সঙ্ঘকে রুখতে ডাক রাহুলের

দিনের শুরুটা হয়েছিল খালি আসনকে সাক্ষী রেখে। অবশ্য পরের তিনটি সভায় দশ-বিশ হাজারি উপস্থিতি দেখে খানিক বল পেলেন রাহুল গাঁধী। মূলত উজানি অসমের মহিলা ও চা জনগোষ্ঠীর ভোটকে কংগ্রেসমুখী করার জন্যই এআইসিসি সহ সভাপতির দু’দিনের অসম সফরে এসেছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৪:২৮
Share:

বিহপুরিয়ায় ‘মহিলা সবলীকরণ’-এর সভায় রাহুল। — নিজস্ব চিত্র

দিনের শুরুটা হয়েছিল খালি আসনকে সাক্ষী রেখে। অবশ্য পরের তিনটি সভায় দশ-বিশ হাজারি উপস্থিতি দেখে খানিক বল পেলেন রাহুল গাঁধী। মূলত উজানি অসমের মহিলা ও চা জনগোষ্ঠীর ভোটকে কংগ্রেসমুখী করার জন্যই এআইসিসি সহ সভাপতির দু’দিনের অসম সফরে এসেছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও আরএসএসের কড়া সমালোচনা করে চা জনগোষ্ঠী ও মহিলাদের জন্য আনা রাজ্যের প্রকল্পগুলি তুলে ধরেন রাহুল। বলেন, ‘‘বিজেপি একদিকে রাজ্যের চা শ্রমিকদের রেশন বন্ধ করে দিয়েছে, অন্য দিকে তারা রাজ্যের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে বিষবাষ্প ছড়ানোর চেষ্টা করছে।’’ রাহুলকে ‘দেশদ্রোহী’ বলে ব্লগে মন্তব্য করেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। পাল্টা জবাব দিয়ে এআইসিসির সহ সভাপতি রাহুল গাঁধী বলেন, ‘‘যাঁরা গাঁধীজির বুকে তিনটি বুলেটের ক্ষত দেগে দিয়েছিল— তাদের কাছ থেকে আমি দেশপ্রেমের সংজ্ঞা শিখব না।’’

Advertisement

এ দিন গোহপুরে শোণিতপুর-বিহালির বুথকর্মীদের সভায় সিংহভাগ চেয়ার খালি দেখে অস্বস্তিতে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অঞ্জন দত্ত। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে, ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ তুলে ধরতে বলে ও কংগ্রেসের লড়াইকে ছড়িয়ে দেওয়ায় কর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে রাহুল মিনিট দশেকের মধ্যেই ভাষণ শেষ করে দেন। অবশ্য লখিমপুর জেলার বিহপুরিয়া নারায়ণপুরে ‘মহিলা সবলীকরণ’-এর সভায় উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। সেখানে রাহুল মহিলাদের জন্য রাজ্য সরকারের নেওয়া বিভিন্ন প্রকল্পের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘‘স্বাধীনতা সংগ্রামী কনকলতা-ভোগেশ্বরীদের রাজ্যে নারীশক্তি যখন এই হারে আমাদের পাশে আছে, তখন জয় নিশ্চিত। তাঁরাই পরিবার ও সমাজকে বোঝাতে পারবেন দেশ ও দশের জন্য কোন দল কাজ করে।’’ মোদীকে বিদ্রুপ করে রাহুল বলেন, ‘‘মোদী বারাক ওবামা বা নামকরা লোকদের সঙ্গে সেলফি তুলতে ব্যস্ত থাকেন। কখনও দেখবেন না, দরিদ্র, মজুরকে পাশে নিয়ে ছবি তুলছেন।’’

এ দিন অমিত শাহ ব্লগে লিখেছেন— ‘‘রাহুল কি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পক্ষ নিয়ে ফের দেশভাগ চান? জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে রাহুল ও তাঁর দলের বক্তব্য প্রমাণ করে— তাঁদের চিন্তায় কোথাও জাতীয় স্বার্থের স্থান নেই।’’ রাহুল যোরহাট জেলার তিতাবরে, মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের খাস তালুকে হওয়া জনসভায় পাল্টা বলেন, ‘‘যেখানেই বিজেপি লড়তে নেমেছে, সেখানেই ধর্মের ভিত্তিতে লড়াই বাধিয়ে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করেছে। এটাই কী দেশপ্রেম? বিহারের মানুষ মোদীদের চক্রান্ত ধরে ফেলেন। তাই, ভোটে হারার পরে মোদী বিহারমুখো হননি। অসমেও তাই হবে।’’ রাহুলের অভিযোগ, হায়দরাবাদে রোহিত ভেমুলা বা জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে কানহাইয়া কুমাররা কেন্দ্রীয় নীতির বিরুদ্ধে মুখ খোলায় ‘দেশদ্রোহী’ তকমা দিয়েছে আরএসএস। আরএসএসের জন্যেই রোহিত আত্মহত্যায় বাধ্য হন। রাহুলের দাবি, আরএসএস প্রতিটি জাতির নিজস্ব মত, সংস্কৃতি, ইতিহাসকে মুছে ফেলে নিজেদের মত চাপাতে চাইছে। যা শ্রীমন্ত শঙ্করদেব-মাধবদেবের আদর্শের পরিপন্থী। এই রাজ্যেও সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি। যে কোনও ভাবে তাকে রুখতে হবে।

Advertisement

যোরহাটে চা শ্রমিকদের সংখ্যা বেশি। অসমীয়ায় ভাষণ শুরু করে রাহুল চা বাগানে রেশন বন্ধ করে দেওয়ার কেন্দ্রীয় নীতি নিয়ে সরব হন। বলেন, ‘‘লোকসভা নির্বাচনের আগে বড় বড় প্রতিশ্রুতি দেওয়া মোদী কোনও কথাই রাখতে পারেননি। আমরা এমএনরেগা এনেছিলাম বলেই দরিদ্ররা কাজ পাচ্ছেন। আমরাই চা শ্রমিকদের বাড়ি, বাস, জমি দিচ্ছি। আর মোদী রেশন বন্ধ করে, অসমকে বিশেষ সাহায্যপ্রাপ্ত রাজ্যের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে ভাতে মারতে উঠেপড়ে লেগেছেন।’’ বিকেলে শিবসাগরে রাহুল চা শ্রমিকদের নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ও পাঁচ জেলার নেতাদের সঙ্গে বিধানসভা ভোটের রণকৌশল নিয়ে বৈঠক করেন। সভা উপলক্ষে কংগ্রেস অনেক বাস নিয়ে নেওয়ায় তিতাবরের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা সমস্যায় পড়েন। তিতাবর ও হাইলাকান্দির রাজপথে বিজেপির যুব মোর্চা ‘দেশদ্রোহী’তার অভিযোগে রাহুল গাঁধী কুশপুতুল পোড়ায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement