কেন্দ্রকে চাপে রাখতে কাশ্মীরে যাচ্ছেন রাহুল

কেন্দ্রের জমি-নীতি এবং সুষমা-বসুন্ধরার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে ইতিমধ্যেই ঝোড়ো ইনিংস খেলেছেন তিনি। পাক প্রশ্নে মোদী সরকারের বিদেশনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ব্যর্থতা নিয়েও এ বার সমান বিতর্ক তৈরি করতে চাইছেন রাহুল গাঁধী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৫ ০২:৫৫
Share:

কেন্দ্রের জমি-নীতি এবং সুষমা-বসুন্ধরার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে ইতিমধ্যেই ঝোড়ো ইনিংস খেলেছেন তিনি। পাক প্রশ্নে মোদী সরকারের বিদেশনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ব্যর্থতা নিয়েও এ বার সমান বিতর্ক তৈরি করতে চাইছেন রাহুল গাঁধী।

Advertisement

ভারত-পাক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পর্যায়ের বৈঠক পরশু বাতিল হয়েছে। তার পরেই জম্মু ও কাশ্মীর সফরে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি। কংগ্রেস সূত্র জানাচ্ছে, বেছে বেছে জম্মু ও উপত্যকার সেই সব এলাকায় যাবেন রাহুল, যেখানে গত দেড় বছর ধরে লাগাতার পাক গোলাবর্ষণে নিরীহ ভারতীয় নাগরিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আহত ও নিহদের পরিবারের সঙ্গেও দেখা করবেন তিনি। কেন্দ্রের পাক ও কাশ্মীর নীতি যে ভ্রান্ত, তা তুলে ধরতে অনেক দিন ধরে এ রাজ্যে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন রাহুল। এ নিয়ে জম্মু-কাশ্মীরের কংগ্রেস নেতা ও কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও আলোচনা করেন রাহুল। একটা সময় এ-ও স্থির ছিল যে, মা-ছেলে এক সঙ্গে জম্মু-কাশ্মীর সফরে যাবেন। এর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা ভেস্তে যাওয়ায় নতুন উদ্যম পেয়েছে কংগ্রেস।

এর আরও একটি দিক রয়েছে। কৃষি ও জমি নীতি, দুর্নীতি দমন ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে সমালোচনা চলছেই। পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা শেষ মুহূর্তে বাতিল হয়ে যাওয়ার পর সরকার চালাতে মোদীর সার্বিক ব্যর্থতার একটা ছবি উঠে আসছে। রাহুল সেটাই তুলে ধরতে চাইছেন।

Advertisement

তবে জাতীয় নিরাপত্তা ও বিদেশনীতির ক্ষেত্রে কেন্দ্রের ‘ব্যর্থতা’ নিয়ে প্রচারে নামার আগে কংগ্রেস কিছুটা সতর্ক। যাতে এমন মনে না হয় যে, মোদী-বিরোধিতা করতে গিয়ে দলের জাতীয়তাবাদী আদর্শ লঘু হয়ে যাচ্ছে। সেই কারণেই রাহুলের সফরের আগে জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদ আজ বলেন, ‘‘পাকিস্তান যে ভাবে হুরিয়তের সঙ্গে আলোচনা করতে চাইছে, তা কোনও ভাবেই মানা যায় না। সে দিক থেকে মোদী সরকার ঠিকই বলেছে। ইসলামাবাদ ও হুরিয়ত নেতারা উভয়েই ভুল দরজায় কড়া নাড়ছেন। হুরিয়তকে কেন্দ্রের সঙ্গেই আলোচনায় বসতে হবে। অতীতে মনমোহন সিংহ জমানায় তাঁদের ঠিক যে ভাবে গোলটেবিল বৈঠকে ডেকে এনেছিল কেন্দ্র।’’ কিন্তু এর পাশাপাশিই গুলাম নবির বক্তব্য, পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার জন্য যে ভাবে এগিয়েছে সরকার, তাতে বিদেশনীতি ও দক্ষ প্রশাসকের মতো আচরণ কম, ছেলেমানুষি বেশি হয়েছে। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘এনএসএ বৈঠকের দু’দিন আগে পর্যন্ত কেন আলোচ্যসূচি নিয়ে টানাপড়েন চলল? কেন এ ব্যাপারে সরকার আগে থেকে ‘ব্যাক চ্যানেল’ আলোচনা করল না?’’ গুলাম নবির তোপ, ‘‘সরকারের নেতারা জানেনই না যে, কূটনীতিতে কী ভাবে আলোচনা চালাতে হয়!’’

সন্দেহ নেই, জম্মু ও কাশ্মীর সফরে গিয়ে এ সব কথা তুলে ধরবেন রাহুলও। সেই সঙ্গে হুরিয়তের বিরুদ্ধে সমালোচনাও শোনা যাবে তাঁর মুখে। কিন্তু আর কী বলবেন রাহুল?

তার ইঙ্গিত দিয়ে গুলাম নবি আজ জানান, বালাকোট, রাজৌরি, সোপোর ও পাম্পোরের মতো এলাকায় দেড় বছরে আটশো বারেরও বেশি যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গোলা বর্ষণ করেছে পাকিস্তান। তাতে নিহত হয়েছেন বহু নিরীহ ভারতীয়, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রচুর পরিবার। মনমোহন সরকারের সময় এমন দেখা যায়নি। বিক্ষিপ্ত একটা-দু’টো ঘটনা যা ঘটেছে, তা নিয়ে তৎকালীন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘ও দিকে সেনার মুণ্ড কাটা যাচ্ছে, আর এ দিকে মনমোহন সরকার বিরিয়ানি কূটনীতি করছে!’ আজ গুলাম নবি বলেন, ‘‘এই প্রশ্নটাই এখন আমরা প্রধানমন্ত্রীকে করতে চাইছি। ছাপ্পান্ন ইঞ্চি ছাতি দিয়ে কেন নিরীহ ভারতীয়দের বাঁচাতে পারছেন না তিনি?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement