ফাইল চিত্র।
তাঁর সরকারের সঙ্কটের সমস্ত দায়ভার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাঁধে চাপালেন রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত। সোনার কেল্লার শহরে দাঁড়িয়ে অনুগামী বিধায়কদের মধ্যমণি হয়ে গহলৌত বলেন, “নরেন্দ্র মোদীকে বলছি, এই তামাশা বন্ধ করুন। আপনি দুই দফায় ভোটে জিতে এসেছেন। আপনার নির্দেশ শুনে দেশবাসী করোনা তাড়াতে থালা-বাসন পিটিয়ে মিছিল করে, প্রদীপ জ্বালায়, বাজি পোড়ায়। ঘোড়া কেনাবেচা করে বিরোধী-শাসিত রাজ্য সরকার ফেলার বদলে আপনি মানুষের জন্য কিছু করলে ভাল হয়!” আর দলের যে সহকর্মী বরখাস্ত উপমুখ্যমন্ত্রী সচিন পাইলটের বিদ্রোহে তাঁর এই সঙ্কট, তাঁকে কী বলবেন মুখ্যমন্ত্রী? গহলৌত জানালেন, কোনও বিদ্বেষ নেই তাঁর প্রতি। হাইকম্যান্ড সচিন ও তাঁর অনুগামী বিধায়কদের ক্ষমা করে দিলে বুকে টেনে নেবেন তাঁদের।
এ দিকে বিদ্রোহী কংগ্রেস বিধায়ক ভাঁওয়রলাল শর্মাকে টাকার প্রস্তাব দিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গজেন্দ্র শেখাওয়াতের ফোনের যে অডিয়ো ক্লিপটি ভাইরাল হয়েছিল, তদন্তকারী এসওজি শুক্রবার আদালতকে জানিয়েছে, ফরেন্সিক পরীক্ষায় প্রমাণ হয়েছে অডিয়োটি জাল নয়। কাটাছেঁড়াও করা হয়নি ক্লিপটিতে। এর পরে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে বিধায়ক ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ জরুরি। দু’জনেই বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন। আদালত যেন তাঁদের কণ্ঠস্বরের নমুনা তদন্তকারী দলকে দিতে নির্দেশ দেয়। আদালতে এসওজি-র এই বয়ানে বিজেপি, বিশেষত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শেখাওয়াত নিশ্চিত ভাবেই বিপাকে পড়লেন। এ দিনই রাজস্থানে নেতৃত্বে রদবদল করেছে বিজেপি।
দীর্ঘ টালবাহানার পরে মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাব মেনে ১৪ তারিখে বিধানসভার অধিবেশন ডাকার নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যপাল তথা বিজেপির প্রাক্তন কেন্দ্রীয় নেতা কলরাজ মিশ্র। কিন্তু গহলৌত অভিযোগ করেছেন, প্রাথমিক ভাবে সরকার ফেলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলেও বিজেপি ফের বিধায়ক কেনাবেচায় ঝাঁপিয়ে পড়েছে। এই কারণেই অনুগত শ’খানেক বিধায়ককে সঙ্গী করে তিনি রাজধানী জয়পুর ছেড়ে সোনার কেল্লার শহর জৈসলমেরের রিসর্টে এসে উঠেছেন। সেখানে পৌঁছনোর পরে গহলৌত বলেন, “প্রথমে ১০ কেটি, পরে ১৫ কোটি, এখন দল ভাঙাতে যা খুশি টাকা দেওয়ার প্রস্তাব বিধায়কদের দিচ্ছে বিজেপি। তবে ২১ দিন পরে হোক বা এক মাস, সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে আমার কোনও সমস্যা হবে না। প্রয়োজনের চেয়ে ৩০ জন বেশি বিধায়কের সমর্থন আমার রয়েছে।” সচিন পাইলটের নেতৃত্বে ১৮ জন বিদ্রোহী বিধায়ক বিজেপি শাসিত হরিয়ানার একটি হোটেলে উঠেছেন। গহলৌতের দাবি, তাঁদের অনেকেও আস্থাভোটে তাঁকেই ভোট দেবেন।
কিন্তু বিজেপির হিসেব, গহলৌত যাই দাবি করুন, সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও তা খুবই ক্ষীণ। রাজস্থানের বিজেপি সভাপতি সতীশ পুনিয়ার কথায়, “সেটা বোঝেন বলেই অনুগত বিধায়কদের উপরও ভরসা করতে না-পেরে তাঁদের রিসর্টে বন্দি করতে হয়েছে গহলৌতকে।” বিজেপি বলছে, জয়পুর থেকে পালিয়ে সীমান্তের মরুশহর জৈসলমেরে গিয়েছেন গহলৌত। আর একটু এগোলেই পাকিস্তান, অন্য পাশে বিজেপি শাসিত গুজরাত। তাঁর পরের গন্তব্য কোনটা?