প্রতীকী চিত্র।
: একনাগাড়ে বৃষ্টি আর ধসের জেরে এখনও বিপর্যস্ত মহারাষ্ট্রের উপকূলবর্তী এলাকা। ইতিমধ্যেই গোটা রাজ্যে বৃষ্টিজনিত দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা দেড়শো ছাড়িয়েছে। তার মধ্যে নতুন করে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে গোয়ায়। গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে ধস নেমেছে গোয়ার বিভিন্ন এলাকায়। ভেসে গিয়েছে বহু বাড়ি। কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে ইতিমধ্যেই। মান্ডবী, দুধসাগর, খান্দেপার, চাপোরা, বলবন্তীর মতো বেশ কয়েকটি নদীর জল বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে।
আজ উত্তর গোয়ার বিচোলিম তালুকায় গিয়ে বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সবন্ত। সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, ১৯৮২ সালের পরে এত ভয়ানক পরিস্থিতি কখনও হয়নি রাজ্যের। এমনকি সেই সময়েও এত ক্ষয়ক্ষতি হয়নি যা গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে হয়েছে। বিভিন্ন ডুবে যাওয়া এলাকা থেকে সরানো হয়েছে কমপক্ষে ৪০০ জন মানুষকে। স্থানীয় স্কুল এবং আশ্রয় শিবিরে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে তাঁদের। উপকূলরক্ষী বাহিনীর জওয়ানরা আকাশ পথে খাবার আর জলের প্যাকেট দিয়ে বন্যায় আটকে পড়া মানুষদের সাহায্যের চেষ্টা করছেন। এখনও পর্যন্ত গোয়ায় কোনও মৃত্যুর খবর না পাওয়া গেলেও রাজ্যের দক্ষিণের এক জেলা থেকে এক মহিলার ভেসে যাওয়ার খবর মিলেছে।
সবন্ত জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তাঁর ফোনে কথা হয়েছে। গোয়ার বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মোদী। বন্যা দুর্গতদের সব রকম সাহায্যের আশ্বাসও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মধ্যে রয়েছে সাত্তারি তালুকা। সেখানকার অন্তত ২১টি গ্রাম পুরো জলের তলায়।
মহারাষ্ট্রে ৮৪ হাজার বাসিন্দাকে অন্যত্র সরানো হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর উদ্ধারকারী দলের সংখ্যাও। মুম্বই, রত্নাগিরি, কোলাপুর, ঠাণে, পালঘর, রায়গড়, সাতারা-সহ কয়েকটি জেলায় ২৬টি দলকে মোতায়েন করা হয়েছে। আগামী দু’-তিন দিন মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন এলাকায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া দফতর। ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি হয়েছে মোট ছ’টি জেলায়।
মহারাষ্ট্রের পরিস্থিতি নিয়ে আজ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রায়গড়ে ধসে মৃতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনাও জানিয়েছেন তিনি।
বন্যা আর ধসের জেরে দক্ষিণ-পশ্চিম রেলওয়ের পরিষেবাও ব্যাহত হচ্ছে গত তিন দিন ধরে। গত কাল দুধসাগর-সোনাওলিমের মাঝখানে একটি প্যাসেঞ্জার ট্রেনের দু’টি বগি ধসের জেরে লাইনচ্যুত হয়েছিল। তার ফলে ওই রুটের ১৫টি ট্রেন আজও বাতিল করতে হয়েছে। রুট বদল করতে হয়েছে অন্য কয়েকটি ট্রেনের। কমপক্ষে সাড়ে তিনশো যাত্রী ছিলেন ওই ট্রেনে। কিন্তু বড় বিপর্যয় এড়ানো গিয়েছে বলে জানিয়েছেন রেল আধিকারিকেরা। মেঙ্গালুরু থেকে মুম্বই যাচ্ছিল ট্রেনটি। পাহাড়ি রাস্তায় আচমকা ধস নামে কাল ভোরে। বড় বড় যন্ত্রের সাহায্যে মাটি আর পাথর সরানোর চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন রেল আধিকারিকেরা। অন্য ট্রেনে করে ওই প্যাসেঞ্জার ট্রেনের যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছনোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
ভারী বৃষ্টি চলছে কর্নাটকেও। রেল পরিষেবা বিপর্যস্ত সেখানও। এর মধ্যে মধ্যপ্রদেশের ২৪টি জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির ‘অরেঞ্জ অ্যালার্ট’ জারি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানকার আগর-মালওয়া জেলায় ২১১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বন্যার আশঙ্কায় সতর্ক প্রশাসন।