রাজকন্যা বরুয়া
যে গাড়ির চাকার তলায় ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছে দু’টো পা, সেই গাড়ির মালকিনের গ্রেফতারি, আত্মহত্যার হুমকি, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া, পাঁচতারা হোটেলে পার্টি করার খবর নিয়ে দিনের পর দিন ব্যস্ত সংবাদমাধ্যম। ‘উপরতলায় যোগযোগ’ থাকা মডেলের ঘটানো দুর্ঘটনার ধাক্কায় ত্রাহি রব পুলিশ-প্রশাসনে। কিন্তু শিরোনাম থেকে দূরে, নিজের ও পরিবারের অন্ধকার ভবিষ্যতের কথা ভেবে হাসপাতালে খাটে এখনও মৃতপ্রায় পড়ে আছেন মেঘালয়ের গারো পাহাড়ের বাসিন্দা জোসেফ মারাক। দিকে গাড়ি চাপা দেওয়ার পুরনো এক মামলায় আজ ফের গ্রেফতার করা হয়েছে মডেল রাজকন্যাকে। ২০১৭ সালে গুয়াহাটিতে প্রাক্তন বিধায়ক নবনীতা সন্দিকৈয়ের ছেলে করণজ্যোতি সন্দিকৈয়ের পায়ের উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দিয়েছিলেন রাজকন্যা বরুয়া। তিন মাস হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল করণজ্যোতিকে। চার বছর আগের সেই মামলায় আজ কারাবন্দি রাজকন্যাকে ফের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আজ আদালতে তোলা হলে ফের তাঁকে জেল হাজতে পাঠানো হয়।
যে কোনও উপায়ে রোজগারের আশায় জোসেফ ২ সেপ্টেম্বর গুয়াহাটি পাড়ি দিয়েছিলেন। ১ অক্টোবরের রাত তাঁর দু’টি পা কেড়ে নেওয়ায় এখনও ট্রমা থেকে বেরোতে পারেননি তিনি। একটি পা ঘটনাস্থলেই ছিঁড়ে রাজকন্যার গাড়ির বনেটে আটকে ঝুলছিল। অভাবের মধ্যেও দশম শ্রেণির পড়া চালিয়ে যাওয়া ছেলেটা বাবার অবস্থা দেখেই বুঝতে পেরেছে, গোটা পরিবারের দায় এখন তার কাঁধে।
গত বছর অক্টোবরে মাকে হারানো ১৫ বছরের রাফেল ডি সাংমা আর তার ছোট ভাই সানডে বার্থ ও বোন জেসমিন কখনও গ্রামের বাইরেই যায়নি। গ্রামের মানুষ ১০-২০ টাকা করে চাঁদা তুলে হাজার টাকা জোগাড় করে দেয়। ৯ অক্টোবর রাফেল পৌঁছয় হাসপাতালে, বাবার কাছে। দিশাহারা রাফেলের পাশে দাঁড়িয়ে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা জোসেফের কৃত্রিম পা লাগানোর ব্যবস্থা করবে বলেছে। কিন্তু ডাক্তাররা জানান, হাসপাতাল থেকে জোসেফকে ছাড়তে অনেক সময় লাগবে। রাফেল জানে না, সে এত দিন কোথায় থাকবে, কে দেখভাল করবে বাড়ির দুই ছোট ভাইবোনকে, কী ভাবেই বা দশম শ্রেণির পরীক্ষা দেবে! জোসেফের হয়ে বিনামূল্যে মামলা লড়বেন আইনজীবী নারায়ণ দত্ত ভুঁইয়া।
৯ শ্রমিককে গাড়ি চাপা দেওয়ার পরে মদ্যপান ও হোটেলে পার্টি করে ফেরার কথা অস্বীকার করেছিলেন রাজকন্যা। সরকারের ঘনিষ্ঠ এক ব্যবসায়ীর জন্মদিনের পার্টি ছিল সেই রাতে। সেখানে পুলিশ ও প্রশাসনের একাধিক পদস্থ ব্যক্তিও হাজির ছিলেন। ওই ব্যবসায়ী সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, রাজকন্যা ছিলেন ওই পার্টির ইভেন্ট ম্যানেজার। এ দিকে ভুয়ো মেডিক্যাল সার্টিফিকেট ও প্রেসক্রিপশন তৈরি করে রাজকন্যাকে হাসপাতালে ভর্তি রাখার দায়ে রবিবার রাতে ২০১, ২১২ ও ১২০বি ধারায় গ্রেফতার হওয়া নিউরোসার্জন নভোনীল বরুয়াকে জামিন
দেওয়া হয়েছে।