পুরখারাম।
কুম্ভকর্ণকেও ঘুমে টেক্কা দেন তিনি! রামায়ণের সে বীর বছরে ছ’মাস ঘুমিয়ে কাটাতেন আর এ দিকে রাজস্থানের পুরখারাম একবার বিছানায় পড়লে ২০-২৫ দিনের আগে সে ঘুম ভাঙায় কার সাধ্যি। সব মিলিয়ে বছরে ৩৬৫ দিনের মধ্যে কমবেশি ৩০০ দিনই তিনি থাকেন গভীর নিদ্রায়। তবুও যায় না ক্লান্তি। কেন এমন দীর্ঘ ঘুম? এর পিছনে রয়েছে এক বিরল রোগ। ডাক্তারি পরিভাষায় নাম অ্যাক্সিস হাইপারসমনিয়া।
নাগৌর জেলার ভড়বায় মানুষ এক ডাকে চেনেন পুরখারামকে। ২৩ বছর আগে প্রথম রোগ ধরা পড়ে তাঁর। সেই থেকে স্বাভাবিক জীবন কী তা প্রায় ভুলতেই বসেছেন তিনি। একবার ঘুম পেয়ে গেল, তো যেখানে রয়েছেন সেখানেই শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েন তিনি। ব্যাস, তার পরে ২০-২৫ দিন স্নান করানো, খাওয়ানো— সব ঘুমন্ত অবস্থাতেই করিয়ে দিতে হয়
বাড়ির লোককে।
চিকিৎসকেরা বলছেন, অ্যাক্সিস হাইপারসনমিয়া আদতে স্নায়ুর রোগ। মস্তিকে টিএনএফ-আলফা নামে এক প্রকার প্রোটিনের মাত্রা ওঠাপড়ার কারণে এই রোগ হয়। তাঁরা বলছেন, ‘‘প্রথম দিকে একটানা ৫ থেকে ৭ দিন ঘুমোতেন পুরখারাম। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে দিন। এখন তো একবার ঘুমালে ২০ থেকে ২৫ দিনের আগে ভাঙানো যায় না সে ঘুম।’’
ঘুমরোগের জ্বালায় রোজগারও শিকেয় উঠেছে পুরখারামের। মাসের মধ্যে সাকুল্যে পাঁচ-ছ’দিন মুদির দোকানটা খোলা রাখতে পারেন তিনি। অনেক সময় দোকানে এসেও খদ্দেররা দেখেন, পুরখারাম ‘নিদ্রা গিয়েছেন’। তখন আবার বাড়ির লোকের আর এক ঝক্কি।
পুরখারাম জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন একটানা বন্ধ থাকার পরে দোকান খুলে দেখেন দরজার বাইরে খবরের কাগজের পাহাড় জমেছে। সেই কাগজ গুনে গুনে টের পান মাসের সিংহভাগই ঘুমিয়ে পার করে ফেলেছেন তিনি। রোগ সারাতে ওষুধ খেয়েছেন বিস্তর, তবে লাভ হয়নি। ঘুমিয়ে উঠেও ফের ঘুমঘুম ভাব, দিনভর ক্লান্তি আর মাথাব্যথা। চিকিৎসকেরা বলছেন, পুরখারামের এই রোগ খুবই বিরল। মাথায় আঘাত লাগলে বা অতীতে মাথায় টিউমার থাকলেও অনেক সময় পরে এই রকম অবস্থা হতে পারে। ডাক্তারি শাস্ত্রে একে মানসিক সমস্যা বলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। একেবারে গোড়ায় ধরা পড়লে অনেক সময় চিকিৎসায় সারতে পারে রোগটি। তবে পুরখারামের ক্ষেত্রে সে সম্ভাবনা কতটা তা নিশ্চিত করতে পারছেন না চিকিৎসকেরা। হলে কী হবে, আশা না হারিয়ে এখনও স্বামীর ঘুম ভাঙার স্বপ্ন দেখছেন স্ত্রী লিচমি দেবী।