অশোক গহলৌত (ডান দিকে) সরকার সুরক্ষিত। দাবি রাজস্থানের পরিবহণমন্ত্রী প্রতাপ সিংহ খাচরিয়াবাসের। ছবি: সংগৃহীত।
রাজস্থানে ক্ষমতাসীন থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিধায়কদের সমর্থন রয়েছে অশোক গহলৌত সরকারের। বিজেপির সঙ্গে রাজনৈতিক তরজার মাঝেই এই দাবি রাজস্থান প্রদেশ কংগ্রেসের। সেই সঙ্গে তাদের আরও দাবি, অনুমতি পেলে সচিন-শিবিরে যোগ দেওয়া বিধায়কেরা ফের ফিরে আসবেন গহলৌত-শিবিরে। শনিবার রীতিমতো সাংবাদিক বৈঠক করে এমন দাবি কংগ্রেস নেতা তথা রাজস্থানের পরিবহণমন্ত্রী প্রতাপ সিংহ খাচরিয়াবাসের।
বিজেপির সঙ্গে মিলিত হয়েই সচিন পাইলট রাজ্যে সরকার ফেলে দেওয়ার যড়যন্ত্র লিপ্ত হয়েছেন বলে আগেই অভিযোগ করেছিলেন প্রতাপ। এ দিন তিনি বলেন, “সরকার ধরে রাখতে আমাদের কাছে প্রয়োজনীয় সংখ্যা রয়েছে।” পরিবহণমন্ত্রীর ঘোষণা, পাইলট-শিবিরে যোগ দেওয়া বিদ্রোহী বিধায়কেরা গহলৌত-শিবিরে ফিরে আসতে চাইলে তাঁদের ফুলের মালা দিয়ে বরণ করা হবে। সেই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, “যাঁরা বিজেপি শিবিরে যোগ দেবেন, রাজস্থানের মানুষ তাঁদের ক্ষমা করবেন না।”
এ দিনের সাংবাদিক সম্মেলনে পরিবহণমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সচিন পাইলটের জায়গায় সদ্য রাজস্থান কংগ্রেসের সভাপতি পদে আসা গোবিন্দ সিংহ ডোটাসরা। পরিবহণমন্ত্রীর মতোই আক্রমণাত্মক ছিলেন তিনিও। তাঁর অভিযোগ, মানেসরের রিসর্ট থেকে শুক্রবার সচিন-সহ ১৯ বিধায়ককে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে বিজেপি-শাসিত হরিয়ানার পুলিশ। তাঁর দাবি, “মানেসরের রিসর্টে পৌঁছলে রাজস্থানের পুলিশের বিশেষ দলকে অপেক্ষা করিয়ে রাখে হরিয়ানা পুলিশ। সে সময় রিসর্টের একটি গোপন দরজা দিয়ে বিধায়কদের সরিয়ে দেওয়া হয়।” ডোটাসরার প্রশ্ন, বিজেপির যদি কোনও কিছু গোপন করারই না থাকে, তবে এ ক্ষেত্রে হরিয়ানা পুলিশের হস্তক্ষেপ করতে হল কেন?
আরও পড়ুন: বিএসপি-কে ঠকিয়ে বিধায়কদের কংগ্রেসে নিয়ে গিয়েছিলেন গহলৌত, তির মায়াবতীর
আরও পড়ুন: কংগ্রেস আড়ি পেতেছিল বিধায়কদের ফোনে? সিবিআই তদন্ত দাবি বিজেপির
মানেসরের ওই রিসর্টে সপ্তাহখানেক ধরেই তাঁর অনুগামী কংগ্রেস বিধায়কদের নিয়ে রয়েছেন সচিন পাইলট। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন কংগ্রেস বিধায়ক ভাঁওয়ার লাল শর্মাও। যাঁর সঙ্গে রাজস্থানে সরকার ফেলে দেওয়া সংক্রান্ত বিষয়ে কেন্দ্রীয় জলশক্তিমন্ত্রী গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াত-ঘনিষ্ঠ সঞ্জয় জৈনের তথাকথিত অডিয়ো টেপ প্রকাশ্যে এসেছে। মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত তথা কংগ্রেসের অভিযোগ, রাজ্যে সরকার ফেলে দেওয়ার যড়যন্ত্রে লিপ্ত শেখাওয়াত। আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি শেখাওয়াত অস্বীকার করলেও তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করেছে রাজস্থান পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছে সঞ্জন জৈনকেও। শুক্রবার ভাঁওয়ার লালের কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করতে মানেসরের ওই রিসর্টে হানা দেয় রাজস্থান পুলিশের এসওজি (স্পেশাল অপারেশনস গ্রুপ)। মানেসরের রিসর্টে গেলে প্রথমে তাদের বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। পরে ভিতরে ঢুকতে দিলেও সেখানে কংগ্রেস বিধায়কদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। গোটা কাণ্ডে বিজেপিকে ফের নিশানা করে রাজস্থান কংগ্রেস।
টিম গহলৌত এবং টিম সচিনের এই তরজার মাঝেই রাজস্থানের মন্ত্রীর দাবি, প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে তাঁদের কাছে। ২০০ আসনবিশিষ্ট রাজস্থান বিধানসভায় অশোক গহলৌতের প্রয়োজন ১০১ জনের সমর্থন। গহলৌত সরকারের দাবি, তাদের কাছে ১০৬ জন বিধায়কের সমর্থন রয়েছে। অন্য দিকে, ৭৩টি আসন দখল করা বিজেপির প্রয়োজন আরও ২৮ জনের সমর্থন। তবে গোটা বিষয়টি নির্ভর করছে আগামী মঙ্গলবারের স্পিকারের সিদ্ধান্তের উপরেও। ওই দিন পর্যন্ত রাজস্থানের স্পিকার সি পি জোশীর নোটিশের জবাব দেওয়ার সময় রয়েছে সচিন পাইলটদের কাছে। বিধায়কদের সদস্যপদ খারিজ সংক্রান্ত ওই নোটিসের জেরে টিম সচিন আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে। শেষমেশ ১৯ বিধায়কের সদস্যপদ খারিজ হয়ে গেলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাবে গহলৌত সরকার। এবং বিজেপি আস্থাভোটের দাবি করলে স্বাভাবিক ভাবেই বাড়বে সংখ্যা নিয়ে দড়ি টানাটানির পর্ব। এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একটা বড় অংশ।