ঘুঁটি সাজাচ্ছেন রাহুল, সাংগঠনিক রদবদলের প্রক্রিয়া শুরু

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়দলের বর্ষীয়ান নেতাদের উষ্মা মেটাতে যখন সনিয়া গাঁধী আসরে নেমেছেন, সেই সময় তলে তলে দলে সাংগঠনিক রদবদলের প্রক্রিয়াটি শুরু করে দিলেন রাহুল গাঁধী। সদ্য হওয়া বিধানসভা নির্বাচনে ভাল ফল না হলেও উত্তরপ্রদেশের ভোটের আগে রাহুলকে সভাপতি করা নিয়ে প্রবল চাপ রয়েছে।

Advertisement
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৬ ২০:৩০
Share:

দলের বর্ষীয়ান নেতাদের উষ্মা মেটাতে যখন সনিয়া গাঁধী আসরে নেমেছেন, সেই সময় তলে তলে দলে সাংগঠনিক রদবদলের প্রক্রিয়াটি শুরু করে দিলেন রাহুল গাঁধী।

Advertisement

সদ্য হওয়া বিধানসভা নির্বাচনে ভাল ফল না হলেও উত্তরপ্রদেশের ভোটের আগে রাহুলকে সভাপতি করা নিয়ে প্রবল চাপ রয়েছে। একইসঙ্গে প্রবীণদের সরিয়ে নবীনদের নিয়ে একটি নতুন ঝাঁ-চকচকে টিম গঠনের পরামর্শ দিচ্ছেন অনেকে। তবে রাহুল গাঁধীকে কবে সভাপতি করা হবে, তা নিয়ে দলের কোনও নেতাই স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারছেন না। কিন্তু প্রায় সব নেতাই একবাক্যে বলছেন, এই মুহূর্তে রাহুলই কার্যত দলের সভাপতি। শুধু আনুষ্ঠানিক ঘোষণার অপেক্ষা। সেই ঘোষণার আগে রাহুল সংগঠনের রদবদলের ক্ষেত্রটিও প্রস্তুত করে ফেলতে চাইছেন।

ঠিক কী ভাবে?

Advertisement

কংগ্রেসের শীর্ষ সূত্রের মতে, প্রথমত একটি নতুন পরামর্শদাতা কমিটি গঠনই তার প্রমাণ। ইউপিএ জমানায় জাতীয় পরামর্শদাতা পর্ষদ গড়ে সনিয়া গাঁধীকে ক্যাবিনেট মন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। এ বারেও বিভিন্ন বিষয়ে (যেমন শিক্ষানীতি, সামাজিক কল্যাণ ইত্যাদি) দলের অবস্থান নির্ধারণ করতে এই কমিটি গড়ার কথা ভাবা হচ্ছে। কিন্তু ফারাক একটাই। সেখানে সনিয়া ছাড়া বাকিরা ছিলেন বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞ। আর রাহুলের নতুন কমিটিতে থাকবেন কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যরাই। বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে তাঁরাই কথা বলবেন।

কংগ্রেসের এক নেতার বক্তব্য, যদি এই ভাবনাটি শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়, তা হলে ভবিষ্যতে এই পরামর্শদাতা কমিটিতেই দলের প্রবীণদের ঠাঁই হবে, সেটিও অসম্ভব কিছু নয়। সে ক্ষেত্রে নবীনদের নিয়ে রাহুল নিজের টিম গঠন করতে পারবেন। জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, দীপেন্দ্র হুডা, অশোক তানওয়ার, জয়রাম রমেশ, সুস্মিতা দেব, আর পি এন সিংহ, প্রিয়া দত্ত, গৌরব গগৈ, শৈলজা, কে সি ভেনুগোপাল, মিলিন্দ দেওরা, জিতিন প্রসাদ, কে রাজুর মতো নবীন মুখরা সে ক্ষেত্রে রাহুলের টিমে গুরুত্বপূর্ণ স্থান পেতে পারেন।

আরও পড়ুন: এনএসজি অনিশ্চিত, কিন্তু ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রক দেশ হয়ে গেল ভারত

দ্বিতীয়ত, শুধু কেন্দ্রীয় কমিটিতেই নয়, রাজ্যস্তরেও সংগঠনকে ঢেলে সাজা নিয়ে কৌশল রচনা করছেন রাহুল গাঁধী। কংগ্রেস সহ-সভাপতি ঘনিষ্ঠ এক নেতা আজ বলেন, ‘‘বিশেষ করে জেলা সভাপতির পদটি আরও ওজনদার করতে চাইছেন রাহুল। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, জেলায় জেলায় অনেক ক্ষেত্রে আসল প্রভাবশালী নেতা নিজের ‘ডামি’ ব্যক্তিকে জেলা সভাপতি পদে বসিয়ে রাখেন। যার ফলে তৃণমূলস্তরে সিদ্ধান্ত নিতে অসুবিধা হচ্ছে। রাহুল স্পষ্ট নির্দেশ দিচ্ছেন, যিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন, যাঁর প্রভাব আছে, এমন ব্যক্তিকেই সে পদে বসাতে হবে। ভবিষ্যতে স্থানীয় নির্বাচনের কোনও প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ দিল্লি করবে না।’’

তৃতীয়ত, কেন্দ্রে মোদী সরকার আসার পর থেকে এক এক করে রাজ্য কংগ্রেসের থেকে হাতছাড়া হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে রাহুলের নির্দেশ, কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের ডেকে সম্মেলন করে তাঁদের সাফল্য মেলে ধরা। অতীতে বিরোধী দলে থাকার সময় বিজেপি ঠিক এই কাজটিই করত। দিল্লিতে বিজেপি শাসিত মুখ্যমন্ত্রীদের ডেকে ‘সুশাসন’ তুলে ধরা হত। পরে নরেন্দ্র মোদী সেই নজির তুলেই মনমোহন সিংহ সরকারের তুলোধনা করতেন। রাহুল চাইছেন, এ বারে কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলির কয়েকটি দৃষ্টান্তকারী প্রকল্প তুলে ধরে মোদী সরকারের ব্যর্থতাকে বড় করে দেখানো হবে। অন্য রাজ্যকেও সেটি অনুসরণ করতে বলা হবে।

কংগ্রেসের এক নেতার মতে, ‘‘দলের কাঠামো বদলের কাজ ইতিমধ্যেই তলে তলে শুরু করে দিয়েছেন রাহুল গাঁধী। তার পর তাঁকে কবে সভাপতি করা হবে, সেটি কংগ্রেস সভানেত্রীর সিদ্ধান্ত।’’ বিজেপির রাজীবপ্রতাপ রুডির অবশ্য কটাক্ষ, ‘‘রাহুল গাঁধী কবে সভাপতি হবেন, তার জন্য আমরাও অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় রয়েছি। এটি কংগ্রেসের কাছে কি না জানি না, রাহুলের উত্থান অন্তত বিজেপির কাছে সুখবর।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement