রবিবার রাতে বালেশ্বরে ট্রেনের ট্রায়াল হল। পাশে দাঁড়িয়ে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। —নিজস্ব চিত্র।
দুর্ঘটনার ক্ষত সারিয়ে ৫১ ঘণ্টা পর বালেশ্বরের রেলপথে আবার গড়াল ট্রেনের চাকা। রবিবার রাতে ওই রেলপথ দিয়ে ডাউন লাইনে ট্রেনের পরীক্ষামূলক দৌড় (ট্রায়াল রান) শুরু করল রেল। রাত ১০টা ৪০ মিনিটে ডাউন লাইনে প্রথমে একটি মালগাড়ি চালানো হয়। এর পর রাত ১১টা ৩৯ মিনিটে চালানো হয় আরও একটি মালগাড়ি। আপ লাইনে প্রথম ট্রেনটি চালানো হয় রাত ১২টা ৫ মিনিটে। ট্রেন চালুর পরই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। শনিবার সকাল থেকে তিনি রয়েছেন বালেশ্বরেই। রেলমন্ত্রী বলেন, “ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী এখানে এসে উৎসাহ দিয়ে গিয়েছেন কর্মীদের কাজে গতি বাড়ানোর। ৫১ ঘণ্টার চেষ্টায় লাইন মেরামত করে আপ ডাউন লাইনে তিনটে মালগাড়ি চালানো হয়েছে। আজ (সোমবার) ৭টি গাড়ি চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে।” দুর্ঘটনায় নিহত এবং আহতদের প্রসঙ্গে কথা বলার সময় রেলমন্ত্রীর চোখে জল দেখা যায়।
দ্রুত পরিষেবা স্বাভাবিক করতে দিনরাত এক করে কাজ করেছেন রেলকর্মীরা। রবিবার সন্ধ্যাতেই রেলমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, দুর্ঘটনাগ্রস্ত রেলপথে রেললাইন পাতার কাজ শেষ হয়েছে। ওভারহেড তার লাগানোর কাজ চলছে। সেই কাজ শেষের পরেই রবিবার ওই রেলপথে ট্রেন চলল।
রবিবার রাতে বালেশ্বরে ট্রেনের চাকা গড়াল। —নিজস্ব চিত্র।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে ওড়িশায় বালেশ্বরের কাছে বাহানগা বাজারে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেস এবং বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। একই সঙ্গে দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয় একটি মালগাড়িও। মালগাড়ির কামরার উপরে উঠে যায় করমণ্ডলের ইঞ্জিন। এই ৩ ট্রেনের দুর্ঘটনায় ২৮৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। যদিও রবিবার সকালে মৃতের সংখ্যা ২৭৫ বলে জানিয়েছে ওড়িশা সরকার। দুর্ঘটনার জেরে ওই পথে ট্রেন পরিষেবা থমকে গিয়েছে। বাতিল করা হয়েছে হাওড়া থেকে দক্ষিণ ভারতগামী একাধিক ট্রেন। শনি-রবির পর সোম এবং মঙ্গলবারও একাধিক ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। যার জেরে সমস্যায় পড়েছেন বহু যাত্রী। এই পরিস্থিতিতে ওই রেলপথে যাতে শীঘ্রই পরিষেবা চালু করা যায়, সে দিকে জোর দিয়েছে রেল।
রবিবার সন্ধ্যায় ভুবনেশ্বরে সাংবাদিকদের রেলমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘রেল পরিষেবা চালু করতে জোরকদমে মেরামতির কাজ চলছে। রেললাইন পাতার কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে ২টি মেন লাইনে। ওভারহেড তার লাগানো-সহ অন্যান্য কাজ চলছে।’’ দুর্ঘটনার জেরে উপড়ে গিয়েছে রেললাইনের একাংশ। আবার কোনও কোনও জায়গায় রেললাইনের উপর পড়েছে ট্রেনের ভাঙাচোরা কামরা। সেগুলি রেলপথ থেকে ইতিমধ্যেই সরিয়ে ফেলা হয়েছে। রবিবার বিকেলে দেখা গিয়েছিল, বাহানগা বাজার স্টেশনের কাছে দুর্ঘটনাস্থলে ওভারহেড তার লাগানোর কাজ করছেন রেলকর্মীরা। আনা হয়েছে একাধিক উন্নত মানের যন্ত্র। রেললাইনের পাশে সরানো হয়েছে দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনের কামরাগুলি। রেল মন্ত্রকের তরফে টুইটারে জানানো হয়েছিল, ‘‘যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে ওড়িশার বালেশ্বরে মেরামতির কাজ চলছে। ১০০০ জনের বেশি কর্মী দিনরাত এক করে কাজ করছেন।’’
দুর্ঘটনার কারণে হাওড়া থেকে দক্ষিণ ভারতগামী ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত। সোম এবং মঙ্গলবারও ওই লাইনে বেশ কিছু ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। ভারতীয় রেলের তরফে জানানো হয়েছে, সোমবার চলবে না ১৮০৩৮ জাজপুর-কেওনঝাড় রোড-খড়্গপুর এক্সপ্রেস, ১৮০৪৪ ভদ্রক-হাওড়া এক্সপ্রেস, ২২৮৫৬ তিরুপতি-সাঁতরাগাছি সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস, ০৮৪১১ বালেশ্বর-ভুবনেশ্বর এক্সপ্রেস, ০৮৪১৫ জলেশ্বর-পুরী এক্সপ্রেস, ২২৬০৫ পুরুলিয়া-ভিল্লুপুরম এক্সপ্রেস। মঙ্গলবার বাতিল করা হয়েছে গুয়াহাটি-বেঙ্গালুরু এক্সপ্রেস। বুধবার বাতিল করা হয়েছে ১২৫৫২ কামাখ্যা-বেঙ্গালুরু এক্সপ্রেস।
ভারতীয় রেল এবং স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে উদ্ধারকাজে হাত দিয়েছে ভারতীয় বায়ুসেনা। রেল মন্ত্রকের তরফে টুইটারে জানানো হয়েছে, ‘‘যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ওড়িশার বালেশ্বরে মেরামতির কাজ চলছে। ১০০০ জনের বেশি ব্যক্তি অবিশ্রান্ত ভাবে কাজ করে চলেছে।’’