‘ইশ্! কম্বলটা গায়ে দেওয়া যায় না! কি বোঁটকা গন্ধ!’
ভাবুন তো, দূর পাল্লার ট্রেনে গভীর রাতে পায়ের কাছে রাখা কম্বলটা বাধ্য হয়ে টেনে নিতে নিতে কত বার এই স্বগতোক্তি করেছেন?
তবু আমাদের মানিয়ে নিতে হয়েছে। মানিয়ে চলেছি এখনও।
তা সে কনকনে ঠান্ডাই হোক বা ঘাম ছোটানো গরম।
দূর পাল্লার ট্রেনে উঠে অন্তত একটা রাত কাটাতে হলেও কম্বলটা লাগেই। গভীর রাতে বা ভোরের দিকে। যখন ফাঁকা ধানখেতের ওপর দিয়ে হু হু করে ছুটছে কোনও এক্সপ্রেস। গভীর রাতে শীত শীত লাগলে তখন আমি-আপনি ঘুম চোখেই পায়ের কাছে রাখা কম্বলটা টেনে নিই। আর তার পরেই সেই স্বগতোক্তিটা করতে হয় আমাদের!
আরও পড়ুন- লক্ষ্য ২০১৯, তাই কি এ বার বঞ্চিত বাংলা
ঠিকই করি। কেন কম্পার্টমেন্টের কম্বলে বোঁটকা গন্ধ থাকবে না, বলতে পারেন?
সেই কম্বল তো কাচা হয়, দু’মাসে এক বার! ভাবুন!
এই তথ্যটা আমার-আপনার নয়। কোনও বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারও নয়। এই যে রেলের কম্বল দু’মাসে মেরে-কেটে এক বার কাচা হয়, সে কথা কবুল করেছেন খোদ রেল-প্রতিমন্ত্রী মনোজ সিংহ। আর তা কোনও জনসভা-টভায় নয়। রাজ্যসভায় প্রশ্নোত্তর পর্বে এই চমকে দেওয়ার মতো তথ্যটি দিয়েছেন রেল-প্রতিমন্ত্রী। তিনি এও জানিয়েছেন, মাথার বালিশ আর নীচে পাতার চাদর কিন্তু রোজই কাচা হয়।
কথাটা শুনে কিছুটা রসিকতার সুরে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হামিদ আনসারি বলেন, ‘‘এর পর তো মানুষকে আপনারা বলে দিতেই পারেন, মাথার বালিশ, গায়ের চাদর, কম্বল সব বাড়ি থেকেই নিয়ে আসুন!’’
সভার কেতা বজায় রাখতেই কি এর পর রেল-প্রতিমন্ত্রী বলে ওঠেন, ‘‘সুপরামর্শ’’?
‘অস্বস্তিকর’ জবাবের পর অবশ্য কিছুটা স্বস্তির খবরও শুনিয়েছেন রেল-প্রতিমন্ত্রী। বলেছেন, ‘‘আর বছর দু’য়েকের মধ্যেই দূর পাল্লার ট্রেনের অন্তত ৮৫ শতাংশ যাত্রী খুব ঝকঝকে তকতকে বেডশিট, কম্বল, মাথার বালিশ পাবেন। তার জন্য আরও ২৫টি লন্ড্রি বানানো হচ্ছে।’’
আর এক রেল-কর্তা জানিয়েছেন, ‘‘এ বার ট্রেন যাত্রায় একেবারে ঝকঝকে তকতকে বেডশিট, কম্বল, মাথার বালিশ পেতে চাইলে, ট্রেনে ওঠার আগেই অনলাইনে সে সব কিনে নিতে পারবেন যাত্রীরা। দু’টো বেডশিট আর মাথার বালিশের দাম পড়বে ১৪০ টাকা। আর কম্বল কেনা যাবে ১১০ টাকায়।’’