংশ। আজ হরিয়ানার পুর ভোটে বিজেপির হার যে আশঙ্কাকে অনেকাংশে সত্যি করে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিজেপি নেতৃত্বের বড় অংশ আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে আইন বাতিল করার পথে হাঁটার প্রশ্নে রাজি। যদিও হরিয়ানার প্রদেশ কংগ্রেস সভানেত্রী কুমারী সেলজার মতে, ‘‘একমাত্র প্রধানমন্ত্রী চাইছেন না বলে ওই আইন বাতিল হচ্ছে না।’’
কৃষকদের দেশবিরোধী হিসাবে দাগিয়ে দেওয়ার প্রবণতায় প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসাবে তিনি যে উদ্বিগ্ন, আজ তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন রাজনাথ। প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ শিবিরের মতে, মাথায় রাখতে হবে ভারতীয় সেনার বড় অংশ পঞ্জাব-হরিয়ানা থেকে আসেন। যাঁরা শিখ ও মূলত কৃষক পরিবারের সন্তান, যাঁদের আত্মীয়রা দিল্লির সীমানায় ঠান্ডার মধ্যে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। আন্দোলনে সহমর্মিতা দেখিয়ে বসে রয়েছেন অনেক প্রাক্তন সেনানী। তাই নিজেদের দাবির সপক্ষে আন্দোলনে বসেছেন বলেই তাঁদের দেশবিরোধী হিসাবে চিহ্নিত করে দেওয়া আদৌ সঠিক রাজনীতি নয় বলেই মনে করেন রাজনাথ। সে কারণে আজ মুখ খুলতে ‘বাধ্য হন’ রাজনাথ। তিনি বলেন, ‘‘শিখেদের ন্যায়পরায়ণতা নিয়ে কারও কোনও প্রশ্নই থাকতে পারে না।’’ একই সঙ্গে কৃষক সমাজের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘‘কৃষকদের বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ ঠিক নয়। কৃষক সমাজকে শ্রদ্ধা করি। কৃষকেরা আমাদের অন্নদাতা। আর্থিক মন্দার সময়ে গোটা দেশের অর্থনীতিকে মন্দা থেকে বের করে আনতে উল্লেখজনক ভূমিকা নিয়েছিলেন কৃষকেরা। কৃষকেরা হলেন অর্থনীতির মেরুদণ্ড। তাঁরা বিভিন্ন সময়ে দেশকে সমস্যা থেকে বার করে এনেছেন।’’