রাহুল গান্ধী। —ফাইল চিত্র।
এক জন চলেছেন ভোটের আগে মানুষের মনে রামমন্দির নিয়ে আবেগ তৈরি করতে। অন্য জন ভোটের ইস্তাহার তৈরিতে মানুষের মনের কথা জানতে বসছেন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অযোধ্যায় রামমন্দিরে রামলালার মূর্তির প্রাণপ্রতিষ্ঠা করবেন ২২ জানুয়ারি। ঠিক ওই দিন বা তার পরের দিনই রাহুল গান্ধী লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের ইস্তাহার নিয়ে প্রথম বার নাগরিক সমাজের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন।
কংগ্রেস তথা বিরোধী মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’র কাছে আমজনতা কী চাইছে, কেন্দ্রে বিরোধী জোটের বিকল্প সরকার এলে মূল কর্মসূচি কী হওয়া উচিত, তা নাগরিক সমাজের সঙ্গে কথা বলেই বুঝতে চাইবেন রাহুল। আজই ফেসবুক এবং এক্স হ্যান্ডলে নাগাল্যান্ডে তাঁর যাত্রার ভিডিয়ো পোস্ট করে প্রধানমন্ত্রীকে খোঁচা দিয়েছেন। লিখেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নের কথা বলেন, কিন্তু এ কাজে তাঁর প্রত্যক্ষ কিছু অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। তাঁর জানা উচিত, নাগাল্যান্ডের মানুষ, কোন রাস্তায় চলাফেরা করতে বাধ্য হন। এই রাস্তা দীর্ঘ দিনের অবহেলার ফল। ন্যায় যাত্রার উদ্দেশ্য মণিপুর, নাগাল্যান্ডের সমস্যাকে দেশের সামনে তুলে ধরা।’
মণিপুর, নাগাল্যান্ডের পর শুক্রবার সকালে রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’ বিজেপি শাসিত অসমে ঢুকবে। ২২ জানুয়ারি রামমন্দিরের প্রাণপ্রতিষ্ঠার দিন রাহুল গান্ধী অসমেই থাকবেন। কংগ্রেস সূত্রের খবর, ২২ বা ২৩ জানুয়ারি গুয়াহাটিতে রাহুল কংগ্রেসের ইস্তাহার নিয়ে প্রথম বার বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনের মতামত শুনবেন। এর পরে ঝাড়খণ্ডে ন্যায় যাত্রা পৌঁছলে রাঁচীতে একই বিষয়ে নাগরিক সমাজের সঙ্গে রাহুল বৈঠক করবেন। অন্যান্য রাজ্যেও একই রকমের আলাপচারিতার আয়োজন করা হচ্ছে।
কংগ্রেস সূত্রের খবর, গুয়াহাটির বৈঠকে মূলত উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কংগ্রেসের কাছে নাগরিক সমাজ কী চাইছে, সে বিষয়ে রাহুল জানতে চাইবেন। মণিপুরে ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’র সময়ে কুকি, মেইতেই—দুই সম্প্রদায়ের সংগঠনই রাহুলের সঙ্গে দেখা করে মতামত জানিয়েছে। নাগাল্যান্ডের নাগরিক সংগঠনগুলি মোদী সরকার-এনএসসিএন ( আই-এম) খসড়া চুক্তি নিয়ে উৎকণ্ঠার কথা জানিয়েছেন। অসমে সিএএ-এনআরসি-এন পিআরের মতো স্পর্শকাতর বিষয় রয়েছে। কংগ্রেস নেতাদের বক্তব্য, গুয়াহাটির পরে রাঁচীর বৈঠকে মূলত আদিবাসী, জনজাতি সংগঠনের সঙ্গে কথা বলতে চাইছেন রাহুল।
কংগ্রেস ইতিমধ্যেই পি চিদম্বরমের নেতৃত্বে ইস্তাহার কমিটি তৈরি করেছে। কমিটিতে প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরাও আছেন। প্রিয়ঙ্কা, চিদম্বরমরাও গুয়াহাটি, রাঁচীর বৈঠকে হাজির থাকবেন। কংগ্রেস আগেই জানিয়েছিল, ন্যায় যাত্রার ফাঁকে ফাঁকে রাহুল বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যে কথাবার্তা বলবেন, তা লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের ইস্তাহারের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে উঠে আসবে। রাহুল নিজেও ন্যায় যাত্রার শুরুতে বলেছেন, তিনি 'মন কি বাত' শুনতে চাইছেন।
আজ চিদম্বরম জানিয়েছেন, ন্যায় যাত্রায় রাহুলের সঙ্গে যাঁদের দেখা হবে, শুধু তাঁদের নয়, কংগ্রেসের ইস্তাহার তৈরির সময়ে গোটা দেশের মানুষেরই পরামর্শ জানতে চাওয়া হবে। আজ কংগ্রেস এ জন্য 'আওয়াজ ভারত কি' নামের পোর্টাল চালু করেছে। ই-মেলের মাধ্যমেও যে কেউ বক্তব্য জানাতে পারবেন। নাগরিক সংগঠনগুলির সঙ্গে কথা বলতে তাঁরা নিজেরাও প্রতিটি রাজ্যে যাবেন। চিদম্বরম বলেন, "এটা জনগণের ইস্তাহার হতে চলেছে।''